Advertisement
E-Paper

ঘুম ঘুচেছে সেই বাড়ি-মালিকের

বাড়ি থেকে বেরোন না বললেই চলে। বাড়ির কেউ বাইরে গেলে না ফেরা পর্যন্ত চিন্তায় থাকেন। ঘটনার পরে বছর ঘুরলেও আতঙ্ক পিছু ছাড়েনি বর্ধমানের খাগড়াগড়ের মহম্মদ হাসান চৌধুরীর। গত বছর ২ অক্টোবর তাঁর বাড়িরই দোতলায় এক বিস্ফোরণে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। আইইডি (ইম্প্রোভাইজড্‌ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) তৈরির সময়ে ফেটে গিয়ে দু’জনের মৃত্যুর পরে খোঁজ মিলেছিল এক জঙ্গি-চক্রের।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৮
খাগড়াগড়ের যে বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছিল, তার মালিক মহম্মদ হাসান চৌধুরী। — নিজস্ব চিত্র

খাগড়াগড়ের যে বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছিল, তার মালিক মহম্মদ হাসান চৌধুরী। — নিজস্ব চিত্র

বাড়ি থেকে বেরোন না বললেই চলে। বাড়ির কেউ বাইরে গেলে না ফেরা পর্যন্ত চিন্তায় থাকেন। ঘটনার পরে বছর ঘুরলেও আতঙ্ক পিছু ছাড়েনি বর্ধমানের খাগড়াগড়ের মহম্মদ হাসান চৌধুরীর।
গত বছর ২ অক্টোবর তাঁর বাড়িরই দোতলায় এক বিস্ফোরণে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। আইইডি (ইম্প্রোভাইজড্‌ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) তৈরির সময়ে ফেটে গিয়ে দু’জনের মৃত্যুর পরে খোঁজ মিলেছিল এক জঙ্গি-চক্রের। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) তদন্তে জেনেছিল, দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলা এবং অসম ও ঝাড়খণ্ডে ছড়িয়ে থাকা এই চক্রের মাথায় রয়েছে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)।
গত ৩০ মার্চ কলকাতার নগর দায়রা আদালতে ২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে এনআইএ। ঘটনার পরেই নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় বেশ কয়েক জন। পরে তাদের কেউ-কেউ ধরা পড়েছে। অনেকে এখনও অধরা। আর তাই আতঙ্কে রয়েছেন খাগড়াগড়ের বাড়ি-মালিক।
বিস্ফোরণে নিহতদের শনাক্ত করেছিলেন হাসান চৌধুরী। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, এমন দু’জন সন্দেহভাজনের পরিচয়ও পুলিশ এবং এনআইএ কর্তাদের জানান তিনি। এই চক্রের অন্যতম মাথা কওসরের ছবি আঁকতে সাহায্য করেছিলেন সিআইডি-কে। তাঁর আশঙ্কা, ‘‘ওই সব জঙ্গির অনেকে এখনও গ্রেফতার হয়নি। তারা কখন যে কী করবে, কিছু কি বলা যায়! ভাল করে ঘুমোতে পারি না। রাস্তায় বেরোতে ভয় হয়। নাতনিরা স্কুল থেকে না ফেরা পর্যন্ত আতঙ্কে থাকি।” তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা চৌধুরীও বলেন, “এক ধরনের ভয়ে কুঁকড়ে থাকি। নানা অসুখেও ভুগতে শুরু করেছি। ভাল করে কথাও বলতে পারি না।”
হাসান চৌধুরী নিজে থাকেন ওই বাড়িটির উল্টো দিকে পুরনো বাড়িতে। নতুন বাড়িটি ভাড়া দিতেন তিনি। বৃদ্ধ বাড়ি-মালিক জানান, ঘটনার মাস চারেক আগে শাকিল গাজি এসে বাড়ি ভাড়া নিতে চায়। পরে পরিচয়পত্র দেবে বলে জানিয়েছিল সে। শাকিল ও তার স্ত্রী রাজিয়া, আব্দুল হাকিম ও তার স্ত্রী আলিমা থাকতে শুরু করে। সঙ্গে ছিল দুই দম্পতির দু’টি শিশুসন্তান। তারা কাপড়ের ব্যবসা করে বলে দাবি করেছিল। গোড়ায় কিছু দিন কওসর, পরে সুবহান মণ্ডল সেখানে থাকছিল।

হাসান চৌধুরীর কথায়, ‘‘সে দিন দুপুরে বাড়ির সামনে বারান্দায় বসেছিলাম। এমন সময়ে বিকট শব্দ শুনে রাস্তায় বেরোই। দেখি, উল্টো দিকে আমার বাড়িটির দোতলার জানালা দিয়েই ধোঁয়া বেরোচ্ছে। লোক জমে যায়। কিন্তু উপরের কারও কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে দমকলে খবর দিই।’’ তিনি জানান, দমকল কর্মীরা দোতলায় গিয়ে ডাকাডাকি করলে রাজিয়া ও আলিমা গ্রিলের ভিতর থেকে জানান, বাড়িতে কোনও পুরুষ নেই। তাই কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। অথচ, তখন পাইপ দিয়ে রক্তমাখা জল এসে নর্দমায় পড়ছিল।

হাসান চৌধুরী বলেন, ‘‘ততক্ষণে পুলিশও এসে গিয়েছে। আমি গ্রিল ভাঙতে বলি।’’ ভিতরে ঢুকে পুলিশ দেখেছিল, দু’জনের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। এক জন রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছে। দুই মহিলা চাদরে মুড়ে দেহ লুকনোর চেষ্টা করছিল। তার পরে যা যা ঘটেছিল, তা দুঃস্বপ্নের মতো বলে জানান হাসান। তাঁর কথায়, ‘‘১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে ছিলাম। সিআইডি-র পরে এনআইএ-র জেরা। সেই অভিজ্ঞতা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।”

খাগড়াগড়ের ওই বাড়ি এখনও ‘সিল’ করা। দোতলার জানলার কাচ ভেঙে পড়েছে। বাড়ির একতলায় যে সব দোকানঘর ভাড়া দেওয়া ছিল, সেগুলিও বন্ধ। হাসান চৌধুরী বলেন, “এক বছর ধরে সব তালাবন্ধ। এনআইএ সিল করে দিয়েছে। ওই বাড়ির একতলায় একটি ঘরে আমার ছেলে ডাক্তারি করত। তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের আয় কমেছে। আর্থিক অনটনও হচ্ছে।”

হাসান চৌধুরী বলেন, ‘‘ঘটনার দিন সকালে ভাড়ার টাকা দিতে এসেছিল শাকিল। আমি ভাড়া না নিয়ে কাগজপত্র এনে চুক্তি করার জন্য চাপ দিয়েছিলাম। তা না হলে বকরি ইদের পরে চলে যেতেও বলেছিলাম।” তাঁর আফশোস, ‘‘কেন যে ভাড়া দিয়েছিলাম! না দিলে তো এই মুশকিলে পড়তে হতো না!’’

soumen dutta khagragarh blast khagragarh blast house panicked owner khagragarh house woner
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy