Advertisement
০৫ মে ২০২৪
partha chatterjee

SSC recruitment scam: চাকরি করে দিতে টাকা তুলেছিলেন ছেলে, জনে জনে মেটাচ্ছেন পার্থ-ঘনিষ্ঠের বৃদ্ধ বাবা

‘পার্থ ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত ছিলেন নান্টু। তাঁর বাবা চাঁদহরির দাবি, ছেলের মৃত্যুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জনের টাকা ফেরত দিয়েছেন তিনি।

নান্টু প্রধানের বাবা চাঁদহরি প্রধান

নান্টু প্রধানের বাবা চাঁদহরি প্রধান

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভগবানপুর শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২২ ১৯:২৮
Share: Save:

কারও থেকে ৫০ হাজার, কারও থেকে আবার পাঁচ লাখ। বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ছেলে! সেই ছেলের মৃত্যুর পর চাকরিপ্রার্থীদের থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে ষাটোর্ধ্ব বাবাকে। যাঁরা টাকা ফেরত পাচ্ছেন তাঁরা স্বাভাবিক ভাবেই খুশি। সেই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, ‘‘ছেলের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছেন বৃদ্ধ বাবা।’’

এসএসসি দুর্নীতি-কাণ্ডে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার এবং তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ মডেল-অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বিভিন্ন ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি উদ্ধার হওয়া নিয়ে শোরগোলের আবহে রাজনৈতিক মহলের আলোচনায় উঠে এলেন ২০১৮ সালে মৃত ভগবানপুরের তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধান। তিনি খুন হয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত ছিলেন নান্টু। তাঁর বাবা চাঁদহরির দাবি, ছেলের মৃত্যুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জনের টাকা ফেরত দিয়েছেন তিনি। চাকরিপ্রার্থীদের টাকা ফেরাতে গিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়েছে তাঁকে। বাকিদের টাকাও তিনি ফিরিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন চাঁদহরি।

শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘কেলেঙ্কারি’র অভিযোগে পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই ওই দুর্নীতির শিকড় কতটা গভীরে, তা খুঁজে বার করতে মরিয়া তদন্তকারীরা। সেই সূত্রেই ভগবানপুরের এক সময়ের দাপুটে নেতা নান্টুর নাম নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, রাজ্যে পালাবদলের পর শাসকদলের হাত ধরে নান্টুর সম্পত্তি বাড়তে শুরু করে। নান্টুর বেশ কয়েকটি মাছের ভেড়ি রয়েছে। নিজের উদ্যোগে একটি বিএড কলেজও বানান। সেই কলেজের সামনে গাঁধীজির মূর্তির উদ্বোধক ছিলেন মন্ত্রী পার্থ।

নান্টুর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ আগেই উঠেছিল। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থের সঙ্গে তাঁর ভাল সম্পর্ক ছিল। সেই প্রভাব খাটিয়ে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন জনের থেকে টাকা নিতেন নান্টু। পার্থের সঙ্গে ছেলের যোগাযোগের বিষয়ে চাঁদহরি বলেন, ‘‘শুনেছিলাম, ছেলের সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সরাসরি যোগ ছিল। নান্টুর আয়োজিত একটা অনুষ্ঠানে পার্থের আসার কথাও ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত পার্থ আসেননি ওই অনুষ্ঠানে।’’

প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে তৃণমূলের টিকিটে জিতে মহম্মদপুর-১ পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েছিলেন চাঁদহরি। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন তিনি। স্থানীয়দের দাবি, রাজ্যে তৃণমূল জমানা শুরু হওয়ার পর থেকেই মহম্মদপুরে দাপট বাড়তে থাকে প্রধান পরিবারের। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হন নান্টু। স্ত্রী অপর্ণাও পঞ্চায়েত প্রধান হয়েছিলেন। নান্টুর ভাই পিন্টু ভগবানপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ এবং নান্টুর শাশুড়িও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। ক্ষমতাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নান্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকাও বাড়ছিল। পঞ্চায়েতে দুর্নীতি, তোলাবাজি, সেচ দফতরের আধিকারিকদের মারধর, কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদী সংস্কারের কাজ আটকে দেওয়া, বেনামে ঠিকাদারি— নানা অভিযোগ উঠেছিল নান্টুর বিরুদ্ধে।

নান্টু প্রধান

নান্টু প্রধান

২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় নান্টুর। পরিবারের দাবি, মাছের ভেরি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে নান্টুকে খুন হতে হয়েছে। চাঁদহরি বলেন, ‘‘ছেলের মৃত্যুর পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জনের টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি। কেউ ৫০ হাজার। কেউ ৫ লাখ টাকা পেতেন। ধীরে ধীরে তাঁদের টাকা ফেরাচ্ছি। শেষ কয়েক বছর ছেলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল না। ওঁর মৃত্যুর পর আবার ওঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয়। এর পরেই চাকরিপ্রার্থীরা টাকা ফেরত চেয়ে ঝামেলা শুরু করেন। সেই চাপ আমার উপরই আসে।’’

যদিও বিজেপির অভিযোগ, নান্টু যাঁদের থেকে টাকা নিয়েছেন, তাঁদের সকলে এখনও টাকা ফেরত পাননি। টাকা ফেরতের জন্য ঝামেলা করেছেন আর যাঁদের নাম নান্টুর খাতায় ছিল, শুধু তাঁদেরই টাকা ফিরিয়েছেন চাঁদহরি। বিজেপি নেতা গৌতম গুছাইতের দাবি, “নান্টু প্রধানের হাত ধরে জেলার হাজারের বেশি যুবক-যুবতী শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি পেয়েছেন। অনেকে আবার চাকরি পাননি। টাকা ফেরতের জন্য তাঁরা ঝামেলা করছিলেন। এমন ৫০০ থেকে ৬০০ জনের টাকা মিটিয়েছেন চাঁদহরি। নান্টুর খাতায় লেখা নাম ধরেই টাকা ফেরানো হচ্ছে। যাঁদের নাম লেখা নেই, তাঁরা ফেরত পাননি।”

নান্টু প্রসঙ্গে তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান অভিজিৎ দাসের দাবি, “নান্টু প্রধান কী করেছেন তা সম্পূর্ণ ভাবে তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। তৃণমূল দল এর জন্য কোনও ভাবেই দায়ী নয়। তা ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরেই ওই পরিবারের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।” এরই পাশাপাশি অভিজিতের যুক্তি, “নান্টু প্রধানের বাবা অসুস্থ বলে শুনেছি। উনি ভুলভাল বকছেন এখন। কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন আর কাকে ফেরত দিচ্ছেন সেটা নিয়ে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।”

তবে চাঁদহরি আগেই জানিয়েছেন, ছেলে কত জনকে চাকরি দিয়েছেন আর কত জনকে দিতে পারেনি, সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি বলেন, এখনও কিছু লোকের টাকা ফেরানো বাকি। সম্পত্তি বেচে ওই টাকা মেটাবেন তিনি। চাঁদহরির কথায়, “ছেলের বাড়িতে যা টাকা ছিল, সেই টাকা দিয়েই আপাতত দেনা মেটাচ্ছি। আরও যা সম্পত্তি রয়েছে, তা বেচতে হবে। যাঁরা এখনও টাকা পাননি, তাঁদের টাকাও মিটিয়ে দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

partha chatterjee SSC recruitment scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE