মঙ্গলবার পানিহাটির পুরপ্রধান মলয় রায় নিজেই ঘোষণা করেছিলেন, তিনি ইস্তফা দেবেন। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পদ ছাড়েননি। বরং চিঠি দিয়ে নিজের অবস্থান জানালেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ফলে তাঁর ইস্তফা নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে পানিহাটিতে।
মলয়ের ভূমিকা নিয়ে পানিহাটির ওয়ার্ডগুলিতে প্রশ্ন উঠেছিল আগেই। তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে ওই পুরসভার কাউন্সিলরেরা দলীয় নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছিলেন। নাগরিক পরিষেবা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে পানিহাটি পুরসভার ভূমিকায় বিতর্ক দানা বাঁধছিল। সম্প্রতি স্থানীয় অমরাবতী মাঠের বড় অংশ আবাসন প্রকল্পের জন্য বিক্রির পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আসে। শেষে মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। প্রায় ৮৫ বিঘার ওই মাঠ অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। এ ছাড়া, পুরসভার ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে চাঁদা তোলার অভিযোগও উঠেছে মলয়ের বিরুদ্ধে। বিতর্কের মাঝে শনিবার তৃণমূলের শীর্ষ স্তর থেকে মলয়কে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ইস্তফা দিতে রাজি হননি তিনি।
আরও পড়ুন:
মঙ্গলবার বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্যসচেতক তথা পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষের ঘর থেকে মলয়কে ফোন করে ইস্তফা দিতে বলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তার পর রাতে ফিরহাদের চেতলার বাড়িতে গিয়ে বৈঠক করেছিলেন মলয়। সেখান থেকেই বলেছিলেন, ‘‘দলের সর্বোচ্চ নেত্রী যখন বলেই দিয়েছেন, তখন স্বাভাবিক ভাবেই আমাকে তাঁর নির্দেশ পালন করতে হবে। মন্ত্রীকে পদত্যাগপত্র দিয়েছি। এসডিও-কেও পাঠিয়ে দেব (পদত্যাগপত্র)।’’ সূত্রের খবর, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর পদত্যাগপত্র মহকুমাশাসকের কাছে জমা পড়েনি।
এ বিষয়ে মলয়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, তিনি মমতাকে চিঠি দিয়ে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মলয়ের কথায়, ‘‘যখন বলার মতো কিছু হবে, আমি নিজেই সেটা জানাব। এখনও কিছু বলার মতো সময় আসেনি।”
পানিহাটি পুরসভার অধীনে মোট ৩৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, গত বছর মলয়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে তৃণমূলের শীর্ষ স্তরে চিঠি দিয়েছিলেন ৩২ জন কাউন্সিলর। পুরসভার বেহাল অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল ওই চিঠিতে। পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষও সেই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মমতা সে বার মলয়ের পদত্যাগ আটকে দেন। বিধায়ক নির্মলকে ডেকে তিনি মলয়কে না-সরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে এ বার মমতা নিজেই মলয়ের ইস্তফার পক্ষে। তিনি পদত্যাগ করলে পুরসভার দায়িত্ব কে পাবেন, তা নিয়েও জল্পনা চলছে।