Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বন্যায় গিয়েছে ঘর, স্কুল বসে বাঁধে

মাটিতে বসার আগে পাতা দিয়ে ঝাড়ু বানিয়ে ধুলো সরায় ওরা। টানা সেখানেই পাঁচ ঘণ্টা বসে লেখাপড়া করে অনির্বাণ, অঞ্জনা, সুমন। সকলেই তৃতীয় আর চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। ওদের স্কুলের ছাদ খোলা আকাশ। মেঝে তিস্তার বাঁধের একফালি জায়গা।

পথেই চলছে স্কুল। দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।

পথেই চলছে স্কুল। দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।

সব্যসাচী ঘোষ
মালবাজার শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪৩
Share: Save:

মাটিতে বসার আগে পাতা দিয়ে ঝাড়ু বানিয়ে ধুলো সরায় ওরা। টানা সেখানেই পাঁচ ঘণ্টা বসে লেখাপড়া করে অনির্বাণ, অঞ্জনা, সুমন। সকলেই তৃতীয় আর চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। ওদের স্কুলের ছাদ খোলা আকাশ। মেঝে তিস্তার বাঁধের একফালি জায়গা।

তিস্তার বন্যায় স্কুলবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার পরে নদীবাঁধেই চলছে মালবাজার ব্লকের চাপাডাঙা পঞ্চায়েতের প্রেমগঞ্জ মাঝিয়ালি বিএফপি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। সোমবারই স্কুলটি পরিদর্শনে যান মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি। তিনি বলেন, “ওই এলাকায় পূর্ব সাঙ্গপাড়ায় একটি স্থায়ী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে স্কুলটি আপাতত স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ”

ব্লকের একেবারে প্রান্তিক এলাকার এই স্কুলে ৬০ জন ছাত্রছাত্রী আর তিনজন শিক্ষকেরা স্কুল শুরুর প্রথমেই বাঁধের রাস্তায় কালো ত্রিপল বিছিয়ে নেন। তার পর বাঁধে দাড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে দিনের শুরু হয়। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অমলকুমার ঘোষের বাড়ি জলপাইগুড়ি শহরে। এ ছাড়া আরও দুই সহ শিক্ষক দেবায়ণ চন্দ, অসীম কুমার রায়েরাও রয়েছেন। বাইক বাঁধের গোড়ায় রেখে তাঁরা খোলা আকাশের স্কুলে যোগ দেন।

প্রথমে বাঁধে স্কুল চলতে দেখে অনেকে অবাক হলেও এখন অনেকটাই অভ্যস্ত গ্রামবাসীরাও। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা সুশীলা বর্মন মিড ডে মিল রান্নার দায়িত্বে রয়েছেন। বাঁধের পাশেই তাঁর বাড়ি এখন সুশীলাদেবীর বাড়িতেই স্কুলের পড়ুয়াদের জন্যে রান্না হয়। বাঁধের ওপর দিয়ে গাড়ি- মোটরবাইকও চলাচল করে। গাড়ির শব্দ শুনে শিশুদের কোনওরকমে সরিয়ে রাস্তা করে দেন। গাড়ি চলে গেলে ধুলোয় ঢেকে যায় চার পাশ। রোদ বাড়লে কিংবা বৃষ্টি হলে আশ্রয় নেবার জায়গাটুকু খুঁজতে হিমশিম খেতে হয় খুদে পড়ুয়াদের।

চলতি বছরের গত জুলাই মাসে চাপাডাঙায় তিস্তা নদী গতি পরিবর্তন করে গ্রামের দিকে ঢুকে পড়ে। তখনই ২০০৬-এ তৈরি এই প্রাথমিক স্কুলের পাকা স্কুলবাড়িটি পুরোটাই নদীতে তলিয়ে যায়। এর আগে গত বছরের বন্যাতেও স্কুলের ভিতরে জল ঢুকে গেলেও সে বছর কোনও রকমে রক্ষা পেয়েছিল স্কুলটি। এ বছর কিছুই করার উপায় ছিল না বলে ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক অমলকুমার ঘোষ আক্ষেপ করলেন। কোনওক্রমে স্কুলের একটি আলমারি নৌকায় চাপিয়ে কিছু নথি রক্ষা করা গিয়েছে মাত্র।

স্কুলের এই দশায় শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকেরা। সুভাষ বিশ্বাসের কথায়, “যতদিন না নতুন স্কুলঘর নির্মাণ হচ্ছে ততদিন অন্তত যেন অস্থায়ী ভাবে প্রশাসন কোথাও স্কুল চালাবার ব্যবস্থা করে।” স্কুলের পড়ুয়া অঞ্জনা দাস, অনির্বাণ চৌধুরীদের কথায়, “কবে স্কুল তৈরি হবে তা জানি না।”

বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ এবং প্রশাসনিক স্তরে জানিয়েও রেখেছেন বলে জানিয়েছেন অমলবাবু। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান ধর্ত্রিমোহন রায় বলেন, “স্কুলটির বিষয়ে বিশদে জানি।, কিন্তু যে এলাকার পড়ুয়ারা স্কুলটিতে পড়তে আসে সেই এলাকাতে নতুন স্কুলবাড়ি তৈরির জন্যে এখনও জমির খোঁজ মেলেনি। জমির সন্ধান মিললেই স্থায়ী স্কুল ঘর তৈরির কাজ শুরু হবে।”

সমস্যাটি সম্পর্কে জানে রাজনৈতিক দলগুলিও। ক্রান্তি ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি করুণাময় চক্রবর্তী জানান, লিখিত ভাবে মালবাজারের মহকুমাশাসককে জানিয়েছি। কীভাবে সাহায্য করা যায় তা দেখবেন বলে জানান মালবাজার পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ তথা ক্রান্তি এলাকার সিপিএম নেতা বিপ্লব ভগত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE