আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গিরা লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থন করবেন। পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবি ছেড়ে ভাষা, সংস্কৃতি এবং উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের দাবিকে সামনে রেখে তাঁরা রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের পাশে দাঁড়াবেন বলে বুধবার আত্মসমর্পণকারী কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব জানিয়েছেন। কমিটির সদস্যরা সকলেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার পক্ষে। এদিন ওই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণার আগে সংগঠনের নেতৃত্ব জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক সৌরভ চক্রবর্তীর সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা করেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে পবিত্র সিংহ ওরফে বিপ্লব বলেন, “তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার পরে আমরা লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
উত্তরবঙ্গের ছয়টি জেলায় ২৫০ জন আত্মসমর্পণকারী কেএলও রয়েছেন বলে আলোচনাপন্থী কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের সদস্যরা জানান। তাঁরা জানান, ২০০৩ সালে ভুটানে ফ্ল্যাশ আউট অপারেশনের সময় তাঁরা আত্মসমর্পণ করেন। পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের তরফে রাষ্ট্রীয় সমবিকাশ যোজনায় নবদিশা প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে কিছু হয়নি। রাজ্য সরকারকে সমস্যার কথা কয়েকবার জানিয়ে সাড়া মেলেনি। উল্টে পুলিশ হয়রানি করেছে। রাজ্যে পালা বদলের পরে ২০১২ সালে তাঁরা ‘আলোচনাপন্থী কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন’ নামে সংগঠন গড়ে নতুন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অনন্ত রায় বলেন, “তৃণমূল সরকারের পক্ষ থেকে পৃথক রাজ্যের দাবি ছাড়া অন্য সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা ও ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস মিলেছে।”
সংগঠন সূত্রের খবর, গত ২৫ মার্চ সাহুডাঙ্গিতে তৃণমূলের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন অনন্তবাবু এবং পবিত্রবাবু। মুখ্যমন্ত্রী ভাষা, সংস্কৃতি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন এবং আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গিদের পুনর্বাসনের দাবির কথা শুনেছেন। তিনি নির্বাচনের পরে আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছেন।
জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক সৌরভবাবু জানান, আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গিরা সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসার জন্য মরিয়া লড়াই চালাচ্ছে। তাঁদের বেশিরভাগেরই চরম অভাবের মধ্যে দিন কাটছে। প্রাক্তন কেএলও চিফ কম্যান্ডার মিলটন বর্মা, সংগঠনের প্রাক্তন সহ সভাপতি হর্ষবর্ধন, পুলস্থ বর্মণ সহ প্রত্যেকেই সমস্যায় আছেন।
ইতিমধ্যে টম অধিকারী, নীলাম্বর রাজবংশী, ইকবাল সিদ্দিকি, তরুণ থাপার মতো কয়েকজন হতাশ হয়ে ফের আত্মগোপন করে থাকা কেএলও সংগঠনে যোগ দিয়ে ফের ধরাও পড়েন। ওই ঘটনা ঠেকাতে আত্মসমর্পণকারীদের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনায়ও হয়। সৌরভবাবুর কথায়, “বামফ্রন্ট সরকারের বঞ্চনার জন্য ওঁদের অনেকে হতাশ ছিলেন। আমরা পৃথক রাজ্যের দাবি ভুলে আলোচনায় বসার জন্য আবেদন রেখেছিলাম। ওঁরা সাড়া দিয়েছেন।”
আত্মসমর্পণকারী কেএলও-দের সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, সংগঠনের সদস্যরা তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার করবেন কিনা সেই বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। দু’একদিনের মধ্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব আলোচনায় বসে এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সৌরভবাবু বলেন, “আমরা চাই ওঁরা প্রচারে নামুন। গণতন্ত্রের প্রতি আস্থার কথা মানুষের সামনে তুলে ধরুন।”