Advertisement
০৩ মে ২০২৪

প্রার্থী ঘোষণার আগেই প্রচারে গৌতম, ক্ষোভ তৃণমূলে

দলের তরফে প্রার্থী তালিকা এখনও ঘোষণা হয়নি। তার আগে নিজেকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব প্রচারে নেমে পড়েছেন বলে অভিযোগ তুললেন তৃণমূলেরই কিছু নেতা।

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০২:২৭
Share: Save:

দলের তরফে প্রার্থী তালিকা এখনও ঘোষণা হয়নি। তার আগে নিজেকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব প্রচারে নেমে পড়েছেন বলে অভিযোগ তুললেন তৃণমূলেরই কিছু নেতা।

বুধবার সকালে গৌতমবাবু ওই ওয়ার্ডের শান্তি মোড় লাগোয়া এলাকায় গিয়ে বাড়ি-বাড়ি ঘুরে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা প্রচার করেন। তৃণমূলের জেলা নেতাদের কয়েকজন জানান, দলের পক্ষ থেকে অলিখিত নির্দেশ জারি করে বলা হয়েছে, প্রার্থী তালিকা ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কেউ নিজেকে প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে প্রচার করতে পারবেন না। ৪৭ আসন বিশিষ্ট শিলিগুড়ি পুরসভায় ৪৬টি ওয়ার্ডে সেই নিয়ম মানা হলে কেন মন্ত্রী তথা জেলা সভাপতি সেই নিয়ম ভাঙলেন সেই প্রশ্নেই দলে বিতর্ক চলছে। বাড়ছে ক্ষোভও।

তবে গৌতমবাবু অবশ্য দাবি, পুরভোটের প্রস্তুতির জন্য তিনি শহর জুড়ে নাগরিক সভা, ঘরোয়া বৈঠক করে জনসংযোগের কাজ শুরু করেছেন। এ দিনও তেমনিই কর্মসূচি ছিল। মন্ত্রীর কথায়, “ভোটের প্রশাসনিক প্রস্তুতি শুরু হওয়ার পর থেকেই দলের হয়ে প্রচার চালাতে দলের সকলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই মতো জনসংযোগের কাজ শুরু করেছি। দল যদি প্রার্থী হতে নির্দেশ দেয়, তবে সেই মতো প্রচার চালাব।”

কিন্তু সকালে মন্ত্রীর সফরের সময়ে দেখা গিয়েছে, সরাসরি নিজে প্রার্থী হচ্ছেন বলে জনসমক্ষে ঘোষণা করেছেন। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের খুড়তুতো দাদা গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্যের ফ্ল্যাটে ঢুকে তাঁকে প্রণাম করে আশীর্বাদও চান। শিলিগুড়ির সিপিএম পরিচালিত প্রাক্তন বোর্ডের তত্‌কালীন চেয়ারম্যান পার্থসারথি দাসের ফ্ল্যাটে গিয়ে প্রচারে সামিল হওয়ার অনুরোধও করেন মন্ত্রী। বামপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত সিকিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন দেবব্রত মিত্রের বাড়িতে গিয়েও প্রায় ১ ঘন্টা কথাবার্তা বলেন গৌতমবাবু। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা ভ্রমণ কাহিনি লেখক গৌরীশঙ্করবাবু বলেন, “গৌতম বয়েজ স্কুলের ছাত্র ছিল। ও ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছে বলল। ওঁর কথা শুনলাম। অশোকও প্রার্থী হবে শুনেছি। এর বেশি কী বলব!” শান্তি মোড় থেকে হাকিমপাড়া, স্বামীজি সরণি সহ বিভিন্ন এলাকায় হেঁটে ঘুরেছেন মন্ত্রী। পথ চলতি বাসিন্দাদের দিকে হাতজোড় করে নমস্কারও জানিয়েছেন। হেঁটে প্রচার চালানোর পরে নিজের গাড়ি ছেড়ে স্কুটারের পিছনে বসে বাড়ি ফিরেছেন তিনি।

মন্ত্রী গৌতমবাবু শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে গত পুরভোটে জিতেছিলেন। এবারে ওই ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। দলীয় সূত্রের খবর, সেই ওয়ার্ডে মন্ত্রীর স্ত্রী প্রার্থী হতে পারেন। গৌতমবাবু নিজের জন্য বেছে নিয়েছেন লাগোয়া ১৫ নম্বর ওয়ার্ড। গত রবিবার দলের তরফে ওয়ার্ডে নাগরিকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বও সেরেছেন মন্ত্রী। বুধবার অবশ্য খোলাখুলি বাসিন্দাদের কাছে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে ভোট চেয়েছেন মন্ত্রী। মন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করে দেওয়ায়, সেই ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা খুশি হলেও, শহরের অন্য ওয়ার্ডের কর্মী এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে বলে দলের অন্দরের খবর।

তৃণমূল সূত্রের খবর শিলিগুড়ির ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টি ওয়ার্ডে প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। ওই প্রার্থীদের প্রস্তুতি নিতে দলের তরফে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। তেমনই এক বিদায়ী কাউন্সিলরের কথায়, “সব জেনেও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছি, শুধুমাত্র দল প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি বলে। একই দলে পৃথক ধরন হলে, বিষয়টি ভাল দেখায় না। এটা নীতিরও প্রশ্ন।” নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে গত সোমবারই দল ছেড়েছেন দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি হরিসাধন ঘোষ। পরদিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তিনি। পুরোনো দলের সভাপতির প্রচার নিয়ে কটাক্ষ করেছেন তিনি। এ দিন দুপুরে বলেন, “সামগ্রিক ভাবেই তৃণমূলে শৃঙ্খলাহীনতা রয়েছে। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনারও কোনও চেষ্টা দেখিনি। আমি এখন আর ওই দলে তো নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE