সংসদের উভয় কক্ষেই দলীয় সাংসদদের কাজকর্ম নিয়মে বাঁধল তৃণমূল। এই নিয়মে অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর বা উল্লেখ-পর্বে অংশগ্রহণ করতে দলের অনুমতি আবশ্যিক করে দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে লোকসভা ও রাজ্যসভায় দলীয় সাংসদদের শৃঙ্খলা ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয় নিয়ে বিশেষ সমস্যা তৈরি হওয়ার প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সংখ্যার বিচারে সংসদে তৃণমূলের রাজনৈতিক গুরুত্ব দেশের বেশির ভাগ আঞ্চলিক দলের থেকে বেশি। কিন্তু সেই ৪০ সাংসদ নিয়েও সাম্প্রতিক অতীতে সংসদে দল পরিচালনার প্রশ্নে মাঝেমধ্যেই এলোমেলো দেখিয়েছে তাদের। শুধু তা-ই নয়, পরিষদীয় রাজনীতিতে একাধিক বার দলের সাংসদদের ভূমিকায় রাজনৈতিক ভাবে প্রশ্নের মুখে পড়েছে তৃণমূলের অবস্থানও। সেই সূত্রেই এ বার তাঁদের নিয়মে বাঁধা হচ্ছে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে চলা সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আগে সাংসদদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে সে সম্পর্কে দলকে আগাম জানাতে হবে। তা ছাড়া, কোনও বিষয়ে সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা বা উল্লেখ করার প্রয়োজন থাকলেও সে সম্পর্কে দলের মত নিয়ে নিতে হবে। সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা তৃণমূলের লোকসভার নতুন দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের অনুমোদনই প্রয়োজন।
অধিবেশনে দলের কোন সাংসদ বক্তৃতা করবেন, তা বরাবরই সংসদীয় দল ঠিক করে। কিন্তু প্রশ্ন বা অন্যান্য বিষয়ে এই নতুন ব্যবস্থার কারণ নিয়ে দলের অন্দরে নানা ব্যাখ্যা রয়েছে। এক বর্ষীয়ান সাংসদের কথায়, “ব্যক্তিগত ভাবনায় প্রশ্ন ইত্যাদি করার কারণে গুরুতর জটিলতা তৈরি হতে পারে। এই রকম ঘটনা ঘটেছে বলেই মৌখিক ভাবে সাংসদদের কাছে এ বার এই বার্তা গিয়েছে।” তাঁর দাবি, দলের নয়া নিয়মে কোন প্রশ্ন করা প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করা যাবে। সেই সঙ্গেই অন্য যে কোনও বিষয়ে দলের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন রাখা যাবে।
এই সূত্রেই দলের একাংশ আগের লোকসভায় দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ওঠা ‘অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন’ বিতর্কের প্রসঙ্গ মনে করাচ্ছেন। সেই বিতর্কের জেরে বহিষ্কৃত মহুয়া গত নির্বাচনে জিতে ফের সাংসদও হয়েছেন। কিন্তু অল্প কিছু দিন আগে মহুয়ার বিরুদ্ধে সিবিআইকে চার্জশিট জমা দেওয়ার সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে লোকপাল। মহুয়া তাকে চ্যালেঞ্জ করলেও এই রকম বিতর্কিত পরিস্থিতি এড়িয়ে দলের রাজনৈতিক পথ মসৃণ রাখতেই নতুন নিয়ম করা হয়েছে বলে তাঁদের অভিমত। দলীয় সূত্রেই খবর, দলের এক সাংসদের প্রশ্নের জবাবে পশ্চিমবঙ্গেরই একটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনায় রাজ্যের শাসক দল হিসেবে বিব্রত হতে হয়েছিল তৃণমূলকে। এই নিয়মের পিছনে নেতৃত্বের সেই অভিজ্ঞতাও কাজ করেছে বলে ধারণা তাঁদের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)