গাজলে জাতীয় সড়ক অবরোধ। মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
অসমের জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে মালদহে অবরোধ-আন্দোলন চলছেই। গত বৃহস্পতিবার প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা ধরে রেল অবরোধ করে রেখেছিল আদিবাসী সংগঠন। এ দিন শুক্রবারও ৬ ঘন্টা ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় কোথাও রাজ্য সড়ক, কোথাও জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল আদিবাসীদের দুই সংগঠন। অবরোধের জেরে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। এদিনও তির-ধনুক নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় আদিবাসী সংগঠনের সমর্থকরা। সকাল ৯টা থেকে অবরোধ শুরু হয়। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের কয়েক দফায় অনুরোধের পর দুপুর তিনটে নাগাদ অবরোধ উঠে যায়।
পুরাতন মালদহ, গাজল, হবিবপুর ও বামনগোলায় রাজ্য ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করে এ দিন সকাল থেকে অবরোধ শুরু হয়। পুরাতন মালদহের ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের কালুয়াদিঘিতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ শুরু হয়। ঘণ্টাখানেকে পরে জাতীয় সড়ক অবরোধ উঠে গেলেও, রাজ্য সড়কগুলিতে অবরোধ চলতে থাকে। হবিবপুর ব্লকের কেন্দপুকুর, বামনগোলার ১২ মাইলে মালদহ নালাগোলা, গাজলের ২০মাইলে মালদহ বালুরঘাট এবং গাজল বামনগোলার বাদনাগারায় রাজ্য সড়কে অবরোধ চলতে থাকে। আদিবাসী সিঙ্গল অভিযান নামে সংগঠনের সঙ্গে এ দিন ঝাড়খন্ড দিশম পার্টিও বিক্ষোভ-অবরোধে সামিল হয়।
গত বৃহস্পতিবার গাজলের একলাখিতে রেল অবরোধের জেরে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল, দুর্ভোগের একই চিত্র দেখা গিয়েছে এ দিনও। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরেও বাস না নড়ায় আনেক যাত্রীকেই বাস থেকে নেমে হেঁটে চলে যেতে দেখা গিয়েছে। অবরোধে আটকে পড়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। কেন্দপুকুরের অবরোধে আটকে পড়েছিলেন হবিবপুরের বাসিন্দা সৌরভ দাস। তিনি বলেন, “তিন ঘণ্টারও বেশি সময় অবরোধে আটকে থাকতে হয়েছে। মালদহে যাওয়ার কথা ছিল। যেতে পারলাম না।” আটকে পড়া কলেজ ছাত্র সুপ্রতীম পোদ্দার বলেন, “অবরোধের দাবিকে সকলেই সমর্থন জানায়। তবে সকলকে আটকে রেখে, হয়রান করে কী লাভ হল জানি না। আন্দোলনের বিকল্পপথও সকলের ভেবে দেখা প্রয়োজন।”
পরপর দু’দিন আদিবাসী সংগঠনের অবরোধের জেরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন প্রশাসনও। এ দিন বিকেলে অবরোধ উঠে যাওয়ার পরেই আদিবাসী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে পুরাতন সার্কিট হাউসে সরকারের তরফে বৈঠকে বসা হয়। রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী, জেলা শাসক শরদ দ্বিবেদী, পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “বিক্ষোভকারীদের বোঝানো হয়েছে। রাজ্য সরকারের মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছি।” জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আলোচনার মাধ্যমেই বিক্ষোভকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন।
বৈঠকে ঝাড়খন্ড দিশম পার্টির জেলা সভাপতি মোহন হাঁসদা, আদিবাসী সিঙ্গল অভিযানের জেলা সভাপতি রবীন মুর্মুও ছিলেন। প্রশাসনের আশ্বাসে এ দিনের অবরোধ তোলার কথা জানালেও, আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন, দুই সংগঠনের নেতারই। ঝাড়খন্ড দিশম পাটির জেলা সভাপতি মোহনবাবু বলেন, “অসমে যে ভাবে আদিবাসীদের উপরে হামলা হয়েছে, তা কখনওই সমর্থন যোগ্য নয়। সেখানকার রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার কেউ কোনও সহযোগিতা করছে না। আদিবাসীরা নিরপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাদের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরনের দাবিতে আন্দোলন চলবে।” আদিবাসী সিঙ্গল অভিযানের নেতা রবীনবাবু বলেন, “প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy