Advertisement
E-Paper

বন্যপ্রাণীদের মারণরোগ ট্রাইপ্যানসোমার হদিস মিলল উত্তরবঙ্গে!

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৫ ১০:৫৪

পাহাড়ের পাদদেশের জঙ্গলে এ বার ট্রাইপ্যানসোমা বা টিপানোসোমা নামে বন্যপ্রাণীদের জন্য মারণ রোগের হদিস মিলল। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন বন দফতর। আতঙ্কিত পশুপ্রেমী সংগঠনগুলিও। শুধু দার্জিলিং বা উত্তরবঙ্গ নয়, গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে এই প্রথম কোনও বন্যপ্রাণী ওই টিপানোসোমা বা ট্রাইপ্যানোসোমা রোগে আক্রান্ত হল। তবে ভারতে আর কোথাও এর আগে ওই রোগে কোনও বন্যপ্রাণী আক্রান্ত হয়েছে কি না, তার জন্য কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে রাজ্য বন দফতর। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগামী দিনে কী কী করণীয়, তারও পর্যালোচনা শুরু করেছে তারা।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াং বন বিভাগের অধীন বাগডোগরা রেঞ্জের ব্যাংডুবি সেনা ছাউনির কাছে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছ’বছরের একটি শাবক হাতিকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে বন দফতর। শাবকটিকে উদ্ধার করে দ্রুত তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। শাবকটির চিকিৎসার জন্য প্রথমে বেঙ্গল সাফারি পার্কের পশু চিকিৎসক নিক ডোলে ও জেলা প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের চিকিৎসক শুভঙ্কর মজুমদারকে দিয়ে একটি বোর্ড গঠন করা হয়। পরে শাবকটির শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে পরে আরও দু’জন চিকিৎসককে বোর্ডে যুক্ত করা হয়। খড়িবাড়ি ব্লকের প্রাণী বিশেষজ্ঞ কিঙ্গমা ও গরুমারা জাতীয় উদ্যানের চিকিৎসক শ্বেতা মণ্ডলকে বোর্ডে এনে চিকিৎসা শুরু হয়। পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসে ভারতীয় সেনাও। কিন্তু তার পরেও হাতিটির শারীরিক পরিস্থিতি খুব একটা ভাল নয় বলেই জানা গিয়েছে। হাতিটির পিছনের পায়ে ক্ষত রয়েছে বলে প্রথমে সেখান থেকেই সে অসুস্থ হয়ে পরে বলে অনুমান করেছিলেন পশু চিকিৎসকেরা। পরে হাতিটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ওই রোগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। নিশ্চিত হতে শাবকটির রক্তের নমুনা ইন্ডিয়ান ভেটেরেনারি রিসার্চ ইন্সটিটিউটে পাঠানো হয়। সেখান থেকেও ওই শাবকটি যে টিপানোসোমায় আক্রান্ত হয়েছে, তা জানানো হয়েছে। তবে নমুনার বিস্তারিত রিপোর্ট খুব দ্রুত বন দফতর হাতে পাবে বলে জানা গিয়েছে।

এই রোগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই উত্তরের জঙ্গলে হাতিদের অজানা রোগের কারণে মৃত্যুর ইতিহাস ঘাঁটতে শুরু করেছে বন দফতর। জানা গিয়েছে, এর আগে বৈকুণ্ঠপুর, সুখিয়াখোলা ও মহানন্দা অভয়ারণ্যে বছরখানেক আগে পাঁচটি হাতির মৃত্যুতেও একই লক্ষণ দেখা গিয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, এটি মূলত পরজীবী রোগ। গবাদি পশুরাই আক্রান্ত হয়। তবে মোষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকায় এই রোগ তূলণামুলক কম ক্ষতি করে। কিন্তু বন্যপ্রাণীদের মধ্যে এই ক্ষমতা নেই। এই রোগ এক প্রাণীর শরীর থেকে অন্য প্রানীর শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে একই প্রজাতির প্রাণীর মধ্যেই ওই রোগ ছড়ায়। অর্থাৎ হাতির শরীরে ওই রোগ থাকলে তা বাঘের শরীরে ছড়াবে না। সংক্রমিত প্রাণীর শরীরের জয়েন্ট ও লিগামেন্টে আগে আগে ক্ষতি করে ওই রোগ। তার পর ধীরে ধীরে ওই প্রাণীর মধ্যে সেপসিস ও সিপ্টোসেমিয়া ধরা পরে। আক্রান্ত প্রাণী একবার শুয়ে পড়লে তাকে বাঁচানো যায় না। তাই তাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। প্রথমে প্রাণীর প্রবল জ্বর আসে। কাঁপুনি দেয়। তার পর ধীরে ধীরে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। রোগ বেড়ে গেলে প্রাণী দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। গোল গোল ঘুরতে শুরু করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। অন্ধ হয়ে যায় প্রাণীটি।

এ সমস্ত রোগের বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণ বাগডোগরার ওই শাবকটির মধ্যে রয়েছে। ইতিমধ্যে শাবকটির দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছে ও দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তাই হাতিটিকে বাঁশের মাচা তৈরি করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। সোমবার পোর্টেবিল এক্স রে মেশিনের মাধ্যমে হাতিটির পরীক্ষা করা হয়।

এই বিষয়ে কার্শিয়াং বন বিভাগের ডিএফও দেবেশ পাণ্ডে বলেন, ‘‘শাবকটি ট্রাইপ্যানোসোমায় আক্রান্ত। এর আগে কোনও হাতি বা বন্যপ্রাণী এই রোগে আক্রান্ত হয়নি। তবে শাবকটিকে সুস্থ করে তোলার সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

Forest department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy