E-Paper

ডেঙ্গিতে ফের মৃত তিন, ওয়ার্ডে মৃত্যু জানেনই না কাউন্সিলর

দক্ষিণ দমদম পুর এলাকায় ডেঙ্গিতে ৫ জন এবং ৩ জন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। পর পর মৃত্যুর ঘটনায় পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৬০০ পার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:২৫
Dengue Patient

ডেঙ্গির সংক্রমণ মাত্রাছাড়া রাজ্যে। ছবি: পিটিআই।

ডেঙ্গিতে একের পর এক মৃত্যু হচ্ছে কলকাতায়। অথচ, সেই পরিস্থিতিতে নিজের এলাকায় না থেকে কলকাতা পুরসভার শাসক দলের অধিকাংশ কাউন্সিলরই দিল্লিতে রাজনৈতিক সমাবেশে গিয়ে বসে রয়েছেন। নিজের ওয়ার্ডে ডেঙ্গিতে এক বৃদ্ধের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের জবাব, তিনি কিছু জানেন না। কারণ দিল্লিতে আছেন! সব দেখে শুনে বিরোধী শিবিরের একাংশ বলছেন, ‘ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা কত বাড়ল, সেটা অপ্রয়োজনীয়। বরং নিজেদের নম্বর বাড়াতে শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরা এখন দিল্লির ময়দানে হাজিরা দিচ্ছেন।’

জানা যাচ্ছে, সোমবার কলকাতা, দক্ষিণ দমদম, মুর্শিদাবাদের তিন জন বাসিন্দার ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জন তেত্রিশ বছরের যুবক রয়েছেন। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনও পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও, বেসরকারি সূত্রের খবর, গত জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা অন্তত ৫১। তার মধ্যে গত ২২ জুলাই থেকে শহর কলকাতায় ডেঙ্গিতে মোট ১১ জন মারা গেলেন। মৃতদের মধ্যে ন’জনই দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা।

সোমবার রাতে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন কলকাতা পুরসভার ১২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা পরেশ সাউ (৬৩)। ওই ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি ছন্দা সরকার বলেন, "আমি কিছু জানি না। দিল্লিতে রয়েছি।’’ পাশের ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ঘনশ্রী বাগও দিল্লিতে। তবে তিনি বলেন, ‘‘ঠাকুরপুকুরের বাছারপাড়ার ওই বৃদ্ধ বাড়িতে অসুস্থ ছিলেন। জ্বর আসায় তিন দিন আগে টালিগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।’’

১২৫ নম্বর ওয়ার্ড কলকাতা পুরসভার ১৬ নম্বর বরো এলাকায়। এই বরোর সাতটি ওয়ার্ড রয়েছে। তার মধ্যে চারটি ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি দিল্লিতে দলীয় কর্মসূচিতে রয়েছেন। ১৬ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুদীপ পোল্লেও দিল্লিতে। তাঁর কথায়, ‘‘দিল্লিতে থাকার সঙ্গে ডেঙ্গির সম্পর্ক ভর্তি করা হয়েছিল। পরিবার জানাচ্ছে, ১৯ সেপ্টেম্বর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। পর দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আচমকা অবস্থার অবনতি হওয়ায় ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। তাঁর কোমর্বিডিটি ছিল। মেয়ে লাভলীনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "আমিও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলাম। কিন্তু মা আর ধকল নিতে পারলেন না।"

এই নিয়ে দক্ষিণ দমদম পুর এলাকায় ডেঙ্গিতে ৫ জন এবং ৩ জন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। পর পর মৃত্যুর ঘটনায় পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৬০০ পার। যদিও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ মানতে নারাজ কৃষ্ণপদ দত্ত। তাঁর দাবি, মশা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত জোর কদমে কাজ হচ্ছে।

আবার, সোমবার রাতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বড়ঞা ব্লকের সুদাম ঘোষের (৩৩)। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অমিত কুমার দাঁ বলেন, “কান্দি মহকুমা হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর আমাদের হাসপাতালে এসেছিলেন। তাঁর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট এবং ভেন্টিলেশনে দিয়েও শেষ রক্ষা করা যায়নি। তিনি ডেঙ্গি পজিটিভ ছিলেন। এই মুহূর্তে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৬ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত ভর্তি রয়েছেন।”

এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গি নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। মামলাটি করেছেন চিকিৎসক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। তাঁর আইনজীবী শমীক বাগচী জানান, প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনমের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার মামলাটি গ্রহণ করেছে। আগামী সপ্তাহে মামলাটির শুনানি হতে পারে।

রাজ্যের অতিমাত্রায় ডেঙ্গিপ্রবণ সাতটি জেলার সঙ্গে এ দিনই বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য কর্তারা। ছিলেন পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকরাও। সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহ থেকেই রাজ্যের ১২৮টি পুরসভার ডেঙ্গি প্রবণ ওয়ার্ডগুলির তথ্য সহজে পেতে একটি অ্যাপ চালু করা হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dengue TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy