E-Paper

‘অনুদান’, রাজনীতির প্রলেপে নতুন সংজ্ঞায় 

রাজ্য সরকারের ঋণের বোঝা কয়েক লক্ষ কোটি টাকা, মাঝেমধ্যে এ কথা শোনা গেলেও অন্য দিকে, সরকার দরাজহস্ত।

রণজিৎকুমার মিত্র

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৪ ০৮:৪৭
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

‘ঋণজর্জর জীর্ণ জীবনে শরতের উঁকিঝুঁকি/ পারে না করতে সুখী’—
শরতের আগমন নিয়ে ষাটের দশকে এই লাইনটি লিখেছিলেন কবি বুদ্ধদেব বসু। তখন তিনি কলকাতার একটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। মধ্যবিত্তের সাধ আর সঙ্গতির মধ্যে বিস্তর ফারাক ছিল সে সময়। শুধু শিক্ষক-অধ্যাপক বা কেরানিকুলেরই নয়, জনসাধারণের একটা বড় অংশের পুজোর সাধ-আহ্লাদ মেটাতে ধার-দেনা করতে হত।

আজ রাজ্য সরকারের ঋণের বোঝা কয়েক লক্ষ কোটি টাকা, মাঝেমধ্যে এ কথা শোনা গেলেও অন্য দিকে, সরকার দরাজহস্ত। গত কয়েক বছরের মতো এ বারেও পুজোর ‘অনুদান’ ঘোষিত হয়েছে। এ বার বেড়ে হল ৮৫ হাজার, আসছে বছর এক লক্ষ টাকা! রাজ্যে প্রায় ৪৩ হাজার পুজো কমিটি এই ‘অনুদান’ পাবে। এর সঙ্গে দমকল, পুরপরিষেবা ইত্যাদির সরকারি ফি মকুব। এ অনুদানের ভালমন্দ নিয়ে বাঙালি নানা দলে-উপদলে বিভক্ত। চাকরি, কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য নেই, মহার্ঘ ভাতাও নেই! শিশুদের মিড-ডে মিলে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার নেই! ছেলেমেয়েরা ভিন্ রাজ্যে চাকরির জন্য চলে
যাচ্ছে।

কিন্তু পুজো এলেই দান-খয়রাতিতে রাজ্যে তখন ‘উন্নয়নের’ জোয়ার! এর মধ্যে নিন্দুকেরা ভোটের রাজনীতি খুঁজবেন কি না, তাঁদের ব্যাপার। তবে রাজনৈতিক আলোচকেরাই বলেন, ভোটে জিততে যেমন ‘ইলেক্টোরাল বন্ড’ সত্য, তেমনি ‘লক্ষীর ভান্ডার’ এবং এই ‘পুজো-অনুদান’ সমান সত্য। বর্তমান সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার কিছু পরেই দুর্গাপুজোয় সরকারি তরফে কমিটিগুলির ‘পাশে’ থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। পুজোর অনুদান শুরু হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা দিয়ে। এ বার ৮৫ হাজার। গত বছরের চেয়ে বেড়েছে ১৫ হাজার। এই ঘোষণার দিন এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটের প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়েছিল, ‘‘রাজ্য কিছুই পায়নি, আশা করি, এতেই আপনারা চালিয়ে নেবেন।’’ সত্যিই তো! বাঙালি ছেলেরা পাড়ায় পাড়ায় কী কষ্ট, সংগ্রাম করেই না এত কাল (রাজ্যে পরিবর্তনের আগে) পুজো করে এসেছে! আর একটি বছর না হয় কষ্ট হল! পরের বার তো এক লক্ষ! এর পরেও কোনও কোনও পুজো কমিটির নাকি কপালে চিন্তার ভাঁজ। বাড়ি-বাড়ি চাঁদা চাইতে গিয়ে যদি শুনতে হয়, ‘‘অনুদানের টাকা পেয়েছেন। পুজোর চাঁদার কী দরকার?’’

নিন্দুকেরা বলছেন, লোকসভা ভোট শেষ করে ২০২৬ সালের বিধানসভা নিয়ে নাকি পাড়ার ক্লাবগুলোয় চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

(শিক্ষাবিদ ও পরিবেশ কর্মী, জলপাইগুড়ি)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee Durga Puja

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy