Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতালের ঘরে যশোদাদের ছায়ায় বাড়ছে পাঁচ অনাথ

মায়ের যত্নেই ওয়ার্ডের নার্সরা প্রতিদিন তেল মাখিয়ে স্নান করান ওদের। দুধ খাওয়ান। পাল্টে দেন পোশাক, ডায়াপার। চিকিৎসকদের অনেকেই ওদের মায়াভরা চোখের টানে প্রতিদিন হাসপাতালে পা দিয়েই ছুটে আসেন সিক নিউনেটাল কেয়ার ইউনিটে।

নারায়ণ দে
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৫
Share: Save:

জন্মের পরেই নাড়ির টান ছিড়ে তাকে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল পুকুরে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে কচুরিপানায় আটকে বেঁচে গিয়েছে মেয়েটির প্রাণ। কেউ পড়েছিল পথের ধারের ঝোপে। কারও মা আবার মানসিক ভারসাম্যহীন। উধাও হয়ে গিয়েছেন সন্তানের জন্ম দিয়েই।

ট্যাগ নম্বর সম্বল করে এখন আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সিক নিউনেটাল কেয়ার ইউনিটে পাশাপাশি এক সঙ্গে বড় হচ্ছে ওরা। ঘরের বাইরে স্নেহের নতুন এক ঘেরাটোপে।

মায়ের যত্নেই ওয়ার্ডের নার্সরা প্রতিদিন তেল মাখিয়ে স্নান করান ওদের। দুধ খাওয়ান। পাল্টে দেন পোশাক, ডায়াপার। চিকিৎসকদের অনেকেই ওদের মায়াভরা চোখের টানে প্রতিদিন হাসপাতালে পা দিয়েই ছুটে আসেন সিক নিউনেটাল কেয়ার ইউনিটে। সাড়ে তিন মাস ও আড়াই মাসের দুই শিশুকন্যাকে আদর করে শ্রুতি আর তোড়া বলে ডাকেন তাঁরা। এখনও নাম দেওয়া হয়নি দেড় মাসের আরেকটি শিশুকন্যা এবং ১৪ ও ১১ দিনের দুই শিশুপুত্রের। ‘‘হাসতে শিখেছে শ্রুতি। কোলে নিলেই হেসে ওঠে খিলখিলিয়ে। তোড়া অবশ্য একটু চুপচাপ।’’ তাদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে ওই বিভাগের নার্সিং ইনচার্জ চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে যেন আলো ছড়িয়ে গেল। তিনি বললেন, ‘‘বড্ড মায়া পড়ে গিয়েছে ওদের উপর।’’

হাসপাতালের সিক নিউনেটাল কেয়ার ইউনিটে নার্স রয়েছেন ২০ জন। তাঁদের যত্নেই বড়ো হচ্ছে শিশুগুলি। নিজেকে ওই শিশুদের মামা বলতে পছন্দ করেন শিশু চিকিৎসক সুনীল পান্না। বললেন, ‘‘রোজ সকালে হাসপাতালে ঢুকে আগে ওদের একবার দেখে আসি। তার পর কাজ শুরু করি।’’ হাসপাতালের সুপার চিন্ময় বর্মন জানান, ২০১৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের ফ্রেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সিডব্লিউসি চারটি শিশুকে এই হাসপাতালে পাঠায়। আর এক ভবঘুরে মহিলা হাসপাতালে জন্ম দেন এক পুত্র সন্তানের। এই পাঁচটি শিশুই এখন বড় হচ্ছে এই হাসপাতালে।

সিডব্লিউসি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ৯ নভেম্বর শহরের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল একটি শিশুকন্যাকে। তখন তার বয়স ছিল বড়জোর একদিন। কচুরিপানায় আটকে না গেলে মারাই যেত শিশুটি। পাঁচকেলগুড়িতে রাস্তার ধারে ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল এক সদ্যোজাতকে। তাঁকেও পরিবারের লোকেরা ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছিল।

চিন্ময়বাবু জানান, একটু বড় হলেই ওদের অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পর্যাপ্ত জায়গা পেলেই হামা দিতে শিখে যাবে খুদেরা। পরিকল্পনা আছে, এর পর তাঁরাই টাকা তুলে ঘটা করে অন্নপ্রাশন করবেন ওদের। খুদেদের নামকরণও করা হবে। আলিপুরদুয়ার জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান কান্তিভূষণ মহন্ত বলেন, ‘‘জেলা হাসপাতালে ওরা একটু বড় হলে তারপর তাদের হোমে পাঠানো হবে।’’

সেই দিনটার কথা অবশ্য এখন ভাবতেই চাইছেন না আলিপুরদুয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা। ভাবলেই যে মন খারাপ হয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Orphan Nurses Children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE