Advertisement
E-Paper

অ্যাসিড-ক্ষত নিয়ে অপেক্ষা চিকিৎসার

গালে, গলায়, বুকে দগদগে ঘা নিয়ে হাসপাতালে পড়ে থেকে চলছে স্বাভাবিক শরীর ফিরে পাওয়ার অপেক্ষা। ১৫ মাস আগে অ্যাসিড-হামলার শিকার মেদিনীপুরের পাড়া-গাঁয়ের মেয়ে ২২ বছরের সুতপা দাস। এক টাকাও সরকারি ক্ষতিপূরণ পাননি এখনও! সর্বোচ্চ পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালেও দরকারি সরঞ্জামের অভাবে থমকে জরুরি চিকিৎসা।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:০১
সুতপা দাস

সুতপা দাস

গালে, গলায়, বুকে দগদগে ঘা নিয়ে হাসপাতালে পড়ে থেকে চলছে স্বাভাবিক শরীর ফিরে পাওয়ার অপেক্ষা।

১৫ মাস আগে অ্যাসিড-হামলার শিকার মেদিনীপুরের পাড়া-গাঁয়ের মেয়ে ২২ বছরের সুতপা দাস। এক টাকাও সরকারি ক্ষতিপূরণ পাননি এখনও! সর্বোচ্চ পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালেও দরকারি সরঞ্জামের অভাবে থমকে জরুরি চিকিৎসা।

দাসপুর এলাকার আড়খানা গ্রামের মেয়ে সুতপা জানেন না, কবে শিকে ছিঁড়বে পরবর্তী অস্ত্রোপচার-ভাগ্যে। আগে বার পাঁচেক গলায়-কাঁধে অস্ত্রোপচার হলেও, এখনও বাকি বড়, জটিল অস্ত্রোপচার। টিস্যু এক্সপ্যান্ডার বা বেলুন বসিয়ে, শরীরের কোনও অংশের টিস্যু ফুলিয়ে বসাতে হবে পুড়ে যাওয়া অংশে। অ্যাসিড হামলার শিকারদের অনেকের ক্ষেত্রেই এটি হল গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসার পদক্ষেপ। কিন্তু সেই ‘টিস্যু এক্সপ্যান্ডার’ বা বেলুন কবে আসবে, তার সদুত্তর নেই খাস এসএসকেএম হাসপাতালেও। ২২ দিন ধরে এসএসকেএমের রোনাল্ড রস ভবনের বার্ন ইউনিটে কার্যত বন্দি মেয়েটি।

‘‘কখন বেড থাকে, কখন থাকে না, তাই ডাক্তারবাবুরা ভর্তি থাকতে বলেছেন। কিন্তু অস্ত্রোপচারের বেলুন কবে আসবে কেউ বলতে পারছেন না। বারবার জিজ্ঞাসা করতেও ভয় লাগছে!’’— বলছিলেন সুতপা। পুড়ে দলা পাকানো গলাটা এ ধার-ও ধার সামান্য নড়াতেও পারেন না তিনি। ডাক্তারবাবুরা পায়ের মাংস কেটে বসানোয় খানিকটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আর মাংস নেই যথেষ্ট। এর পরের ধাপ, বেলুন বসিয়ে টিস্যু ফুলিয়ে সেখান থেকে মাংস কেটে চিকিৎসা। ২০০৩ সালে ধানবাদে ভয়ানক অ্যাসিড-হানার শিকার সোনালী মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘টিস্যু বসানোর পরে সপ্তাহে সপ্তাহে ইঞ্জেকশন দিয়ে তা ফোলাতে হয়। সেই বাড়তি মাংস কেটে বসালে পুড়ে যাওয়া অংশের চেহারা পাল্টে যায়। কষ্ট হলেও খুব উপকারী এই চিকিৎসা।’’

কিন্তু আপাতত বেলুন-সঙ্কটে সুতপার জন্য সবই থমকে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের হাসপাতালেও অস্থিরোগ বা হার্টের অসুখে সরঞ্জামের অভাবে মাসের পর মাস অস্ত্রোপচারের তারিখ মেলে না। অ্যাসিড আক্রান্ত মেয়েটিকেও আপাতত ভুগতে হচ্ছে।

এসএসকেএমের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক অরিন্দম সরকারের কথায়, ‘‘টিস্যু এক্সপ্যান্ডার বা বেলুন এখন হাসপাতালে নিখরচাতেই মেলে। রোগীদের দরকারমতো আমরা তা নিয়ম মেনে জোগাড় করি।’’ কিন্তু সুতপার ক্ষেত্রে এই ‘প্রক্রিয়া’য় কত দূর সময় লাগবে তা কেউ বলতে পারছেন না। তাঁর কাকা সুশীল দাসের কথায়, ‘‘ওর বাবা ফুল বিক্রি করেন। হাসপাতাল থেকে আমাদের বলা হয়েছে, অনেক দরকারি জিনিসও সব সময়ে থাকে না। এর জন্যও ধৈর্য ধরতে হবে। নিজেরা বেলুন কিনে অস্ত্রোপচার করানোর সাধ্য নেই।’’ ঠিক যেমন এ ভাবেই বিনা অস্ত্রোপচারে, বিনা ক্ষতিপূরণে দাঁত চেপে লড়াই করছেন সুতপার মতোই আরও বহু অ্যাসিড আক্রান্ত।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমাফিক অ্যাসিড হামলায় অন্তত তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য। সুতপার পরিবারের ক্ষোভ, জেলা প্রশাসন, পুলিশের দোরে দোরে ঘুরেও কিছু মেলেনি। গত বছর ১৪ জুন, ঘাটালে বিএ পরীক্ষা দিয়ে ফেরার সময়ে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত এক যুবক আর এক জনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁকে অ্যাসিড ছোড়ে বলে অভিযোগ। চোখ দু’টো বাঁচলেও পুড়েছে শরীরের ৪০ শতাংশ। অভিযুক্ত সৌরদীপ মণ্ডল, অসিত বাঙালের বিচার চলছে।

আর খানিকটা স্বাভাবিক শরীরে বাঁচার আশায় বাড়ি থেকে দূরে কলকাতার হাসপাতালে অজানা ভবিষ্যতের প্রহর গুনছেন সুতপা।

Treatment Acid Attack Victim সুতপা দাস
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy