দু’মাস হতে চলল। কিন্তু এখনও কোনও খোঁজ নেই সঙ্গীতা কুণ্ডুর। ২৭ বছরের এই তরুণীর নিখোঁজ রহস্যের জট ছাড়াতে ক্রমে পুলিশের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে শিলিগুড়ির বিভিন্ন মহল।
পুলিশ এখনও তদন্তে জন্য ওই তরুণীর বাড়ি যায়নি কেন, তাই নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সেবক রোডের যে ফ্ল্যাটটিতে সঙ্গীতা থাকতেন, তা-ও সিল করা হয়নি বলে ক্ষুব্ধ বাড়ির লোকজন।
ফ্ল্যাটটির মালিক পরিমল সরকার, যাঁর অফিসে কাজ করতেন সঙ্গীতা। তিনি জিম-পার্লারের মালিক। সঙ্গীতার শুভার্থীদের একাংশের অভিযোগ, কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তি পুলিশকে ফোন করে জানিয়েছেন, মেয়েটি নিজে থেকে নিখোঁজ হয়েছে। তাতেই তদন্ত থমকে গিয়েছে। তাই পরিবারের লোকজন পুজোর প্রাক্কালে উত্তরবঙ্গের এডিজি তথা আইজি-র দ্বারস্থ হন। আইজি-র অফিস থেকে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়। তা সত্ত্বেও তদন্ত এগোচ্ছে না বলে বাড়ির লোকজনদের দাবি। ফলে শিলিগুড়ির নাগরিক সংগঠন ও আইনজীবীদের অনেকেই যেমন বিস্মিত, তেমনই ক্ষুব্ধ। বাড়ির লোকজনও শহরের নানা সংগঠনের সঙ্গে জোট বাঁধছেন।
যদিও শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেন, ‘‘তদন্ত এগোয়নি, এটা বলাটা ঠিক নয়। বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। মালিকের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। মেয়েটির হদিশ পাওয়ার সব রকম চেষ্টা চলছে।’’ পুলিশের একাংশ জানান, যে হেতু সঙ্গীতার বাড়ির লোকজনেরাই একাধিক বার থানায় গিয়েছেন, তাই ওঁদের বাড়িতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু, ফ্ল্যাটটি ‘সিল’ হয়নি কেন, তা নিয়ে পুলিশের তরফে সদুত্তর মেলেনি। তরুণী নিখোঁজ হওয়ার পরে পরিমলবাবুর অফিস থেকে থেকে কর্মীদের হাজিরা খাতা, অন্য কর্মীদের জবানবন্দি সংগ্রহ করে নথিভুক্ত হয়েছে কি না, তা-ও পুলিশ বাড়ির লোকজনদের জানাতে পারেনি।
শুক্রবার সঙ্গীতার মা অঞ্জলি দেবী কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘‘জলজ্যান্ত মেয়েটা অফিস থেকে নিখোঁজ হয়ে গেল। ওর স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর থেকে মালিক পরিমলের দেওয়া ফ্ল্যাটে থাকত। সে দু’মাস ধরে নিখোঁজ। অথচ পুলিশ একবারও আমাদের বাড়িতে এল না। তদন্তে কি পাওয়া গিয়েছে বলল না! বারবার পুলিশের কয়েক জন বলছেন, পরিমলের দোষ কি!’’ তার পরে চোখ মুছে বললেন, ‘‘যা-ই বলুক, আমাদের মেয়েকে খুঁজে বার করতে হবে। তখনই বোঝা যাবে আড়ালে কে বা কারা?’’
মজার বিষয় হল, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই পরিমলবাবুও দাবি করছেন, সঙ্গীতাকে খুঁজে বার করলেই সব রহস্য স্পষ্ট হয়ে যাবে। পরিমলবাবু বলছেন, ‘‘সঙ্গীতা নিরাশ্রয় হয়ে পড়ায় আমি অফিসের উপরের ফ্ল্যাটে থাকতে দিয়েছিলাম। নিখোঁজ হওয়ার দিনও অফিস করেছে। রাত ৯টা নাগাদ খেয়াল করি ও নেই। এর পরে ৯ দিনের মাথায় ভক্তিনগর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করি। তার পরেও আমার বিরুদ্ধে ওঁর বাড়ির লোকজন অভিযোগ করেছেন!’’
সঙ্গীতার মা-দাদা থাকেন শান্তিনগরে। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পরে পরিমলবাবুর সংস্থায় চাকরি পান সঙ্গীতা। থাকতে শুরু করেন সেবক রোডে সংস্থার অফিসের উপরে মালিকের দেওয়া ফ্ল্যাটে। এখন তাঁর অন্তর্ধান রহস্যের জট দ্রুত ছাড়ানোর জন্য সরব হয়েছেন অনেকেই। শিলিগুড়ির একাধিক নাগরিক সংগঠন আলাদা মঞ্চ গড়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির তরফে অভিরঞ্জন ভাদুড়িও ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy