ফের নেশার ওষুধের বখরা নিয়ে বিবাদের জেরে এক যুবক খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানার মাল্লাগুড়ি এলাকার সূর্যসেন কলোনিতে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত যুবকের নাম সমীর ছেত্রী (৩২)। তাঁর বাড়ি ওই এলাকাতেই। তাঁকে তলোয়ার দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। দেহটি এলাকার রেললাইনের ধারে পড়েছিল। খুনে অভিযুক্ত সূরজ প্রধান ও বান্টি ছেত্রীও ওই এলাকারই বাসিন্দা। অভিযুক্তদের পুলিশ রাতেই ওই এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে।
অন্যতম অভিযুক্ত বান্টি স্থানীয় তৃণমূল কর্মী বলে অভিযোগ করেছেন নিহত সমীরের বাবা। এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর তৃণমূলের সঞ্জয় পাঠক অবশ্য তাকে সাধারণ কর্মী হিসেবে স্বীকার করেছেন। তবে জেলা তৃণমূলের অন্যতম কার্যকরী সভাপতি কৃষ্ণ পাল অবশ্য অভিযুক্তকে দলের কেউ নয় বলে জানিয়েছেন। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, “রাতে বচসার জেরেই এই খুন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে কেন খুন হল তা জানতে অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।”
পুলিশ সূত্রের দাবি, রবিবার রাতে সূরজের ধারে দেওয়া তলোয়ার নিয়ে বচসার জেরে সমীরকে খুন হতে হয়েছে। কয়েকদিন আগে কোনও কাজে সমীরকে নিজের তলোয়ার ধার দেয় সূরজ। কিন্তু কাজ হওয়ার পরেও কেন তার তলোয়ার ফেরত দিচ্ছে না তা বান্টিকে জিজ্ঞাসা করতে বলে। বান্টিও ওই তলোয়ার উদ্ধার করতে না পারায় দু’জনে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ সেটি ফেরত চাইতে যায়। সেই সময় পুরোনো কোনও বখরা কেন দেয়নি সমীর তা নিয়ে বাকি দু’জনের সঙ্গে বচসা শুরু হয় বলে পুলিশের সন্দেহ। এর পরেই ওই তলোয়ারটি নিয়েই সূরজ আক্রমণ করে সমীরের উপরে বলে অভিযোগ। ঘটনার পর এলাকায় ব্যপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রাই গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়। প্রধাননগর থানা থেকে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকেই দু’জনকে গ্রেফতার করে। তলোয়ারটিকেও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
তবে সমীরের সত্-বাবা কিরণ থাপা অভিযোগ করেন, “সমীরের সঙ্গে নেশার ওষুধ বিক্রি করা নিয়ে বিবাদ ছিল সূরজ ও কিরণের। কয়েকদিন ধরে এই নিয়ে মনোমালিন্যও চলছিল। তার জেরেই সম্ভবত খুন হতে হল ছেলেকে।” সমীর শিলিগুড়ি জংশন এলাকায় ঘুরে ঘুরে নেশার ট্যাবলেট ও সিরাপ বিক্রি করত বলে জানা গিয়েছে। সিকিম বাসস্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে গ্যাংটক থেকে আসা-যাওয়া করা যাত্রীদের কাছে ওই ওষুধ বিক্রি করত বলে সূত্রের খবর। তার সঙ্গে সূরজও একই ব্যবসায় জড়িত ছিল। একসঙ্গে দু’জনে খদ্দেরও ধরত বলে পুলিশের একাংশ স্বীকার করেছে। একই পাড়ায় থাকা ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে বেআইনি ব্যবসার খবর জানত বান্টি। কিরণবাবু অভিযোগ করেন, “সমীরদের কাছ থেকে নিয়মিত বখরা নিত বান্টি।” মাত্র ১৫ দিন আগে বাইকে করে নেশার ওষুধ বিক্রির অভিযোগে সিকিম বাসস্ট্যান্ড এলাকারই একজনকে Oরে পুলিশ।
এর আগে গত ৪ জানুয়ারি নেশার ওষুধ বিক্রির বখরা নিয়ে বিবাদের জেরে খুন হতে হয় শিলিগুড়ির সেবক রোডের সরকারপাড়ার দীপঙ্কর রায় নামে এক তৃণমূল কর্মীকে। তার খুনের মূল অভিযুক্তরা এখনও অধরা। ফের একই ধরণের ঘটনায় তৃণমূল কর্মীর নাম জড়িয়ে পড়ায় অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব। তার উপরে এলাকার তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর সঞ্জয় পাঠক বলেন, “ওই ব্যক্তি দলের কোনও সাংগঠনিক পদে না থাকলেও সাধারণ এক কর্মী। তবে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে পুলিশ আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।” যদিও বান্টিকে দলীয় কর্মী বলে স্বীকার করেননি তৃণমূলের অন্যতম কার্যকরী সভাপতি কৃষ্ণবাবু। তিনি বলেন, “তৃণমূলের মিটিং মিছিলে উপস্থিত থাকলেই কেউ দলীয় কর্মী হয়ে যায় না। এসব মিথ্যা অভিযোগ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy