Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Polba Accident

মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন, বদলে যায় পুলকার-চালকও

তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা জানান, এখনও কাগজ-কলমে গাড়িটির (নম্বর— ডব্লিউবি ১৫-৯০৭১) মালিক সিঙ্গুরের বাড়ুইপাড়ার বাসিন্দা রহিত কোলে।

উদ্বিগ্ন: পুলকার দুর্ঘটনায় জখম দিব্যাংশু ভগতের বাবা-মা। শনিবার এসএসকেএমে। নিজস্ব চিত্র

উদ্বিগ্ন: পুলকার দুর্ঘটনায় জখম দিব্যাংশু ভগতের বাবা-মা। শনিবার এসএসকেএমে। নিজস্ব চিত্র

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়  ও প্রকাশ পাল
পোলবা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:০৭
Share: Save:

পেরিয়ে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়। কিন্তু হুগলির পোলবায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত পুলকারটির প্রকৃত মালিক কে, শনিবার বিকেল পর্যন্ত তা পুলিশের কাছে পরিষ্কার হল না। ফলে, যে দুর্ঘটনায় একাধিক খুদে পড়ুয়ার প্রাণ সংশয় হচ্ছিল, তাতে কেউ গ্রেফতারও হয়নি। তবে, পুলকারটি পরীক্ষা করে তাজ্জব হয়ে গিয়েছে পুলিশ। তার গতি নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (স্পিড গভর্নর) তার কাটা। চারটি চাকাই ক্ষয়ে একেবারে সমান হয়ে গিয়েছে। এমনকি, শুক্রবার ওই দুর্ঘটনার আগে মাঝপথে বদলে গিয়েছিল চালকও।

তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা জানান, এখনও কাগজ-কলমে গাড়িটির (নম্বর— ডব্লিউবি ১৫-৯০৭১) মালিক সিঙ্গুরের বাড়ুইপাড়ার বাসিন্দা রহিত কোলে। রহিত অবশ্য পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, গত বছরের মার্চে তিনি গাড়িটি শেওড়াফুলি ছাতুগঞ্জের বাসিন্দা শেখ শামিম আফরোজ আখতারকে (এই যুবকের সঙ্গেই অভিভাবকদের চুক্তি হয়) বিক্রি করেন। তবে, এ সংক্রান্ত কাগজপত্র পুলিশ পায়নি। জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই গাড়ির কাগজপত্র বিধি অনুযায়ী নবীকরণই হয়নি। অর্থাৎ, গাড়িটি অবৈধ ভাবে রাস্তায় চলছিল।

তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, শুক্রবার সকালে শ্রীরামপুর থেকে বাচ্চাদের পুলকারে তোলেন শামিমই। শেওড়াফুলি হাটের কাছে তিনি পবিত্র দাসকে পুলকার চালানোর দায়িত্ব দিয়ে নেমে যান। ওই দুর্ঘটনায় পবিত্র নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাঁর লাইসেন্স এবং পুলকারের কাগজপত্র কী অবস্থায় আছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বুকাই সোরেন এ দিন পোলবা থানায় এফআইআর করেন। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, পুলকারটি প্রথমে রোড ডিভাইডারে ধাক্কা মারে। তার পরে রাস্তার পাশে সিমেন্ট বাঁধানো একটি কংক্রিটের রোড-গার্ডে ধাক্কা মারে। সেটি ধাক্কার অভিঘাতে মাটিতে মিশে যায়। শেষে নয়ানজুলিতে আছড়ে পড়ে উল্টে যায় পুলকার। হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তথাগত বসু জানান, গাড়িটির প্রকৃত মালিক কে, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। পুলকার দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশ সব পক্ষকে নিয়ে সচেতনতা শিবির করবে। এ দিন বিকেলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে যান। ওই গাড়ি এবং দুর্ঘটনাস্থল খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন তাঁরা।

‘স্পিড গভর্নর’ এমন একটি যন্ত্র, যা স্কুল-পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলকারে লাগানো হয়। সেটি লাগানো থাকলে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। কিন্তু দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটিতে সেই যন্ত্রের তার কাটা থাকায় এবং দুর্ঘটনার বহর দেখে পুলিশ মনে করছে, ওই গাড়ির গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি ছিল। না হলে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারানোর পরে আড়াইশো ফুটেরও বেশি দূরে ছিটকে গিয়ে নয়ানজুলিতে পড়ত না।

ওই গাড়িতে যে ছাত্রীর মা ছিলেন, তাঁর সঙ্গেও পুলিশ যোগাযোগের চেষ্টা করছে। বৈদ্যবাটীর বৈদ্যপাড়ায় বাড়িতে গিয়ে এ দিন ওই মহিলাকে পাওয়া যায়নি। বাড়ি তালাবন্ধ ছিল। অভিভাবকদের আবেদন, পুলকার যাতে নিয়ম মেনে চলে, পুলিশ তা নিশ্চিত করুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Polba Accident Pool Car Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE