Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হামলা করে উচ্ছেদের চেষ্টা, গ্রেফতার ৫৮

হোটেল চত্বরে থাকা ভাড়াটের গুদামে হামলা চালিয়ে উচ্ছেদের চেষ্টার অভিযোগ উঠল শিলিগুড়ির সেবক মোড় লাগোয়া এলাকায়। এই ঘটনার জেরে গ্রেফতার করা হয়েছে দু’পক্ষের ৫৮ জনকে। শনিবার রাত ১টা নাগাদ ওই ঘটনার খবর পেয়ে গভীর রাতেই গুদাম মালিকের লোকজন হইচই শুরু করেন। এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

মেয়র হোটেলের ঘটনায় ধৃতদের আদালতে তোলা হচ্ছে। রবিবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

মেয়র হোটেলের ঘটনায় ধৃতদের আদালতে তোলা হচ্ছে। রবিবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১৪
Share: Save:

হোটেল চত্বরে থাকা ভাড়াটের গুদামে হামলা চালিয়ে উচ্ছেদের চেষ্টার অভিযোগ উঠল শিলিগুড়ির সেবক মোড় লাগোয়া এলাকায়। এই ঘটনার জেরে গ্রেফতার করা হয়েছে দু’পক্ষের ৫৮ জনকে।

শনিবার রাত ১টা নাগাদ ওই ঘটনার খবর পেয়ে গভীর রাতেই গুদাম মালিকের লোকজন হইচই শুরু করেন। এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ, ওই সময়ে ভাড়াটে উচ্ছেদের চেষ্টার অভিযুক্ত ব্যবসায়ী কাজল সরকার একাধিক নেতা-কর্তার নাম করে হুমকি দেন। সেবক রোডের ব্যবসায়ীদের একাংশের আরও অভিযোগ, উচ্ছেদে অভিযুক্তদের কয়েকজন তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপির প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন বলে দাবি করেন। কাজলবাবুর তরফেও পুলিশের কাছে পাল্টা অভিযোগ হয়। রাতেই অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিবদমান দুপক্ষের ৫৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “হোটেলের মালিক-সহ আরও কয়েকজনকে খোঁজা হচ্ছে।”

পুলিশ জানায়, ওই হোটেল নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। অতীতে পুর আইন না মেনে একাধিকবার হোটেলের অংশ সম্প্রসারণ করার অভিযোগ উঠেছিল পুরসভার আপত্তি সত্বেও নির্মাণ করার অভিযোগে হোটেলের অংশ একাধিকবার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। চোরাই তেলের কারবারে যুক্ত থাকার অভিযোগে ২০১৩ সালে গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছেন হোটেল মালিক। আগেও একজন ভাড়াটেকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ ও হুমকির অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশের কাছেও একাধিকবার অভিযোগ দায়ের করা সত্বেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। কাজলবাবু সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে চুরি ও ভাঙচুরের চেষ্টার অভিযোগ করেছেন দোকানের সঞ্জয় বনসল ও রতনলাল শর্মা। তবে হোটেল মালিক কাজলবাবু শিলিগুড়ি থানায় পাল্টা অভিযোগ করেছেন। ওই গুদামের মালিক রাতে লোকজন জড়ো করে হোটেলে ভাঙচুরের চেষ্টা করছিলেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ দিন সারাদিনই হোটেল ও লাগোয়া এলাকা ছিল থমথমে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমি বিশদে খোঁজ নিচ্ছি।”

ঘটনাস্থলে যান এসিপি (ইস্ট) পিনাকী মজুদার। তাঁর কাছে ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তিনি ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেন। এদিন ঘটনাস্থলে সকাল থেকেই সব দলের প্রতিনিধিদের দেখা গিয়েছে এলাকায়। ঘটনাস্থলে যান দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ সুরিন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সচিব দুলাল দে, সিপিএমের কমল অগ্রবাল, তৃণমূল নেতা নান্টু পাল, যুব তৃণমূলের মনোজ ভার্মাদের। প্রত্যেকেই কাজলবাবুর গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। বাইরে থাকায় ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি। সোমবার শহরে ফিরেই এলাকায় যাবেন বলে জানান প্রাক্তন পুরমন্ত্রী সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন,“আমি ঘটনার কথা শুনেছি। হোটেল চত্বরের কোনও ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করতে দেব না।”

একই হোটেল নিয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠায় পুলিশের ভূমিকায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি সাংসদও। তিনি বলেন, “আমাকে ভাড়াটেদের পক্ষ থেকে কয়েকজন ফোন করেছিল। আমি প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছিলাম। রাতের অন্ধকারে গুদাম খালি করার সাহস কেউ কী ভাবে পায় তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও খোঁজ নেব।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে জানান। তিনি বলেন, “বিষয়টি বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।”

কমলবাবু, নান্টু পালরা জানান, হোটেলটি আগে অন্য মালিকের ছিল। সেই সময় দোকানগুলি ভাড়ায় নেন ওই ব্যবসায়ীরা। পরে হোটেলের মালিকানা হাতবদল হওয়ার পরে ভাড়াটেদের উচ্ছেদের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। কিন্তু, গুদাম ছেড়ে দিতে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ী সঞ্জয় বনসলের গুদামের তালা ভেঙে মালপত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ হয়েছে। সঞ্জয়বাবু বলেন, “অভিযুক্ত কাজলবাবু বিজেপি-সিপিএম-তৃণমূল-কংগ্রেস বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার যোগাযোগের কথা বলেছে। এদিনও বারবার বিভিন্ন দলের নাম করে হুঁশিয়ারি দেন। অনেক নেতাই তাঁর হাতে রয়েছে বলে দাবি করেন।”

এই ঘটনায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলে জানান মোটর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শিবশঙ্কর সরকার। তিনি বলেন, “রাতের অন্ধকারে এত লোক নিয়ে গিয়ে এভাবে ডাকাতির চেষ্টা ভবিষ্যতেও হতে পারে। আমরা নিরাপত্তা চাইছি। অন্য এক ব্যবসায়ী রতনলাল শর্মা বলেন, “দোকানের মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। তবুও এভাবে জোর করে মালপত্র সরানোর চেষ্টা করার বিষয়টি ভয়ঙ্কর। পুলিশ বিষয়টি দেখুক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

58 arrested siliguri eviction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE