বড়দেবীর পুজোর প্রস্তুতি কোচবিহারে।—নিজস্ব চিত্র।
মদনমোহন মন্দির চত্বরের ময়না গাছের গুড়ি কেটে যূপছেদন পুজোর মাধ্যমে গুঞ্জাবাড়ি ডাঙ্গোরাই মন্দিরে গত সোমবার সূচনা হল বড়দেবীর পুজো। পুজোর পাঁচশো বছরের ইতিহাসে এই প্রথম মদনমোহন মন্দির চত্বরের ময়না গাছের গুড়ি কাটা হল। প্রায় এক দশক ধরে, টাকা দিয়েও ময়নাগাছের কাঠ জোগাড় করা মুশকিল হয়ে পড়েছিল। কিন্তু বড়দেবীর পুজোয় ওই কাঠ অপরিহার্য বলে মন্দির চত্বরেই ময়নাগাছ লাগানো হয়। এ বার পুজো হল সেই গাছের কাঠ দিয়েই। কোচবিহারের রাজ পরিবারের দুয়ারবক্সি অমিয় দেববক্সির কথায়,“বড়দেবী পুজোর ইতিহাসে মদনমোহন মন্দিরের ময়না কাঠ দিয়ে যূপচ্ছেদন পুজো ও প্রতিমার কাঠামো আগে কখনও হয়নি। সেদিক থেকে এটা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।”
রাজ-আমলের প্রাচীন এই পুজোয় প্রতি বছর আট ফুট লম্বা ময়না গাছের ডাল কেটে তা দেবী রূপে পুজো করা হয়। তার পরে তা শক্তিদণ্ড হিসেবে কাঠামোয় বসিয়ে তৈরি করা হয় বড়দেবীর প্রতিমা। এত দিন কখনও পাতলাখাওয়ার জঙ্গল থেকে, কখনও পুণ্ডিবাড়ি, বাইশগুড়ি, চকচকার মতো প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বহু চেষ্টায় ওই গাছের গুঁড়ি জোগাড় করতে হত বলে জানিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা।
মন্দিরের দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, বড়দেবীর প্রতিমা রক্তবর্ণা। দেবীর একদিকে থাকে সাদা সিংহ, অন্যদিকে জয়া-বিজয়া। জনশ্রুতি, মহারাজা বিশ্বসিংহের স্বপ্নে দেখা রূপই কোচবিহারে বড়দেবীর প্রতিমায় ফুটে ওঠে। এ দিনের পুজোয় ওই প্রতিমা তৈরিরও সূচনা হয়। গত সোমবার সকালে গুঞ্জাবাড়ি ডাঙ্গোরাই মন্দিরে মদনমোহন মন্দির চত্বরে লাগানো ময়না গাছের ডাল কেটে নিয়ে গিয়ে বিধি মেনে দেবী রূপে কল্পনা করে যূপছেদন পুজো হয়। সন্ধ্যায় পুরনো রীতি মেনে ওই ময়না ডাল পালকিতে করে মদনমোহন মন্দিরে আনা হয়। এক মাস ওই মন্দিরেই সেটির পুজো চলবে। ভাদ্র মাসের অষ্টমীতে ওই ডালটিকে দেবীবাড়ি মন্দিরে নিয়ে গিয়ে তিন দিন ধরে ‘হাওয়া খাওয়া’ পুজো হবে। তারপর কাঠামোর উপর শক্তি দণ্ড হিসেবে সেটি বসিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করা হবে। এবার ওই প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন প্রভাত চিত্রকর।
দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য তথা কোচবিহারের সদর মহকুমাশাসক বিকাশ সাহা বলেন, “প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন বড়দেবী পুজোর সূচনাতেই ময়না কাঠ চাই। এ বার প্রথম মদনমোহন মন্দির চত্বরে লাগানো ময়নার ডাল কেটে তা করা হয়েছে।” ওই বোর্ডের আর এক সদস্য জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, “গত বার অনেক কষ্টে বাইশগুড়ির প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ময়না কাঠ জোগাড় করে আনা হয়েছিল। এখন মদনমোহন মন্দির চত্বরে চারটি ময়না গাছ বেড়ে উঠেছে। এতে প্রতি বছর ময়না কাঠ জোগাড়ের দুশ্চিন্তা কমল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy