কাজ করতে গেলে ভুল-ত্রুটি হয়— সরকারের ডেঙ্গি মোকাবিলা প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার এমনই মন্তব্য করলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
রাজ্য সরকার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বলে ইতিমধ্যেই বিরোধীরা সরব। জেলায় জেলায় ডেঙ্গিতে মৃত্যুর মিছিল হওয়া সত্ত্বেও তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা সরকার করছে বলে তাদের অভিযোগ। এমনকী, চিকিৎসকেরা যাতে ডেথ সার্টিফিকেটে ‘ডেঙ্গি’ না লেখেন, বিভিন্ন ল্যাবরেটরি যাতে রক্ত পরীক্ষায় ‘ডেঙ্গি’ উল্লেখ না করে, সে জন্য সরকারের তরফে ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এই আবহে প্রবীণ মন্ত্রী এবং তৃণমূলের শীর্ষ নেতা পার্থবাবুর মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে অনেকে মনে করছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, পার্থবাবু কি কার্যত সরকারের ‘ভুল’ স্বীকার করে নিলেন? পরে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মন্ত্রী অবশ্য বলেন, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ে সরকারের কোনও ভুল নেই। সরকার ডেঙ্গি নিয়ে যথেষ্ট তৎপর। আর যে কাজ করে, তার কাজ নিয়েই কথা হয়।’’ তা হলে ‘ভুল’-এর কথা উঠছে কেন? পার্থবাবুর জবাব, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তো বলেন, যে কাজ করে, তার ভুল হয়। যে কাজ করে না, তার ভুলও হয় না। আমি সাধারণ ভাবে সেটাই বলেছি। ডেঙ্গি নিয়ে নয়।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই পার্থবাবুর আরও সংযোজন, ডেঙ্গি মোকাবিলায় সরকার যা করণীয়, তা করছে। কিন্তু যত না রোগ ছড়াচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ‘উদ্বেগ’ দেখানো হচ্ছে!
বিরোধী কংগ্রেস, বাম এবং বিজেপি নেতারা অবশ্যই পার্থবাবুর পরবর্তী ব্যাখ্যা মাননে নারাজ! তাঁদের কটাক্ষ, মুখ্যমন্ত্রী যে হেতু অন্য রাজ্যের চেয়ে তাঁর রাজ্যে কত কম মানুষ মারা গিয়েছেন, তা-ই দেখাতে ব্যস্ত, তাই দোষ-ত্রুটির কথা বলে ফেলেও গিলে ফেলতে হচ্ছে পার্থবাবুকে। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে গিয়ে এ দিনই প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব ডেঙ্গির কারণে স্বাস্থ্যে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। রাজ্যপালের কাছে তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার তথ্য আড়াল করছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গই ভূ-ভারতে একমাত্র রাজ্য যেখানে সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের বলে দিচ্ছেন, কোন পরীক্ষা করলে ডেঙ্গি বলা যাবে, রোগ ধরা পড়লে কী করতে হবে!’’
রাজ্য বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এ দিন ক্যানিংয়ে অভিযোগ করেছেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে প্রতিদিন ডেঙ্গিতে মানুষ মারা যাচ্ছেন। অথচ দিদি ডেঙ্গি বলতে নারাজ! ইতিমধ্যে পাঁচশো মানুষ মারা গেছেন! রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।’’ বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের কটাক্ষ, ‘‘মশারা কি মুখ্যমন্ত্রীর ভাই-বোন যে, মশার কামড়ে ডেঙ্গি হলে তা লেখা যাবে না? আপনি সামলাতে না পারলে কেন্দ্রীয় সাহায্য তো চাইতে পারতেন!’’ মশার আঁতুড়ঘর বিক্রমগড় ঝিল সংস্কারের দাবিতে এ দিন সাউথ সিটির কাছে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি-র রাজ্যসভা সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় এবং দলের কর্মীরা। কলকাতা পুরসভায় বিক্ষোভ ছিল বামেদের। পুর কমিশনার দাবিপত্র নিতে অস্বীকার করায় বামেরা তা নিয়েও প্রতিবাদ জানায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy