Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
নজর নেই জাতীয় সড়কে, যাচ্ছে প্রাণ

দুই জেলায় মৃত দুই, ক্ষুব্ধ নেতা-মন্ত্রী, বাসিন্দা-ব্যবসায়ী

এক জেলায় সড়ক সম্প্রসারণ হয়ে দুর্ভোগ লাঘব বলেও, যানবাহনের গতিতে নিয়ন্ত্রণ নেই বলে অভিযোগ। অন্য জেলায় বেহাল জাতীয় সড়কে ক্রমাগত জবরদখল চললেও, কোনও পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ। দু’ক্ষেত্রেই ক্ষোভ দানা বেঁধেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

রায়গঞ্জের মিয়ারুলে দুর্ঘটনার পরে ট্রেকারে আগুন লাগিয়ে দেয় জনতা।

রায়গঞ্জের মিয়ারুলে দুর্ঘটনার পরে ট্রেকারে আগুন লাগিয়ে দেয় জনতা।

গৌর আচার্য ও অভিজিত্‌ সাহা
রায়গঞ্জ ও মালদহ শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪০
Share: Save:

এক জেলায় সড়ক সম্প্রসারণ হয়ে দুর্ভোগ লাঘব বলেও, যানবাহনের গতিতে নিয়ন্ত্রণ নেই বলে অভিযোগ। অন্য জেলায় বেহাল জাতীয় সড়কে ক্রমাগত জবরদখল চললেও, কোনও পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ। দু’ক্ষেত্রেই ক্ষোভ দানা বেঁধেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুরাতন মালদহের নারায়ণপুর এবং রায়গঞ্জে মঙ্গলবার দু’টি পৃথক দুর্ঘটনায় দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই এলাকাতেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়। মালদহে পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। ৩ গ্রামবাসী সহ পুলিশকর্মীরা জখম হন। অন্যদিকে, রায়গঞ্জে একটি ট্রেকারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

সম্প্রতি রায়গঞ্জ থেকে হেমতাবাদ পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণের পরে একাধিক জায়গায় লোহার ব্যারিকেড বসিয়েছে পুলিশ। ব্যারিকেড বসালেও সড়কে ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন না হওয়ায় যান নিয়ন্ত্রণ হয় না বলে বাসিন্দা সহ রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের অভিযোগ। মঙ্গলবার দুপুরে রায়গঞ্জের মিরুয়াল এলাকায় ট্রেকারের ধাক্কায় স্থানীয় পালপাড়া এলাকার বাসিন্দা পেশায় কেবল অপারেটর ও সব্জি ব্যবসায়ী অনন্ত পালের (৩৬) মৃত্যু হয়। অনন্তবাবু বাইকে চেপে বাড়ি থেকে কর্ণজোড়ার দিকে যাচ্ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রায় দেড়মাস আগে চণ্ডীতলা এলাকায় কালিয়াগঞ্জগামী একটি ট্রাকের ধাক্কায় এক সাইকেল চালকের মৃত্যু হয়েছিল।

জেলা বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্লাবন প্রামাণিক অভিযোগ করে বলেন, “শুধু ব্যারিকেড বসিয়ে দিলেই যান নিয়ন্ত্রণ হওয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজন পর্যাপ্ত পুলিশি নজরদারি।” পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত সোম বলেন, “যতদিন না সড়কে নজরদারি শুরু হবে ততদিন সড়ক বিপজ্জনক অবস্থাতেই থাকবে।” জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

মালদহের নারায়ণপুরে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষের পরে পুলিশি টহল।

মালদহের জাতীয় সড়কে ট্র্যাফিক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, “জাতীয় সড়ক বেহাল দশায় রয়েছে। তবে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ দ্রুত রাস্তা সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু ট্র্যাকি পরিকাঠামো বাড়ানো প্রয়োজন। এ নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলব।” ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মালদহের মার্চেন্ট চেম্বার অফ কর্মাসের সম্পাদক উজ্জ্বল সাহাও। সড়কে স্থায়ী ট্র্যাফিক ব্যবস্থার দাবিতে পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

জেলা পুলিশকে অবশ্য একহাত নিয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “ট্র্যাফিক বলে যে একটি ব্যবস্থা রয়েছে, তা জেলা পুলিশ বুঝি ভুলেই গিয়েছে।” জেলা কংগ্রেসের সাধারন সম্পাদক নরেন্দ্র নাথ তেওয়ারি বলেন, “পুলিশ কর্তৃপক্ষ নিজেদের ভূমিকা পালন করতে হবে। না হলে দুর্ঘটনা রোখা সম্ভব নয়।” একই দাবি জানিয়েছেন বিজেপির জেলা সভাপতি শিবেন্দুশেখর রায়। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাসিন্দাদের দাবি দাওয়া খতিয়ে দেখে প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রায়গঞ্জে দুর্ঘটনায় মৃত অনন্তবাবুর স্ত্রী লাভলিদেবী গৃহবধূ। তাঁদের একমাস বয়সী একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। লাভলিদেবী বলেন, “এবার তো পথে বসতে হবে। জানি না আমাদের ভবিতব্যে কী রয়েছে।” মালদহে জাতীয় সড়ক পার হতে গিয়ে ট্রেলারের ধাক্কায় মৃত্যু সাবির শেখের (২৫)। মঙলবাড়ির জলঙ্গা এলাকার বাসিন্দা সাবিরের বাবা হারাণু শেখ শ্রমিকের কাজ করেন। দর্জির কাজ করা সাবির ছিল পরিবারের অন্যতম উপার্জনকারী। তাঁর পরিবারের এক সদস্যের কথায়, “সাবিরের মৃত্যুতে পরিবারের ভবিষ্যত নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। প্রয়োজনে দিনে অসংখ্যবার জাতীয় সড়ক পারাপার করতে হয়। প্রশাসনকেই তো বাসিন্দাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে। এমন ঘটনা যেন আর কোনও পরিবারের সঙ্গে না ঘটে।”

ছবি: তরুণ দেবনাথ ও মনোজ মুখোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

national highway accident death agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE