বেসরকারি লগ্নিসংস্থা নিয়ে সংশোধনী বিল পাশের দিন বিধানসভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তবু বৃহস্পতিবার বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের শেষ দিন চর্চায় থাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
বৃহস্পতিবার অধিবেশনের শেষ লগ্নে প্রথামাফিক ধন্যবাদজ্ঞাপন পর্বে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এসইউসি বিধায়ক তরুণ নস্করের আর্জি, সতীদাহ প্রথা রোধের বিল প্রথম এই রাজ্যের বিধানসভায় পাশ হয়েছিল বলে যে তথ্য মুখ্যমন্ত্রী সভায় দিয়েছেন, তা বিধানসভার কার্যবিবরণীতে রাখা হবে কি না, তা ভেবে দেখা হোক। তরুণবাবুর কথায়, ‘‘এ বার অধিবেশনে কিছু অনৈতিহাসিক তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, সতীদাহ প্রথা রোধের বিলের কথা বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ গবেষণার জন্য ঐতিহাসিক দলিল হিসাবে বিধানসভার নথি ব্যবহার করতে পারে। সেখানে এমন অনৈতিহাসিক তথ্য থাকা উচিত নয়।’’ অধিবেশন শেষে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে নিজের ভাষণে স্পিকার অবশ্য এ প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি।
তরুণবাবুর প্রস্তাবের সূত্রে তিনি কি কোনও পদক্ষেপ করছেন? পরে নিজের কক্ষে এই প্রশ্নের জবাবে স্পিকার বলেন, ‘‘নো কমেন্টস!’’ লগ্নিবিল নিয়ে আলোচনার সময়ে এ দিনই আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কিছু কথা বলেছিলেন। সেই প্রসঙ্গেই স্পিকারের ব্যাখ্যা, সাধারণত বিধানসভায় কেউ কিছু বললে তাঁর বক্তব্য সংশোধিত কার্যবিবরণীতে রাখার আগে তাঁকে দেখানো হয়। আইনমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যও সংশোধিত কার্যবিবরণীতে তোলার আগে তাঁর কাছে পাঠানো হবে। তৃণমূল শিবিরের একাংশের ধারণা, একই ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও সতীদাহ নিবারণী বিল সংক্রান্ত তাঁর বক্তব্যের রেকর্ড পাঠিয়ে ‘ভুল শুধরে’ দেওয়া হতে পারে।
যদিও বিধানসভার বর্ষীয়ান বিধায়কদের অনেকেরই মত, বক্তার অনুমতিক্রমে তাঁর মূল বক্তব্যের সামান্য কিছু পরিমার্জন সংশোধিত কার্যবিবরণীতে রাখা হয়েই থাকে। ছোটখাটো তথ্যগত প্রমাদও অনেক সময় শুধরে নেন বক্তারা। কিন্তু কোনও বক্তার বক্তব্যের আমূল সংশোধন করা যায় না বলেই তাঁদের মত। বরং, আপত্তিকর বা ভুল কোনও তথ্য থেকে গেলে পরে স্পিকারের অনুমতিতে তা কার্যবিবরণী থেকে বাদ (এক্সপাঞ্জ) দেওয়া যেতে পারে। শাসক দলেরই এক প্রবীণ বিধায়কের কথায়, ‘‘আমি অর্থবিল নিয়ে বিধানসভায় ভাষণ দিলাম। পরে বললাম, সংশোধিত কার্যবিবরণীতে রাখতে হবে আমি জমি বিল নিয়ে বলেছি! এমন কখনও হয়?’’
এ বার অধিবেশনের শুরুর আগে বিধানসভায় নিয়মিত মুখ্যমন্ত্রীর হাজির না থাকা এবং প্রশ্নোত্তর-পর্ব এড়িয়ে যাওয়া নিয়েই হইচই করেছিলেন বিরোধীরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এক মাসের বেশি এই অধিবেশনে কয়েক দিন উপস্থিত থেকেছেন মমতা। নিজেই এক দিন প্রশ্নোত্তরে অংশ নিয়েছেন। বিলের উপরে বক্তৃতাও করেছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনেই এ দিন অধিবেশনের শেষ পর্বে বিরোধীদের উদ্দেশে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আবেদন, ‘‘আপনারাই বলেন মুখ্যমন্ত্রী কেন আসেন না? আবার মুখ্যমন্ত্রী এলে আপনারা নিজেদের বক্তৃতা শেষ করেই বেরিয়ে যান। এটা বিসদৃশ লাগে। এটা ভেবে দেখতে অনুরোধ করব।’’ আর মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় তাঁর ধন্যবাদজ্ঞাপনে উল্লেখ করেন, এ বার অধিবেশনে ২৫৯টি প্রশ্নের জবাব পেয়েছেন বিধায়কেরা। এই সংখ্যাটি যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক বলে তিনি মন্তব্য করেন। বাম শরিক দলের নেতারা থাকলেও এ দিন সিপিএমের তরফে কেউ অধিবেশেন শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেননি। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ততক্ষণে বামফ্রন্টের বৈঠকের জন্য বিধানসভা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, শেষ দিনের অধিবেশনের প্রথম পর্বে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল টি প্ল্যান্টেশন এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার ফান্ড বিল, ২০১৫’-এ কংগ্রেসের আনা সংশোধনীতে এই প্রথম একসঙ্গে ভোট দিয়েছেন কংগ্রেস, বিজেপি ও বাম বিধায়কেরা। বিলের পূর্ণাঙ্গ বিরোধিতা করেছেন একমাত্র তরুণবাবুই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy