স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, সরকার চরম অর্থসঙ্কটে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে প্রতিদিন কোটি-কোটি টাকার ওষুধ ও অস্ত্রোপচারের সামগ্রী নিখরচায় জোগান দিতে তারা নাস্তানাবুদ হচ্ছে। ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থাগুলির কাছে বিপুল অর্থ বাকি পড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ক্যানসার, ডায়াবেটিসের মতো রোগের দামি ওষুধের সরবরাহ তাতে ব্যাহত হচ্ছে। অথচ ‘ফ্রি চিকিৎসা’র টানে লাফিয়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। তা ছাড়া সরকার বুঝতে পারছে, অনেক জায়গায় ওষুধের, বিশেষ করে দামি ওষুধের অপব্যবহার হচ্ছে। আবার, পর্যাপ্ত ওষুধ থাকা সত্ত্বেও ভাঁড়ার খালি দেখিয়ে নতুন করে ওষুধ চাওয়া হচ্ছে। এ ভাবে তো অনন্তকাল চলতে পারে না। তাই পুজোর ঠিক আগেই সরকারের ‘ফ্রি ড্রাগ নীতি’ আপাদমস্তক বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। এ জন্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যকে কো-চেয়ারম্যান করে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি হয়েছে। তাতে রয়েছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সৌমিত্র ঘোষ, ফার্মাকোলজির চিকিৎসক নীনা দাস, সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্সের দায়িত্বে থাকা অমিত হালদার। এই কমিটির প্রথম বৈঠক হয়েছে শনিবার।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘তামিলনাড়ুর প্রকল্পটি ভাল। ভাল জিনিস গ্রহণ করতে দোষ নেই। আমরা বিনা পয়সাতেই ওষুধ দেব, কিন্তু তার একটা সীমারেখা বা প্রোটোকল থাকা দরকার। আমাদের এখনকার ব্যবস্থাটা অনেকটা বাচ্চাদের সামনে এক ঝুড়ি আইসক্রিম রাখার মতো। কোনটা খাবে ঠিক করতে না পেরে অনেক নষ্ট করছে। আমরা এটায় রাশ টানতে চাইছি।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘একটা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজে যে ধরনের ওযুধ বা অস্ত্রোপচারের সামগ্রী প্রয়োজন, তা কোনও মহকুমা বা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দরকার হতে পারে না। একই ধরনের কাজ করে এমন একগাদা ওষুধ তালিকায় থাকার দরকার নেই। কমিটি এ সব বিবেচনা করেই নতুন নীতি ঠিক করবে।’’
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ওষুধ কেনাকাটা সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বে থাকা এক কর্তার দাবি, তামিলনাড়ুতে ‘এসেনশিয়াল ড্রাগ’-এর তালিকায় রয়েছে ৩০৫ ধরনের ওষুধ, ‘স্পেশ্যালিটি ড্রাগ’ ৪১৫টি। সব মিলিয়ে মোটামুটি ৭০০ ধরনের ওষুধ। তাতেই ওই রাজ্য ভাল ভাবে কাজ মেটাচ্ছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি তালিকায় রয়েছে ১৮০০-র মতো ওষুধ! একে ৫০০-র মধ্যে নিয়ে আসার ভাবনা চলছে। তামিলনাড়ুর তালিকায় অস্ত্রোপচারের সামগ্রী ৮৫টি। এ রাজ্যের তালিকায় ৯০০-র বেশি। ওই তালিকাও ছাঁটা হবে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘অনেক হাসপাতাল দামি ওষুধ বেশি কিনছে। ফলে অন্য জরুরি ওষুধ কিনতে পারছে না।’’ তিনি জানান, হাসপাতালগুলিতে সরবরাহের জন্য ওযুধ সংস্থাগুলিকে ৬০ দিন সময় দেওয়া হতো। নতুন নীতিতে সেই সময়ও কমবে।
তবে প্রস্তাবিত এই পরিবর্তনে খুশি নয় বেশির ভাগ ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর সংস্থাই। তাদের অভিযোগ, এর ফলে হাসপাতালে বহু ওষুধ মিলবে না, উৎকৃষ্ট মানের ওষুধও পাওয়া যাবে না। আখেরে যার ফল ভুগতে হবে দরিদ্র মানুষকে। হাসপাতালে ক্ষুব্ধ রোগীপক্ষের গোলমাল এবং হামলাও বাড়বে।