পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ফের সরগরম হয়ে উঠেছে দলত্যাগ বিরোধী আইনকে কেন্দ্র করে আইনি লড়াই। সোমবার কলকাতা হাই কোর্টে এই সংক্রান্ত বিষয়ে লিখিত বক্তব্য জমা দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মূলত বিজেপির একাধিক বিধায়কের দলত্যাগের পরেও তাঁদের বিধানসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বিজেপির প্রায় আট-নয় জন বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেন। এর পরেই বিজেপি পরিষদীয় দল বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তাঁদের বিধায়ক পদ খারিজের আবেদন জানায়। অভিযোগ, স্পিকারের কাছে আবেদন করেও কোনও ফল না মেলায় বিজেপির তরফে বিষয়টি আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।
সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল কৃষ্ণনগর উত্তর আসনের বিধায়ক মুকুল রায়কে নিয়ে। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেও তাঁকে বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসসি) চেয়ারম্যান করা হয়। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধেই প্রথম কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। পরে মুকুল পদ থেকে সরে দাঁড়ালে সেই একই আসনে আরও এক দলত্যাগী বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীকে বসানো হয়। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে রায়গঞ্জ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগে তিনি বিধায়ক পদ ছেড়ে দেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এর পরও আরও এক দলত্যাগী আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালকে পিএসসির চেয়ারম্যান করা হয়।
এই ধারাবাহিক ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিজেপি বিধায়কেরা গত সাড়ে চার বছরে পিএসসির কোনও বৈঠকেই যোগ দেননি। বিরোধী দল বিজেপির অভিযোগ, দলত্যাগ বিরোধী আইনকে কার্যত অগ্রাহ্য করেই স্পিকার দলত্যাগী বিধায়কদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাচ্ছেন, যা গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী। গত সপ্তাহে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শেষ হয়। তবে আদালত আপাতত রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছে। এর মধ্যেই লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার অনুমতি দেন বিচারপতিরা। সেই নির্দেশ মেনে সোমবার হাইকোর্টে গিয়ে নিজের পক্ষের বক্তব্য লিখিত আকারে জমা দেন শুভেন্দু।
রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন, এই মামলার রায় শুধু কয়েক জন বিধায়কের ভবিষ্যৎ নয়, বরং পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করার পদ্ধতিতেও বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে আদালতের চূড়ান্ত রায় ঘোষণার দিকে এখন নজর রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির।