Advertisement
E-Paper

শুকনো আবহাওয়ায় রোগ বাড়ছে চা গাছে

একে বৃষ্টির দেখা নেই। দোসর কীটনাশকের অভাব। দুইয়ের জেরে ‘ফার্স্ট ফ্লাশে’র আগে উদ্বেগে রয়েছেন উত্তরবঙ্গের ছোট চা চাষিরা। আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা থাকলেও, গত অক্টোবর থেকে উত্তরবঙ্গে সে ভাবে বৃষ্টি হয়নি। তার জেরে চা গাছ শুকিয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন চা চাষিরা। শুকনো পাতায় শুরু হয়েছে রোগ পোকার আক্রমণ।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৪৩

একে বৃষ্টির দেখা নেই। দোসর কীটনাশকের অভাব। দুইয়ের জেরে ‘ফার্স্ট ফ্লাশে’র আগে উদ্বেগে রয়েছেন উত্তরবঙ্গের ছোট চা চাষিরা।

আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা থাকলেও, গত অক্টোবর থেকে উত্তরবঙ্গে সে ভাবে বৃষ্টি হয়নি। তার জেরে চা গাছ শুকিয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন চা চাষিরা। শুকনো পাতায় শুরু হয়েছে রোগ পোকার আক্রমণ। রেড স্পাইডার এবং লুপারের উপদ্রব বেশি বলে চা চাষিদের দাবি। ক্ষুদ্র চা চাষিদের অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে কীটনাশকের অভাব সঙ্কট বাড়িয়ে তুলেছে।

চলতি বছরের শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে চা বাগানগুলিতে চালু হয়েছে ‘প্ল্যান্ট প্রটেকশন কোড’। পিপিসি অনুযায়ী গাছের সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৩৩টি কীটনাশক ব্যবহারের তালিকা বেধে দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেই তালিকায় লুপার মারার ওষুধ নেই বলে চাষিদের দাবি। সে কারণেই আগামী মার্চ মাস থেকে পাতা তোলার মরশুম শুরুর আগেই ক্ষতির আতঙ্কে ভুগছেন চা চাষিরা। এই পরিস্থিতি চললে উত্তরবঙ্গের বহু বাগানে আগামী মরসুমে উত্‌পাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

বৃষ্টি না হওয়া অথবা কীটনাশকের অভাবের সমস্যা বড়-ছোট সব চা বাগান কর্তৃপক্ষকে সামলাতে হলেও, ছোট চা বাগানের ক্ষেত্রে সমস্যা বেশি বলে দাবি করা হয়েছে। বড় এবং মাঝারি চা বাগানে নিজস্ব সেচ ব্যবস্থা থাকে। মাটির নীচে বিছানো পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল তুলে যন্ত্রের মাধ্যমে বৃষ্টি ফোঁটার মতো চা বাগিচার উপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ছোট চা বাগানগুলির ক্ষেত্রে এই পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে পাইপ দিয়ে সাধারণ পদ্ধতিতে জল ছেটানো ছাড়া অন্য উপায় নেই বলে জানানো হয়েছে। তাতে বৃষ্টির খামতি মেটানো সম্ভব নয় বলে চা চাষিদের দাবি। সেই সঙ্গে লুপার পোকা মারার ওষুধ সরকারি তালিকায় না থাকায় কীটনাশক ছড়ানো সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ক্ষুদ্র চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্সের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, দাঁড়িয়ে পাতা নষ্ট হতে দেখা ছাড়া অন্য উপায় নেই। চা পর্ষদ সহ বিভিন্ন মহলে বিষয়টি জানানো হয়েছে। দেখা যাক কী হয়।”

শীতের মরশুমে বন্ধ থাকার পরে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ অথবা মার্চ মাস থেকে ফের পাতা তোলার কাজ শুরু হয়। যাকে ‘ফার্স্ট ফ্ল্যাশ’ বলা হয়। চা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চা বাগিচায় রেড স্পাইডার এবং লুপার একটি পরিচিত রোগ। তবে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে মাঝেমধ্যে হওয়া বৃষ্টি রোগ পোকা মেরে ফেলে। বৃষ্টি হলেও, তার সঙ্গে কীটনাশকও ছড়ানো হয়। এ বছর দুইয়ের অভাব-ই ছোট বাগানে সঙ্কট তৈরি করেছে।

নাগরাকাটার চা গবেষণা কেন্দ্রের আধিকারিক শ্যাম ভার্গিস বলেন, “পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি আয়ত্তের বাইরে চলে যায়নি। মার্চ মাসে কয়েকদিন ভাল বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে।” তবে কীটনাশক প্রসঙ্গে ভার্গিস আশ্বাস দিয়ে বলেন, “খুব শীঘ্র কেন্দ্রীয় সরকার নতুন নির্দেশ জারি করবে, তাতে সব ধরণের রোগ পোকার প্রতিষেধক থাকবে।”

বর্তমানে উত্তরবঙ্গে ক্ষুদ্র চা চাষির সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে। অন্তত দেড় লক্ষ একর জমি জুড়ে থাকা এই ছোট চা বাগানগুলিতে উত্‌পাদিত চা উত্তরবঙ্গের মোট চা উত্‌পাদনের ৪০ শতাংশ বলে দাবি করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ছোট চা বাগানগুলিতে উত্‌পাদন ব্যাহত হলে, মোট উত্‌পাদনেও মার খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

tea dry weather
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy