তিন ধরে জ্বর রায়গঞ্জের দেবীনগর এলাকার বাসিন্দা ১৪ বছরের রাকেশ সরকারের। বুধবার সকালে তাকে রায়গঞ্জ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের লোকেরা। রাকেশের মা নিভাদেবী বলেন, ‘‘চিকিত্সকের পরামর্শে দুপুরে ছেলের রক্ত সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দুই-তিনদিনের আগে নাকি রক্তের রিপোর্ট পাওয়া যাবে না। ছেলের যদি ডেঙ্গি হয়ে থাকে, তাহলে তো রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তার চিকিত্সাই শুরু হবে না।’’
ইটাহারের গুলন্দরের বাসিন্দা মনিজুল ইসলাম জ্বর ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার থেকে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। ১০ দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন তিনি। চিকিত্সকের পরামর্শে এ দিন দুপুরে তাঁর রক্ত পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন নার্সরা। মনিজুলরা জানান, কবে রক্তের রিপোর্ট আসবে, কেউ জানাতে পারেননি। ডেঙ্গু হয়েছে কি না উত্কন্ঠায় রয়েছি।’’
শুধু রাকেশ বা মনিজুলই নয়, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন বহু রোগীর অভিযোগ, চিকিত্সকেরা রক্ত পরীক্ষা লিখে দেওয়ার পর কখনও ১২ ঘণ্টা, আবার কখনও একদিন পরে তাঁদের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হচ্ছে। সেই রিপোর্ট হাতে পেতে দুই- তিনদিন সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে চিকিৎসা বিভ্রাটের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, এখনও পর্যন্ত কারও শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া যায়নি। গত দু’সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ জন করে রোগী জ্বরের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আবার প্রতিদিনই বহু রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
বর্তমানে হাসপাতালে ৩২ জন জ্বরের রোগী ভর্তি রয়েছেন। চিকিত্সকদের পরামর্শে এ দিন সন্দেহজনক ১৬ জন রোগীর রক্ত সংগ্রহ করে হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। এঁদেরই মধ্যে একজন দাবি করেছেন, বাইরের একটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে তাঁর রক্তে এনএসওয়ান পজিটিভ ধরা পড়েছে। সবারই অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দু’ থেকে তিনদিনের আগে রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট দিচ্ছে না। হাসপাতাল সুপার গৌতম মণ্ডল অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে জ্বরে আক্রান্ত যে সমস্ত রোগী সন্ধ্যা বা রাতে ভর্তি হন, পরদিনই তাঁদের এনএসওয়ান, ম্যাক অ্যালাইজা, প্লেটলেট, প্যাকসেল ভলিউম সহ রক্তের নানারকম পরীক্ষা করে ওই দিনই রিপোর্ট দেওয়া হয়। রক্তের রিপোর্ট দিতে কেনও দেরির অভিযোগ উঠছে তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’