Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বেহাল যাত্রী প্রতীক্ষালয়, উদাসীন নিগম

দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে যাত্রী বিশ্রামাগারের দুটি শৌচাগার। নেই বিশুদ্ধ পানীয় জলও। সরবরাহের পরিকাঠামোও বেহাল। বিশ্রামাগারে নেই পর্যাপ্ত আলো। সংস্কারের অভাবে মাঝেমধ্যেই খসে পড়ে দেওয়ালের পলেস্তরা। নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় বিশ্রামাগারের যত্রতত্র আবর্জনা ও দেওয়ালজুড়ে মাকড়সার ঝুল ছড়িয়ে রয়েছে। যাত্রীদের বসার একাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার খুলে নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা! উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগম কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জেরে নিগমের রায়গঞ্জ ডিপোর যাত্রী পরিষেবা এভাবেই বেহাল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বাস স্ট্যান্ডে। —নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বাস স্ট্যান্ডে। —নিজস্ব চিত্র।

গৌর আচার্য
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:১৫
Share: Save:

দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে যাত্রী বিশ্রামাগারের দুটি শৌচাগার। নেই বিশুদ্ধ পানীয় জলও। সরবরাহের পরিকাঠামোও বেহাল। বিশ্রামাগারে নেই পর্যাপ্ত আলো। সংস্কারের অভাবে মাঝেমধ্যেই খসে পড়ে দেওয়ালের পলেস্তরা। নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় বিশ্রামাগারের যত্রতত্র আবর্জনা ও দেওয়ালজুড়ে মাকড়সার ঝুল ছড়িয়ে রয়েছে। যাত্রীদের বসার একাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার খুলে নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা! উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগম কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জেরে নিগমের রায়গঞ্জ ডিপোর যাত্রী পরিষেবা এভাবেই বেহাল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে, রায়গঞ্জ পুরসভা পরিচালিত শহরের বেসরকারি পুর বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী পরিষেবা উন্নতমানের হলেও যাত্রীদের বিশ্রামাগারে ঢোকার সামনের রাস্তা দখল করে একাধিক দোকান গজিয়ে উঠেছে। ফলে বিশ্রামাগারে ঢুকতে গিয়ে যাত্রীদের হয়রানি ও সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ।

সমস্যার কথা জানেন নিগমের রায়গঞ্জের ডিভিশনাল ম্যানেজার সুবীর সাহা ও পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রণজকুমার দাস! সুবীরবাবুর কথায়, সমস্যা খতিয়ে দেখে খুব শীঘ্রই যাত্রী বিশ্রামাগারের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করা হবে।

রণজবাবুর দাবি, অতীতে একাধিকবার পুরসভার তরফে পুর বাসস্ট্যান্ড চত্বরের বেআইনি জবর দখল উচ্ছেদ অভিযান হলেও কিছুদিন পর ফের বেআইনি জবর দখল হয়ে যায়। তিনি বলেন, “যাত্রীদের স্বার্থে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের রাস্তা খুঁজে বার করতে পুরসভার চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্ত-সহ পরিবহণ মালিক, চালক ও কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”

উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের রায়গঞ্জ ডিপো থেকে প্রতিদিন লোকাল ও দুরপাল্লা মিলিয়ে ৩৫টিরও বেশি রুটে শতাধিক বাস যাতায়াত করে। অন্য দিকে, রায়গঞ্জ পুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস, ট্রেকার ও অটো মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০টি গাড়ি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করে। তাই দু’টি বাসস্ট্যান্ডে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী গাড়ি ধরার জন্য ভিড় করেন!

যাত্রীদের অভিযোগ, নিগমের বিশ্রামাগারে যাত্রীদের বসার একাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার চুরি করে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। বর্তমানে বিশ্রামাগারে ১২ জন যাত্রীর বসার জায়গা রয়েছে। তাই বসার জায়গা না পেয়ে প্রতিদিনই বহু যাত্রীকে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। বেহাল হয়ে পড়ায় পুরুষ ও মহিলাদের দু’টি শৌচাগার প্রায় তিন বছর আগে বন্ধ করে দিয়েছে নিগম। ফলে যাত্রীরা টাকা খরচ করে সংলগ্ন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শৌচাগার ব্যবহার করতে বাধ্য হন। বিশ্রামাগারে যাত্রীদের বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের ট্যাপকল ও বেসিন ভেঙে যাওয়ায় যাত্রীরা নলকূপের দুর্গন্ধযুক্ত জল খেতে বাধ্য হন। পর্যাপ্ত আলো না থাকায় দিনের বেলায় মশার দাপটে যাত্রীরা স্বস্তিতে বসে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে পারেন না। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে মাঝেমধ্যেই বিশ্রামাগারের দেওয়ালের পলেস্তরা যাত্রীদের গায়ের উপর খসে পড়ে। নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় বিশ্রামাগারের যত্রতত্র আবর্জনা ও দেওয়াল জুড়ে মাকড়সার ঝুল ছড়িয়ে থাকায় অনেক যাত্রী বিশ্রামাগারে ঢুকতে চান না।

নিগমের ওয়ার্কার ইউনিয়নের তরফে কিছুদিন আগে ডিপোর যাত্রী পরিষেবার উন্নয়নের দাবিতে ডিভিশনাল ম্যানেজারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক প্রণব বসাক বলেন, “সমস্যার কথা আমরা দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষকে জানালেও বিশ্রামাগারের পরিকাঠামো উন্নয়ন হয়নি। অবিলম্বে সমস্যার সমাধান না হলে যাত্রীদের সুষ্ঠু পরিষেবার স্বার্থে টানা আন্দোলনে নামা ছাড়া আমাদের কোনও উপায় নেই।

শুক্রবার দুপুরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রায়গঞ্জ ডিপোতে দাঁড়িয়ে শিলিগুড়িগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন রায়গঞ্জের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা পেশায় হাট ব্যবসায়ী মানব কুণ্ডু। তিনি বলেন, “বেহাল পরিকাঠামো ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জেরে বাইরে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। নিগম কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত গাফিলতি না থাকলে এ ভাবে যাত্রী পরিষেবা ভেঙে পড়ত না।” অন্য দিকে, সম্প্রতি রায়গঞ্জ পুর বাসস্ট্যান্ডের বিশ্রামাগার, পানীয় জল ও শৌচাগারের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করায় পরিষেবা নিয়ে যাত্রীদের কোনও অভিযোগ নেই। তবে বিশ্রামাগারে ঢোকার রাস্তা দখল করে একাধিক ফল ও খাবারের অস্থায়ী দোকান গড়ে ওঠায় দিনভর সেখানে জট ও ভিড় লেগে থাকায় যাত্রীরা বিশ্রামাগারে ঢোকার সময়ে হয়রানি ও সমস্যার মুখে পড়েন বলে অভিযোগ। উত্তর দিনাজপুর বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্লাবন প্রামাণিক বলেন, “ বাসস্ট্যান্ডটি পুরসভার অধীনে রয়েছে, তাই সমস্যার সমাধানে পুর কর্তৃপক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

toilet gaur acharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE