জন্মের পরেই ধরা পড়েছিল, সদ্যোজাতের ক্ষুদ্রান্ত্র পুরোপুরি তৈরি হয়নি। তড়িঘড়ি জেলা থেকে পাঠানো হয়েছিল শহরে। মাত্র ১ কেজি ৪০০ গ্রাম ওজনের দু’দিন বয়সি ওই শিশুর ক্ষুদ্রান্ত্র তৈরি করে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। অস্ত্রোপচারের পর থেকে প্রায় আড়াই মাস ধরে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা শিশুটি এখন নিজের মুখে খাবার খাচ্ছে। ওজনও খানিকটা বেড়েছে। আর কিছু দিন পরে তাকে ছুটি দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
জানা যাচ্ছে, ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা ওই পুত্রসন্তানটির জন্মের পরেই তাকে পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, পেটে সমস্যা রয়েছে। কিন্তু জেলা স্তরে সেই সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। তাই স্থানান্তরিত করা হয় এনআরএসে। সেখানে শিশু-শল্য বিভাগের চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে বোঝেন, দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে। ওই বিভাগের প্রধান চিকিৎসক কল্যাণী সাহা বসু জানাচ্ছেন, সদ্যোজাতের খাদ্যনালি, পাকস্থলী, ‘ডিওডেনাম’ (ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম এবং সব চেয়ে ছোট অংশ) ঠিক ছিল। কিন্তু তার পরে ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যবর্তী অংশ ‘জেজুনাম’-এর খানিকটা অংশ (১০-১৫ সেন্টিমিটার) তৈরি হয়নি। ক্ষুদ্রান্ত্রের শেষ ও দীর্ঘতম অংশ ‘ইলিয়াম’ তৈরি হলেও অত্যন্ত সরু ছিল, যা ঠিক মতো কাজ করতে সক্ষম ছিল না।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ক্ষুদ্রান্ত্রের যে অংশটি ছিল না, অস্ত্রোপচারে সেটিকে ‘টি’-এর মতো করে জোড়া লাগানো হয়। যাতে অন্ত্রের বাইরে যে অংশটি থাকল, তা দিয়ে খাদ্যরস বেরোতে পারে। ধীরে ধীরে তৈরি করা অংশটিও কাজ শুরু করবে। কল্যাণীর কথায়, ‘‘ওই অংশটি এখন কাজ শুরু করেছে। যার ফলে মুখে খাবার খাচ্ছে শিশুটি, পায়ুদ্বার দিয়েই মলত্যাগ করছে।’’ কল্যাণী-সহ শিক্ষক-চিকিৎসক কৌশিক সাহা, দেবায়ন গঙ্গোপাধ্যায়, দেবযানী দাস, তনুশ্রী কুণ্ডু এবং অ্যানাস্থেশিয়ার চিকিৎসক মৌসুমী খাঁড়াদের দল প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচারটি করে।
তবে অস্ত্রোপচারের পরে শিশুটিকে ঠিক মতো পুষ্টি দেওয়ার জন্য গলায় সেন্ট্রাল লাইন করে তার মাধ্যমে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট জাতীয় খাবার দেওয়ার প্রয়োজন থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মাত্র ১ কেজি ৪০০ গ্রাম ওজনের শিশুর সেন্ট্রাল লাইন করা সমস্যার ছিল, ছিল সংক্রমণের ঝুঁকিও। তাই হাত-পায়ের শিরার মাধ্যমে যতটা সম্ভব পুষ্টি দেওয়া হয়েছে। তাতে আড়াই মাসে প্রায় ২০০ গ্রাম ওজন বেড়েছে ওই শিশুর। সে স্তন্যপানও করছে। কল্যাণী জানাচ্ছেন, জন্মগত এই ত্রুটির নির্দিষ্ট কারণ এখনও জানা না গেলেও, গর্ভাবস্থায় মায়ের কোনও সংক্রমণ বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে সদ্যোজাতের এ হেন সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)