Advertisement
E-Paper

এককালের প্রাণ আজ হয়েছে মরা মহানন্দা

চাঁচলের রাজা শরচ্চন্দ্রের প্রশংসা করে শরত দাস নামে এক গম্ভীরা শিল্পী গান বেঁধেছিলেন, ‘চাঁচলের দানবীর রাজা বাহাদুর, করেছেন কত দেশের অভাব দূর।’ ইতিহাস বলছে, জমিদার ঈশ্বরচন্দ্র নিঃসন্তান ছিলেন। শরচ্চন্দ্র ছিলেন তাঁর দত্তক পুত্র। ১৮৮৮ সালে পালিতা মা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর নামে চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেন শরচ্চন্দ্র। স্ত্রী দাক্ষায়ণীর নামে ১৯৪২ সালে তৈরি হয় রানি দাক্ষায়ণী গার্লস স্কুল। ১৯৭১ সালে চাঁচল থানা হওয়ার আগে এই এলাকাটি ছিল খরবা থানার অধীনে।

বাপি মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:১১
দেখে বোঝা দায় এই মরা মহানন্দাই ছিল চাঁচলের প্রাণ। নিজস্ব চিত্র।

দেখে বোঝা দায় এই মরা মহানন্দাই ছিল চাঁচলের প্রাণ। নিজস্ব চিত্র।

চাঁচলের রাজা শরচ্চন্দ্রের প্রশংসা করে শরত দাস নামে এক গম্ভীরা শিল্পী গান বেঁধেছিলেন, ‘চাঁচলের দানবীর রাজা বাহাদুর, করেছেন কত দেশের অভাব দূর।’

ইতিহাস বলছে, জমিদার ঈশ্বরচন্দ্র নিঃসন্তান ছিলেন। শরচ্চন্দ্র ছিলেন তাঁর দত্তক পুত্র। ১৮৮৮ সালে পালিতা মা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর নামে চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেন শরচ্চন্দ্র। স্ত্রী দাক্ষায়ণীর নামে ১৯৪২ সালে তৈরি হয় রানি দাক্ষায়ণী গার্লস স্কুল। ১৯৭১ সালে চাঁচল থানা হওয়ার আগে এই এলাকাটি ছিল খরবা থানার অধীনে।

১৯০৮ সালে খরবা এলাকা প্রবল দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে। তখন রাজা শরচ্চন্দ্র রায়চৌধুরী রেঙ্গুন থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকার চাল নিয়ে এসে দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের মধ্যে বিলি করেছিলেন। ১৯৩৩ সালে মালদহ শহরে পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে ওয়াটার ওয়ার্কশপ তৈরি করেছিলেন। এ ছাড়া যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, রাজাবাজারে মূক ও বধিরদের স্কুল, কার্শিয়াঙের টিবি স্যানিটোরিয়াম ও চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল তৈরিতে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন রাজা শরচ্চন্দ্র।

নিজের তালুকের সীমানা ছাড়িয়ে উন্নয়নে যিনি ছিলেন দরাজ হস্ত। এখন রাজার সেই তালুক বর্তমানে মহকুমা সদর চাঁচল নাগরিক পরিষেবার অভাব আর সমস্যার হরেক গেরোয় জেরবার। যার মধ্যে অন্যতম এলাকার পথঘাট। রাজা ও তার আগে জমিদার ঈশ্বরচন্দ্রের আমলে জমিদারি দেখাশোনার জন্য চাঁচলে যে সমস্ত কর্মচারীদের নিয়ে আসা হয়েছিল তাদের ঘিরেই ক্রমশ মহানন্দার দুপাশে বেড়ে উঠতে শুরু করে এই জনপদ।

ওই মহানন্দা অবশ্য এখন মরা মহানন্দা বলে পরিচিত। নদী বুজিয়ে নির্মাণ, জঞ্জাল, পাড় দখলের মতো সমস্যায় ওই নদী কবেই বুজে গিয়েছে। অথচ যখন সড়ক যোগাযোগ ছিল না, তখন এই নদীই ছিল চাঁচলের প্রাণ। এক কালে এই নদীপথেই ব্যবসা চলত। তখন অবশ্য চাঁচল নামে কোনও জনপদ ছিল না। ছিল উত্তর ও দক্ষিণ সিঙ্গিয়া গ্রাম। তার কিলোমিটার খানেক দূরে মহানন্দার পাশে সুজাগঞ্জ ছাড়াও কিসানগঞ্জ, কুমারগঞ্জ, দেবীগঞ্জ এলাকাগুলি ছিল ব্যবসা প্রধান এলাকা। সে জন্য এলাকাগুলি গঞ্জ বলে পরিচিতি লাভ করে। ইংরেজ আমলে প্রচুর নীলচাষ হত এই এলাকায়। তখন ওই এলাকাগুলিতে সড়ক যোগাযোগ ছিল না। নদীপথে তা নিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো মালদহে।

ধীরে ধীরে এই মহকুমা সদর ভারে বাড়লেও যোগাযোগ ব্যবস্থার হাল কিন্তু এখনও বেহাল হয়েই রয়েছে। ব্লক রোড, থানা রোড বা দৈনিক বাজারগামী রাস্তা থেকে শুরু করে সিনেমাহল রোড ভেঙেচুরে একাকার। কবে ওই রাস্তাগুলিতে শেষ পিচের প্রলেপ পড়েছিল, তা আর এখন মনে করতে পারেন না শহরের বাসিন্দারা। বৃষ্টি হলেই সেগুলি জলে থইথই করতে থাকে। এ ছাড়া চাঁচলের বিভিন্ন পাড়ার মধ্যেকার রাস্তাগুলিরও অবস্থাও বেহাল। প্রশাসনের দাবি, অর্থাভাবে ওই সব কাজ করা যাচ্ছে না।

(চলবে)

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-শহরের নাম’। অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর-শহরের নাম’, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩৬/৮৯ চার্চ রোড, শিলিগুড়ি ৭৩৪০০১। প্রতিক্রিয়া জানান এই ফেসবুক পেজেও: www.facebook.com/

chanchal bapi majumder amar shohor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy