Advertisement
E-Paper

বিপন্ন দেখলেই সাহায্যের আশ্বাস মনসুরের

কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া সাবেক ছিটমহল পোয়াতুর কুঠির বাসিন্দা মনসুর আলিকে প্রতিবেশীরা চেনেন ছিটমহলের যোদ্ধা হিসেবে।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৫৫
ভরসার হাত: মনসুর আলি। নিজস্ব চিত্র

ভরসার হাত: মনসুর আলি। নিজস্ব চিত্র

তিনি বৃদ্ধ হয়েছেন। তবু লড়াইয়ের মানসিকতা তাঁর কমেনি এতটুকুও। কারও ঘরে খাবার নেই শুনেই পড়িমরি ছুটছেন তিনি। নিজের জমিতে ফলানো ফসল তুলে দিচ্ছেন হাতে। আর সঙ্গে আশ্বাসবাণী, তিনি পাশে আছেন। যে কোনও প্রয়োজনে তাঁকে জানাতে কেউ যেন ভুল না করেন।

কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া সাবেক ছিটমহল পোয়াতুর কুঠির বাসিন্দা মনসুর আলিকে প্রতিবেশীরা চেনেন ছিটমহলের যোদ্ধা হিসেবে। বয়স আশি পার। তবু কারও উপকারে লাগবেন বুঝলেই তাঁকে আটকায় কার সাধ্যি! তাঁর কথায়, “আমরা ছিটমহলের মানুষেরা অনেকে দুঃখ-কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছি। এই সময়টাও ঠিক তেমনই কঠিন মনে হচ্ছে। অনেকেই অভাবের মধ্যে পড়েছেন। কাজ হারিয়ে অনেকের ঘরেই খাবার নেই। আমি আমার সামর্থ্য নিয়েই মানুষের পাশে রয়েছি।”

ধর্মপ্রাণ মনসুর সেই দশ বছর বয়স থেকেই রোজা রাখছেন। এখনও সেই অভ্যেসে পরিবর্তন হয়নি। একটা সময় গ্রামের মানুষ তাঁকে ‘মনসুর ধনী’ বলে ডাকতেন। তারপর বানিয়াদহ নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। মনসুরের পরিবার বড় হয়েছে। কমে এসেছে জমির পরিমাণ। তার মধ্যেই চলতে থাকে ছিটমহল বিনিময়ের লড়াই। মনসুর জানান, একসময় তাঁদের কোনও অধিকার ছিল না। সেই ছোট্ট ভূমিখণ্ড থেকে বেরোলেই তাঁদের অনুপ্রবেশকারী আইনে আটক করার ভয় থাকত। সেখানে কোনও আইনের শাসন ছিল না। এমনকি সাবেক ছিটমহলের মানুষদের পড়াশোনা থেকে চিকিৎসার কোনও অধিকারই ছিল না। আসলে ভারতীয় ভূখণ্ড দিয়ে ঘেরা ওই ছোট্ট অংশ ছিল বাংলাদেশি ছিটমহল। সেই সময় প্রতিটি মুহূর্ত ছিল বেঁচে থাকার লড়াই।

মনসুর জানান, সেই সময়ও খাদ্য সঙ্কট ছিল গ্রামে। অনেক মানুষের কোনও কাজ ছিল না। তাই খাবারের টাকা জোগাড় করতে পারতেন না তাঁরা। একমাত্র চাষবাসই তাঁদের বাঁচিয়ে রেখেছিল। সেই জমিতে ফলানো ফসল চুপিসাড়ে বিক্রি করে দিন গুজরান করতেন তাঁরা। সেই সময় থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা তৈরি হয় মনসুরের মধ্যে। কেউ অভুক্ত শুনলে খাবার নিয়ে হাজির হতেন।

তারপর দীর্ঘসময় ওই দুর্দশা ঘোচাতে লড়াই করেছেন। মিটিং-মিছিল সবকিছুতেই সামনের সারিতে দেখা যেত তাঁকে। ছিটমহল বিনিময় চুক্তির সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মনসুরকে সম্মান জানিয়ে সংবর্ধনা জানিয়েছিলেন। এখন বাবাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁর ছেলেরা। মনসুর জানান, তাঁর এখনও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। তার একটি অংশ কৃষিজমি। সেখানে ধান ও আলু চাষ করেছেন। সেই ফসল ঘরে মজুত রেখেছনে। ধান থেকে চাল তৈরি করেছেন। সেই চাল ও আলুই বিপন্ন লোকজনের হাতে তুলে দিচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, “সবাই মিলেই তো বাঁচতে হবে। এই সময় অভুক্ত মানুষের পাশে না দাঁড়ালে সবাই একসঙ্গে বেঁচে থাকব কি করে ?” ওই এলাকার বাসিন্দা আমেনা বেওয়া বলেন, “ঘরে খুব কষ্ট। কাজ নেই। মনসুর আলির ওই সাহায্যের ফলে আমাদের খুব উপকার হয়েছে।”

Mansur Ali Coochbehar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy