Advertisement
E-Paper

নারদ-তদন্তে পুলিশকে চান না বিচারপতি

স্টিং অপারেশনে টাকা লেনদেনের যে-ছবি দেখানো হয়েছে, তা সত্যিই ঘটে থাকলে আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে কি না, বৃহস্পতিবার সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে। শুক্রবারেই তিনি জানালেন, নারদ নিউজের হুল অপারেশন নিয়ে আদালতের হাতে আসা তথ্যের তদন্ত হওয়া দরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০৪:১৬
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

স্টিং অপারেশনে টাকা লেনদেনের যে-ছবি দেখানো হয়েছে, তা সত্যিই ঘটে থাকলে আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে কি না, বৃহস্পতিবার সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে। শুক্রবারেই তিনি জানালেন, নারদ নিউজের হুল অপারেশন নিয়ে আদালতের হাতে আসা তথ্যের তদন্ত হওয়া দরকার।

কিন্তু তদন্ত করবে কে?

বিচারপতি মাত্রের মতে, এ ক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশ তদন্ত করলে তা যথেষ্ট হবে না। কারণ, অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে, তাঁরাই ক্ষমতায় আছেন।

নারদ স্টিং অপারেশনের ভিডিও যে-পেন ড্রাইভে রয়েছে, সেটি এখন হাইকোর্টের হেফাজতে। তার আগে ওই পেন ড্রাইভ বিকৃত করে দেওয়া অসম্ভব ছিল না বলে মন্তব্য করেছিলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) জয়ন্ত মিত্র। এ দিন নারদ মামলার শুনানিতে বিচারপতি মাত্রে প্রশ্ন তোলেন, ওই পেন ড্রাইভ বিকৃত নয় বলেই জানাচ্ছে ফরেন্সিক রিপোর্ট। তা হলে কি নারদ-কাণ্ডে ব্যবহৃত ওই পেন ড্রাইভ

যাচাই করা যায় না? ‘‘এর আগেও বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে নেতা-মন্ত্রীদের টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। কয়েক জনের শাস্তিও হয়েছে,’’ বলেন বিচারপতি।

তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার-সহ কয়েক জন সাংসদ এবং রাজ্যের এক মন্ত্রীর আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সওয়াল করেন, ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট বলছে, ভিডিও ফুটেজের ৭৩টি ফাইলের মধ্যে ৪৭টি খোলা গিয়েছে। বিচারপতি মাত্রে পাল্টা বলেন, ‘‘আমরা তো সেগুলিকে তথ্যপ্রমাণ হিসেবে দেখতেই পারি।’’

নারদ-কাণ্ডের ভিডিওয় টাকা নেওয়ার যে-ছবি দেখা গিয়েছে, তা ঘুষ নয়, চাঁদা হতে পারে বলে আগের শুনাতিতেই মন্তব্য করেছিলেন এজি। এ দিন তারই পুনরাবৃত্তি করেন কল্যাণবাবু। তা শুনে বিচারপতি মাত্রের মন্তব্য, ‘‘চাঁদা নেওয়ারও তো আইনি পদ্ধতি রয়েছে।’’

শাসক দলের কিছু সাংসদ, মন্ত্রী, নেতাকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে হুল অপারেশনের ছবিতে। তার সিবিআই তদন্ত চেয়ে একাধিক জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। সেই সব মামলার শুনানিতে এজি এ দিন জানান, সারদা কেলেঙ্কারিতে গরিবের স্বার্থ জড়িত ছিল। সেই অপরাধের মাত্রাও অনেক বড়। অপরাধ এবং বৃহত্তর ষড়যন্ত্র হয়েছিল কয়েকটি রাজ্য জুড়ে। সেই জন্যই সুপ্রিম কোর্ট সারদা-কাণ্ডের তদন্তের ভার দিয়েছে সিবিআই-কে। কিন্তু নারদ-কাণ্ডে মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়নি। টাকা নেওয়ার প্রভাব পড়েনি জনজীবনে। ওই ঘটনা আদৌ কোনও অপরাধ নয়। তাই সিবিআই-কে দিয়ে তার তদন্ত করানো যায় না।

এজি-র যুক্তি, ওই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। মামলা হয়েছে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে। শুধু খবরের ভিত্তিতে হাইকোর্ট তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে না। টাকা নেওয়ার ঘটনা আদৌ আদালতগ্রাহ্য অপরাধ কি না, প্রয়োজনে নিম্ন আদালতকে তা বিচার করার নির্দেশ দিতে পারে হাইকোর্ট। এজি জানান, তাঁর সওয়াল শেষ।

বিচারপতি মাত্রে তার পরেই বলেন, ‘‘নারদ স্টিং অপারেশনের যে-সব তথ্য আদালতের হাতে রয়েছে, সেগুলির হয় অনুসন্ধান, নয়তো তদন্ত হওয়া দরকার। প্রশ্ন হল, সেই তদন্ত কে করবে। ক্ষমতায় থাকা মানুষের বিরুদ্ধে এ রাজ্যের পুলিশ তদন্ত করলে তা যথেষ্ট হবে না। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, কেবল এ রাজ্যেই নয়, অন্য রাজ্যেও ক্ষমতাসীন দল পুলিশের উপরে প্রভাব খাটায়।’’

কল্যাণবাবুর অভিযোগ, হাইকোর্টের একাধিক নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও নারদ নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েল আদালতে হাজির হননি। বরং হলফনামা দিয়ে স্বীকার করেছেন, স্টিং অপারেশনের জন্য তিনি ভুয়ো সংস্থা খুলেছেন। সাংবাদিক হয়ে ম্যাথু বেআইনি কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করেন কল্যাণবাবু। তাঁর দাবি, স্টিং অপারেশন হয়েছে ২০১৪-য়। আর তা দেখানো হল ২০১৬ সালে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে। এটা করা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই। তিনি বলেন, ‘‘ওই টাকা নেওয়া আদালতগ্রাহ্য অপরাধ না-হলে তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজনই নেই।’’

পরবর্তী শুনানি ১২ জানুয়ারি।

Narada Sting Police Investigation Narada Case Calcutta High Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy