জখমকে উদ্ধার করে আনছেন ওয়েনাড়ের কালপেট্টা রেঞ্জের বন্যাধিকারিকেরা। ছবি: সমাজমাধ্যম।
দুনিয়ায় সব চেয়ে ভারী বোঝা কী? ‘শোলে’র ইমাম সাহেব (অভিনয়ে এ কে হাঙ্গল) বলেছিলেন, বাবার কাঁধে সন্তানের মৃতদেহের চেয়ে ভারী আর কিছু হয় না। ভূমিধসের ধাক্কায় জীবন এ-ফোঁড় ও-ফোঁড় হয়ে গিয়ে ওয়েনাড়ের পি রামস্বামী বুঝলেন, বোঝা তার চেয়েও ভারী হতে পারে!
ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া বহু দেহের এখন সৎকার চলছে কেরলের ওয়েনাড়ে। মেপ্পাডিতে তেমনই এক চিতায় সাদা কাপড়ে মোড়া একটি হাতে অগ্নিসংযোগ করেছেন রামস্বামী। চালিয়ার নদী ওই একটা হাতই ফিরিয়ে দিয়েছিল। হাতের আঙুলে তখনও লেগে থাকা আংটিতে লেখা ছিল জীবনসঙ্গীর নামটা। হাত দেখেই মেয়ে জিশার পরিণতি আঁচ করতে হয়েছে রামস্বামীকে। যে হাত ধরে মেয়েকে এক দিন হাঁটতে শিখিয়েছিলেন, পরে যে হাত মেয়ের পছন্দের জীবনসঙ্গীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন, সেই দেহাংশটুকুই মেয়ের শেষ নশ্বর চিহ্ন হিসেবে আগুনে পুড়েছে। গ্লাভস পরা হাতে মুখ ঢেকে কেঁদেছেন রামস্বামী। তাঁর স্ত্রী এবং জামাই মুরুগান এখনও নিখোঁজ। আর দু’দিন আগেই একমাত্র নাতি, ছোট্ট অক্ষয়কে সমাহিত করে এসেছেন। এখন কেবলই মনে হচ্ছে, তাঁকে প্রকৃতি ছেড়ে দিল কেন?
ওয়েনাড়ের কংগ্রেস কর্মী আপ্পাচানের কথায়, “উদ্ধারকারীদের ধারণা, রামস্বামীর মেয়ে জিশা সম্ভবত কোনও পাথরের খাঁজ বা শক্ত কিছু আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন। সম্ভবত প্রবল ধাক্কায় শেষ পর্যন্ত হাতটা শরীর থেকে বিছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।” তাঁর মন্তব্য, “এক একটা পরিবারের উপর দিয়ে কী যে গিয়েছে, চোখে দেখা যায় না!”
উদ্ধার হওয়া দেহ বেশি দিন রেখে দেওয়ার পরিস্থিতি নেই, মনে করছে প্রশাসন। ওয়েনাড়ের জেলাশাসক মেঘাশ্রী জানান, অশনাক্ত দেহের জন্য তাঁরা পুতুমালায় গণ-কবরের ব্যবস্থা করছেন। এখনও পর্যন্ত তার মধ্যে ২৯টা দেহ এবং ৮৫টা দেহাংশ আছে। এক অসহায় পিতা মেয়ের হাত চিনে নিলেও অনেকেই ‘বেওয়ারিশ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy