Advertisement
E-Paper

এত কথা কীসের, সৌগতকে তিরস্কার দলের

জওহরলাল নেহরু এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে পথে নেমে প্রতিবাদে সামিল হল বামেরা। দেশ জুড়ে ঝড় উঠলেও এ রাজ্যের শাসক দল কেন এই প্রসঙ্গে নীরব, পথে নেমে সেই প্রশ্নও তুললেন বাম নেতারা। আর সেই দিনই দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়কে ফের তিরস্কার করে যাদবপুর নিয়ে নিজেদের অবস্থান বুঝিয়ে দিল তৃণমূল! সৌগতবাবু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের ভূমিকাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪০

জওহরলাল নেহরু এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে পথে নেমে প্রতিবাদে সামিল হল বামেরা। দেশ জুড়ে ঝড় উঠলেও এ রাজ্যের শাসক দল কেন এই প্রসঙ্গে নীরব, পথে নেমে সেই প্রশ্নও তুললেন বাম নেতারা। আর সেই দিনই দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়কে ফের তিরস্কার করে যাদবপুর নিয়ে নিজেদের অবস্থান বুঝিয়ে দিল তৃণমূল! সৌগতবাবু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের ভূমিকাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য দলের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেই জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

জনগণের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার দাবিতে এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের উপরে আক্রমণের প্রতিবাদে রবিবার দুপুরে ধর্মতলার সুরেন্দ্রনাথ পার্কের ভাষা উদ্যান থেকে মহাজাতি সদন পর্যন্ত বাম মিছিলে ভিড় হয়েছিল ভালই। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান সেরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ধরে যে পথে সন্ধ্যায় বাগবাজার গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সেই রাস্তাতেই কয়েক ঘণ্টা আগে মোদী-বিরোধী মিছিল নিয়ে এগিয়েছেন বাম নেতারা! বিধানসভা ভোটে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে কংগ্রেসের সঙ্গেও সমঝোতার পথে সিপিএম এগোচ্ছে বলে বামফ্রন্টের বাইরের কিছু বাম দল বেঁকে বসেছে। জেএনইউ এবং যাদবপুর নিয়ে মিছিলের অবসরে এই বাম দলগুলিকেও পাশে রাখার চেষ্টা চালিয়েছে আলিমুদ্দিন। মিছিলে এ দিন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেব, মঞ্জুকুমার মজুমদার, মনোজ ভট্টাচার্য, হাফিজ আলম সৈরানিদের পাশেই হেঁটেছেন এসইউসি-র সৌমেন বসু ও সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের পার্থ ঘোষ, কার্তিক পালেরা।

দুই বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে সাম্প্রতিক কাণ্ডের যখন প্রতিবাদ করছেন বাম নেতারা, সেই সময়েই ঘটনাপ্রবাহে নতুন মোচ়ড় এনে দিয়েছে শাসক দলের অন্দরের বিরোধ! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব ছাত্র ‘দেশ-বিরোধী’ স্লোগান দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি উপাচার্য সুরঞ্জনবাবু। সেই জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে বেনজির আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ, সিদ্ধার্থনাথ সিংহেরা। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমরা এখানে ক্ষমতায় থাকলে যাদবপুরের ভিতরে ঢুকে দিল্লির মতো কলার ধরে ওই দেশবিরোধীদের বার করতাম!’’ বামেরা যেমন এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছেন, তেমনই উপাচার্যের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগতবাবু। যা মেনে নেয়নি তৃণমূল!

তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বর্ষীয়ান সাংসদকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘‘দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলছেন, কিছু বলার থাকলে দলের মধ্যেই বলতে হবে। অথচ সৌগতবাবু বারবার প্রকাশ্যে মুখ খুলে সেই নির্দেশের অন্যথা করছেন। দলের শৃঙ্খলার প্রশ্নে এমন শিথিলতা চলতে পারে না!’’ পার্থবাবুর ব্যাখ্যা, যাদবপুর নিয়ে দমদমের সাংসদ যা বলেছেন, তা দলের বক্তব্য নয়। আবার এ দিনই দমদমে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে সৌগতবাবু যে ভাবে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুকে ‘কর্মতৎপর মন্ত্রী’ ও ‘রাজনীতির ঊর্ধ্বে কাজ করছেন’ বলে প্রশংসা করেছেন, তা-ও ভাল চোখে দেখছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব।
যদিও বিরোধীদের প্রশ্ন, বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার রক্ষা করতে যাদবপুরের উপাচার্য যে ভূমিকা নিয়েছেন, তাতে কি শাসক দলের আপত্তি আছে? তা হলে সৌগতবাবুকে এমন তিরস্কার কেন?

নেতাজি ইন্ডোরে গোটা দলের নেতা-কর্মীদের সামনে ১২ ফেব্রুয়ারি সৌগতবাবুকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন স্বয়ং মমতা। এ বার ফের দলের ভর্ৎসনার মুখে পড়ে এই শিক্ষক-নেতা অবশ্য মত বদলাননি। পরে যোগাযোগ করা হলে তাঁর বক্তব্য, ‘‘দলের তরফে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আমি বলেছিলাম, উপাচার্য ভারসাম্য রেখে কাজ করেছেন। তাঁর ভূমিকা সমর্থনযোগ্য। এই নিয়ে আর কিছু বলার নেই।’’ এখন তাঁর ওই মন্তব্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রশ্ন নেই বলেও বুঝিয়ে দিয়েছেন সৌগতবাবু।

স্বভাবতই এ সবের জেরে বিজেপি-তৃণমূলকে একসঙ্গে বিঁধছে বামেরা। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবু যেমন বলেছেন, ‘‘বিজেপি-র জুতোয় পা গলিয়েছে তৃণমূল! দু’টো দলই স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করতে চায়। দু’দলেরই মনোভাব, সরকার যখন টাকা দিচ্ছে, তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করতেই পারি!’’ টুইটে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবুর মন্তব্য, ‘‘যারা কলার ধরতে চায়, ধরুক! কী ভাবে তাদের জবাব দিতে হয়, বাংলার মানুষ জানেন! কিন্তু সবাই যখন যে যার মতো প্রতিবাদ করছে, মুখ্যমন্ত্রীর দল একমাত্র ব্যতিক্রম!’’

MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy