Advertisement
E-Paper

দুর্গাপুরে কার্ড, কেনাকাটা আমেরিকায়

কার্ড রয়েছে দুর্গাপুরে। অথচ, তা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনলাইনে প্রায় ৮০ হাজার টাকার জিনিস কেনা হয়েছে! গত রবিবার এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে সৌমিত্রকুমার কর নামে দুর্গাপুরের এক বাসিন্দার। পুলিশের পরামর্শে তিনি বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে।

সুব্রত সীট ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৫৪

কার্ড রয়েছে দুর্গাপুরে। অথচ, তা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনলাইনে প্রায় ৮০ হাজার টাকার জিনিস কেনা হয়েছে! গত রবিবার এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে সৌমিত্রকুমার কর নামে দুর্গাপুরের এক বাসিন্দার। পুলিশের পরামর্শে তিনি বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে।

বেসরকারি একটি ব্যাঙ্কের সার্ভারে ‘ভাইরাস’-হানাকে ঘিরে তোলপাড় চলছে দেশে। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, প্রায় ৩২ লক্ষ গ্রাহকের ডেবিট কার্ডের তথ্য হ্যাকারদের হাতে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হ্যাকারেরা ওই তথ্য পেলে কার্ডের প্রতিলিপি (‌ক্লোন) তৈরি করে টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। সেই আশঙ্কার সত্যতা কিছুটা হলেও প্রমাণিত হয়েছে কলকাতার এক আইনজীবীর ক্ষেত্রে। তাঁর কার্ড কলকাতায় থাকলেও চিন থেকে ‘সেই’ কার্ড ব্যবহার টাকা তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ।

তবে সাইবার ও ব্যাঙ্ক-জালিয়াতি দমনে অভিজ্ঞ গোয়েন্দাদের সন্দেহ, দুর্গাপুরের ঘটনাটা আলাদা। সৌমিত্রবাবুর কম্পিউটারে সরাসরি ‘হ্যাকার-হানা’ হয়েছিল। সৌমিত্রবাবুর অজান্তেই তাঁর গোপন তথ্য চুরি করেছিল দুষ্কৃতীরা।

ঠিক কী হয়েছে দুর্গাপুরে?

দুর্গাপুর বিধাননগরের সমবায় আবাসনের বাসিন্দা, বেসরকারি সংস্থার কর্তা সৌমিত্রবাবু জানান, গত ২৩ অক্টোবর তিনি মোবাইলে একটি মেসেজ পান। তা থেকেই জানতে পারেন, একটি বিদেশি সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে তাঁর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ৭৯,৫১৭ টাকা ৫৪ পয়সার কেনাকাটা করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানেন, ইতালির ওই ওয়েবসাইটে ডিজাইনার পোশাক ও শিল্পকলা সামগ্রী বিক্রি করা হয়। এর পরেই তিনি নিউ টাউনশিপ থানায় অভিযোগ জানাতে যান। তাঁর দাবি, মামলা দায়ের করার বদলে থানা থেকে তাঁকে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি জানাতে বলা হয়। তিনি ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের বিধাননগর শাখায় যান। সেখান থেকে তাঁকে বিষয়টি ক্রেডিট-কার্ড বিভাগে জানাতে বলা হয়। এর পরে তিনি চেন্নাইয়ে ওই ব্যাঙ্কের ক্রেডিট-কার্ড শাখায় ই-মেলে অভিযোগ জানান। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি। সৌমিত্রবাবুর ক্ষোভ, ‘‘ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ গা-ছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছেন!’’ পুলিশ দাবি করেছে, ব্যাঙ্কের জালিয়াতির ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক থেকে যথোপযুক্ত সহযোগিতা না পেলে এগোতে সমস্যা হয়। সে জন্যই সৌমিত্রবাবুকে আগে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অভিযোগ পাওয়ার পরেই তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।

সাধারণত, অন-লাইনে কেনাকাটা করতে গেলে ক্রেডি়ট কার্ডের ‘সিভিভি’-নম্বর, ‘পিন’ বা ওই নির্দিষ্ট কেনাকাটার জন্য ‘ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড’ (ওটিপি) প্রয়োজন হয়। কিন্তু সৌমিত্রবাবুর দাবি, তিনি কাউকে ‘পিন’ জানাননি। মোবাইলে ‘ওটিপি’-ও পাননি। তা হলে কেনাকাটা হল কী ভাবে?

সাইবার বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, অনলাইনে ওয়েবসাইট সার্চ করার সময়েই কোনও ভাবে সৌমিত্রবাবুর কম্পিউটারে ‘ট্রোজান’ ঢুকিয়ে দিয়েছিল হ্যাকারেরা। ‘ট্রোজান’ এমন এক ধরনের ‘কম্পিউটার প্রোগ্রাম’ (চলতি কথায় ভাইরাস), যার মাধ্যমে কম্পিউটারে থাকা তথ্য চুরি করা সম্ভব হ্যাকার বা দুষ্ট-চক্রের পক্ষে। রাজ্য পুলিশের সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞ এক অফিসার জানান, নানা ধরনের ‘ট্রোজান’ থাকে। তার মধ্যে ‘কি-লগার’ বলে এক ধরনের ‘প্রোগ্রাম’ রয়েছে। যার মাধ্যমে এ ধরনের ক্রেডিট কার্ডের যাবতীয় তথ্য, পিন—হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, কয়েকটি জালিয়াতির তদন্তে তাঁরা দেখেছেন, কিছু ওয়েবসাইটে কার্ডের নম্বর, মেয়াদ শেষের তারিখ, ‘সিভিভি’ নম্বরের মতো তথ্য দিলেই ধরে নেওয়া হয়, কার্ডটি আসল মালিকই ব্যবহার করছে। ফলে, ‘পিন’ বা ‘ওটিপি’ ছাড়াই সে সব সাইটে কেনকাটা করা সম্ভব।

পুলিশ এবং সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: ক্রে়ডিট বা ডেবিট কার্ডের তথ্য ভুল করেও কাউকে জানানো উচিত নয়। অনলাইনে কেনাকাটা করতে হলে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে ভাল মানের অ্যান্টি-ভাইরাস সফ‌্টওয়্যার ব্যবহার করা উচিত। অপরিচিত এবং সন্দেহজনক ওয়েবসাইট থেকে সাবধান থাকাই ভাল। এক পুলিশ-কর্তার কথায়, ‘‘নেট-দুনিয়ায় দুষ্কৃতীরা ওঁত পেতে রয়েছে। সুযোগ পেলেই অ্যাকাউন্ট সাফ করে দেবে ওরা।’’

west bengal online frauding
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy