দলেরই বিধায়ক তথা মন্ত্রীর ছেলেকে পুরসভায় আইনজীবী হিসেবে নিয়োগের বিরোধিতা করে সরব হলেন তৃণমূল কাউন্সিলরেরা!
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট পুরসভার আইনজীবী পদে স্থানীয় বিধায়ক তথা পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর ছেলে ঋতব্রতের নিয়োগের বিরোধিতা করে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কে চিঠি দিয়েছেন পুরসভার ১৪ জন তৃণমূল কাউন্সিলরের ১১ জন। চিঠি পাঠানো হয়েছে পূর্তমন্ত্রী এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা আইন দফতরের পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্রের কাছেও। চিঠিতে অবশ্য মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। ঋতব্রতর নিয়োগে আপত্তির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তৃণমূলেরই পুরপ্রধান চয়নিকা লাহা কাউন্সিলরদের সভায় কোনও রকম প্রস্তাব না এনে একার সিদ্ধান্তে এই নিয়োগ করেছেন। এর ফলে পুরসভার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তৃণমূল কাউন্সিলরদের চিঠি।
সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...
বালুরঘাটে পুরপ্রধানের সঙ্গে কাউন্সিলরদের একাংশের সমস্যা এর আগেও সামনে এসেছে। কিন্তু এ বার খোদ পূর্তমন্ত্রীর পুত্র জড়িয়ে যাওয়ায় সেই বিবাদ অন্য মাত্রা পেয়েছে। শুধু দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে চিঠি লেখাই নয়, শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে সেই চিঠির প্রতিলিপিও বিলি করেছেন বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলররা। এ নিয়ে দলের অন্দরে বেশ চড়া সুরেই কথাবার্তা হচ্ছে। প্রভাবশালী কোনও নেতার মদত ছাড়া, কাউন্সিলরদের পক্ষে এমন পদক্ষেপ করা সম্ভব ছিল না বলে দাবি করতে শুরু করেছেন মন্ত্রীর অনুগামীরা।
মন্ত্রী নিজে অবশ্য বলেন, “এটা পুরসভা-প্রশাসনের ব্যাপার। এ নিয়ে আমাকে বিরক্ত করবেন না।” আর মন্ত্রী-পুত্রের দাবি, পুরসভার তরফ থেকে তাঁকে আইনজীবী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তিনি চাকরি চাইতে যাননি। তিনি বলেন, “মন্ত্রীর ছেলে বলেই আমার নিয়োগ নিয়ে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা রুচিবিরুদ্ধ।” জেলা তৃণমূল সভাপতি বিপ্লব মিত্র জানিয়েছেন, অভিযোগ-পত্র হাতে পেলে তিনি খতিয়ে দেখবেন, “ঠিক কী হয়েছে।” আর চয়নিকাদেবীর দাবি, “পুরপ্রধানের ক্ষমতা প্রয়োগ করে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। স্বজনপোষণের অভিযোগ ঠিক নয়।”
দলনেত্রীর কাছে জানানো অভিযোগে তৃণমূল কাউন্সিলর শঙ্কর দত্ত, পিন্টু হালদার, ব্রতময় সরকারেরা দাবি করেছেন, দলীয় কাউন্সিলরদের সভায় না জানিয়ে পুরপ্রধান ‘একক সিদ্ধান্তে’ পূর্তমন্ত্রীর ছেলে ঋতব্রত চক্রবর্তীকে পুরসভার আইনজীবী পদে নিয়োগ করেন, ‘ওই সিদ্ধান্ত অনৈতিক’। অন্য কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও পুরপ্রধানের ‘একক সিদ্ধান্ত’ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ক্ষুব্ধ কাউন্সিলরদের বক্তব্য, “অগণতান্ত্রিক ভাবে পুরসভা চলছে। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।”
দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী এক দল জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের অনুগামী, অন্যটির নেতা পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী। বিপ্লববাবুর নেতৃত্বে ২০১১ সালে জেলার ছ’টি বিধানসভার মধ্যে পাঁচটিতেই দল জেতে। তবে মন্ত্রী হন শঙ্করবাবু। পরে লোকসভা ভোটের সময় বালুরঘাট আসনে বহিরাগত অর্পিতা ঘোষ ‘টিকিট’ পাওয়ায় জেলা তৃণমূলের একটা অংশ রীতিমতো খেপে ওঠে। হিলিতে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিটও হয়েছে। লোকসভা ভোটের ফল বেরনোর পরে দেখা যায়, হরিরামপুরে (বিপ্লববাবুর বিধানসভা কেন্দ্র) তৃণমূল প্রার্থীর লিড, পূর্তমন্ত্রীর ‘খাসতালুক’ বালুরঘাটের চেয়ে তিন গুণেরও বেশি। এ সব নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীতে নতুন করে ঠোকাঠুকি শুরু হয়। এ সবেরই ‘ছায়া’ বালুরঘাট পুরসভার এই কাণ্ডেও পড়েছে বলে মনে করছেন দলেরই অনেকে। বিপ্লবাবু অবশ্য বলেছেন, “এমন কথা দলের লোকজন বলছেন বলে আমি তো জানি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy