Advertisement
E-Paper

বেড়ানোটা এত আতঙ্কের হবে ভাবেনি শ্রেষ্ঠা

শনিবার দুপুরে রান্না করার সময় মাথাটা ঘুরে গিয়েছিল বিজলিদেবীর। ঘরের আবসাবপত্রের কাঁপন দেখে বুঝে যান ভূমিকম্প হচ্ছে। পরক্ষণেই একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে স্বামীর মোবাইলে ক্রমাগত ফোন লাগাতে থাকেন। কিন্তু ফোন লাগছিল না। ততক্ষণে টিভিতে নেপালে ভূমিকম্পের খবর দেখাতে শুরু করেছে। কয়েক বারের চেষ্টায় স্বামীকে ফোনে ধরতে পারেন বিজলিদেবী। ফোনের ও-প্রান্তে থাকা তাঁর স্বামী পেশায় অরণ্যশহরের একটি ভ্রমণ সংস্থার মালিক কুন্তল দে জানান, তাঁরা নিরাপদে রয়েছেন।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৯

শনিবার দুপুরে রান্না করার সময় মাথাটা ঘুরে গিয়েছিল বিজলিদেবীর। ঘরের আবসাবপত্রের কাঁপন দেখে বুঝে যান ভূমিকম্প হচ্ছে। পরক্ষণেই একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে স্বামীর মোবাইলে ক্রমাগত ফোন লাগাতে থাকেন। কিন্তু ফোন লাগছিল না। ততক্ষণে টিভিতে নেপালে ভূমিকম্পের খবর দেখাতে শুরু করেছে। কয়েক বারের চেষ্টায় স্বামীকে ফোনে ধরতে পারেন বিজলিদেবী। ফোনের ও-প্রান্তে থাকা তাঁর স্বামী পেশায় অরণ্যশহরের একটি ভ্রমণ সংস্থার মালিক কুন্তল দে জানান, তাঁরা নিরাপদে রয়েছেন। নেপালের পোখরা থেকে তানসেন যাওয়ার পথে পাহাড়ের উপর থেকে পাথর গড়িয়ে পড়তে দেখেছেন কুন্তলবাবুরা। দেখেছেন বিদ্যুৎস্তম্ভ হেলে পড়তে। কালিগণ্ডকী সেতুর কাছাকাছি পৌঁছে গাড়ি থামিয়ে তাঁরা বুঝতে পারেন নেপালের মাটি কাঁপছে। রবিবার নেপাল থেকে ফোনে কুন্তলবাবু বলেন, “শনিবার স্ত্রীর ফোন পাওয়ার পরে বুঝতে পারি, কাঁপনের রেশ ছড়িয়েছে কলকাতা ও ঝাড়গ্রামে, পরিজনদের মধ্যেও। সবাইকে নিয়ে নিরাপদে না ফেরা পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হতে পারছি না।” নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না বিজলিদেবীর পাশাপাশি, পর্যটকদের পরিজনরাও।

কুন্তলবাবুর ভ্রমণ সংস্থাটি বছরভর বিভিন্ন জায়গায় বেড়ানোর ব্যবস্থা করে থাকে। কুন্তলবাবু নিজে পর্যটকদের নিয়ে যান। এবার ১৮ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল নেপাল ট্রিপ-এ ঝাড়গ্রামের পাশাপাশি কলকাতার কয়েকজনও কুন্তলবাবুর সঙ্গে নেপাল বেড়াতে গিয়েছেন। তেইশ জনের দলটিতে কুন্তলবাবু ও তাঁর সংস্থার তিনজন কর্মী-সহ ঝাড়গ্রামের চোদ্দ জন রয়েছেন। বাকিরা কলকাতার। অন্যান্য বার স্বামীর সফর-সঙ্গী হন বিজলিদেবী। এবার শারীরিক অসুস্থতার জন্য শেষ মুহূর্তে যাওয়া বাতিল করেন তিনি। রবিবার বিজলিদেবী বলেন, “সঙ্গে থাকলে ওদের সঙ্গে আতঙ্কটা ভাগাভাগি করে নিতে পারতাম। ঝাড়গ্রামের বাড়িতে বসে টিভিতে নেপালের খবর দেখে নানা রকম দুশ্চিন্তা হচ্ছে। ওরা না ফেরা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না।”

ঝাড়গ্রামের পর্যটকদলে থাকা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী নির্মল কুণ্ডু ও তাঁর স্ত্রী প্রতিমা কুণ্ডু বছরে একাধিক বার বেড়ানে যান। এবারও তাঁরা কুন্তলবাবুর সঙ্গে নেপালে গিয়েছেন। নির্মলবাবুর ছেলে রজত কুণ্ডু বলেন, “আমরা ভীষণই উদ্বিগ্ন। কুন্তলবাবুর ফোনে বার কয়েক বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওরা ভাল আছেন। কিন্তু ওখানে শনিবার সন্ধ্যে ও রাতে এবং রবিবার ভোরেও ভূকম্পন হয়েছে শুনলাম। এদিন দুপুরে ফের ভূমিকম্প হওয়ার পর বড্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছে।”

ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা রেণু সিংহও এবার প্রাক্তন সহকর্মী ও পরিচিতজনের সঙ্গে নেপাল ভ্রমণের দলে রয়েছেন। রবিবার সন্ধ্যায় অরণ্যশহরের তেঁতুলতলার বাড়িতে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে রেণুদেবীর ছেলে পেশায় শিক্ষক দেবজ্যোতি সিংহ বলেন, “দুপুরে কুন্তবাবুর ফোনে মায়ের কথা হয়েছে। তারপর আর ফোন লাগছে না। মা সুস্থ অবস্থায় তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরুন, এটাই আমাদের একমাত্র প্রার্থনা।”

মেয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে সপরিবারে ছুটি কাটাতে নেপালে গিয়েছেন ঝাড়গ্রামের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী অমিতাভ বসু মল্লিক। অমিতাভবাবুর বোন অরণ্যশহরের ঘোড়াধরার বাসিন্দা মালবিকা দাস বলেন, শনিবার টিভি দেখার পর থেকে অনেক চেষ্টা করেও দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি নি। শনিবার বিকেলে অবশেষে ফোনে দাদার সঙ্গে কথা হয়। রবিবার দাদা মোবাইলে মেসেজ করে জানিয়েছে, ওরা বিহার সীমান্তের কাছে রয়েছে। সোমবার গোরক্ষপুর থেকে খড়্গপুরের ট্রেন ধরবে সবাই। এটা জেনে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি।” নেপাল থেকে ফোনে রবিবার অমিতাভবাবু বলেন, “বেড়ানোর শেষ পর্বে ভূমিকম্পের জেরে আনন্দটাই মাটি হয়ে গেল। ২৭ তারিখ সোমবার গোরক্ষপুর এক্সপ্রেসে সবারই ফেরার অগ্রিম রিজার্ভেশন করা আছে। তাই আমরা তাড়াহুড়ো করে ফেরার ঝুঁকি নিই নি।” অমিতাভবাবুর মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শ্রেষ্ঠা বলে, “বেড়াতে এসে এমন আতঙ্কের অভিজ্ঞতা হবে, সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি। কেবলই মনে হচ্ছে মাটি যেন দুলছে।”

panic attack earthquake Nepal Jhargram kolkata Kingsuk Gupta Madhyamik examination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy