Advertisement
E-Paper

মা-মেয়েকে কুপিয়ে মেরে স্বপন কি বাংলাদেশে?

তোলপাড় ফেলে দেওয়া হত্যাকাণ্ড। তবে অভিযুক্ত ধরা পড়েনি এখনও। পুরনো মামলাকে নতুন করে দেখা।বাড়ির কালীপুজোয় মায়ের খাঁড়া উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আইনজীবী কাবেরী। পিছনে সহাস্য স্বপন কর্মকার।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৮ ০৩:৫৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ব্যারাকপুর কোর্টের উকিল কাবেরী দত্তদের পারিবারিক অ্যালবামে চোখ আটকে গিয়েছিল সিআইডি-অফিসারদের।

বাড়ির কালীপুজোয় মায়ের খাঁড়া উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আইনজীবী কাবেরী। পিছনে সহাস্য স্বপন কর্মকার।

খড়দহের নতুনপল্লির সেই রাতে সম্ভবত ছবিটা পাল্টে গিয়েছিল। তবে একা হাতে কাবেরী ও তাঁর মা আভারানি দত্তকে খাঁড়ার ঘায়ে কোপানো সোজা ছিল না। হতে পারে, স্বপনের হাতেই ছিল কামারের মোক্ষম এক ঘায়ের কসরত। পারিবারিক কামারশাল অবশ্য কবেই বন্ধ! তবে কাবেরীদের কালীপুজোয় পাঁঠাবলির খাঁড়াটা স্বপনই বানিয়ে দিয়েছিল। তা-বলে দু’জন মহিলার সঙ্গে একা হাতে খাঁড়াযুদ্ধ নিয়ে খটকা ছিল পুলিশের।

চল্লিশোর্ধ্ব লম্বা ভারী চেহারার কাবেরীর পাশে স্বপনকেই কিছুটা ছোটখাটো লাগত। বয়সেও সে খানিকটা বড়। কাবেরী বা তাঁর বোন করবীকে নাম ধরেই ডাকতেন স্বপন। ওঁরা বলতেন, ‘স্বপনদা, তুই’! কোর্ট কিংবা বাড়ি— সর্বত্র কাবেরীর ছায়াসঙ্গী স্বপনই। কোর্টের নানা ফাইফরমায়েশ খাটা থেকে বাড়ির বাজারহাট— ভরসা স্বপনদা। সেই স্বপনের এমন ভূমিকায় ভড়কে গিয়েছিলেন উকিলসাহেবার চেনা-জানা অনেকেই।

তার উপরে সে-বাড়িতে চার-চারটে কুকুর! স্বপন চেনা লোক ঠিকই! তা-বলে এত ধস্তাধস্তিতেও টুঁ শব্দটা করবে না কেউ? দিনটা ২০০৯ সালের ২৭ জুন। নতুনপল্লির বাড়িটায় এখন একা থাকেন কাবেরীর বোন করবী। তিনি বলছিলেন, ‘‘ওই রাতে দিদি এক মক্কেলের সঙ্গে কথা বলতে পাঠিয়েছিল আমায়। রাত সওয়া ১০টায় শেষ বার দিদির সঙ্গে কথা হয়! ব্যারাকপুরে দিদির অফিসেই রাতটা থেকে যাই।’’ করবীর ধারণা, কুকুরগুলোকে কিছু একটা খাওয়ানো হয়েছিল। দু’টো কুকুর মারা যায় এক মাসেই। বাইরে বাঁধা আরও দু’টো কুকুর সেই রাত থেকেই নিখোঁজ।

পরের দিন সকালে, পুলিশের ডাকে বাড়ি গিয়ে ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ এক ঝলক দেখেই ছিটকে যান করবী। তদন্তে যুক্ত এক দুঁদে পুলিশকর্তাও শিউরে ওঠেন, দু’টো ঘরে দু’টো দেহ প্রায় টুকরো টুকরো করে কাটা। স্বপন নিখোঁজ তখন থেকেই। তার সঙ্গে আরও কেউ ছিল, সন্দেহেই ‘কেস’ লেখে পুলিশ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আর কারও খোঁজ মেলেনি। মা-মেয়ের জোড়া খুন কেন ঘটল— তা-ও কি পরিষ্কার?

কোনও কোনও মহলে প্রণয়ঘটিত ঝামেলার কথা উঠে এলেও তা উড়িয়ে দিচ্ছেন করবী। তিনি বলছিলেন, ‘‘স্বপন দিদি-র মক্কেলদের থেকে টাকা তুলত। কয়েক বছর আগে আমার ও দিদির সঙ্গে এই নিয়ে জোর অশান্তি! ও মারতে উঠেছিল আমায়!’’ ব্যারাকপুরের দিকে কয়েকটা জমি নিয়ে মামলার জেরেও কি প্রভাবশালী কাউকে শত্রু বানিয়েছিলেন কাবেরী দত্ত? করবীর ধারণা, তারাও স্বপনকে কাজে লাগাতে পারে। খুনের সঙ্গে-সঙ্গে লোপাট কাবেরী-করবীর ২৫ ভরি সোনার গয়নাও। আলমারির পিছনে লুকনো খোপে তা কোথায় থাকত, জানা ছিল একমাত্র স্বপনেরই।

সিআইডি বলছে, চার্জশিট অনেক আগে জমা পড়লেও আসল লোকটির অভাবে মামলা শুরু করা যায়নি। সূত্রের দাবি, স্বপন বাংলাদেশের খুলনায় নতুন কামারশাল খুলেছে। তার খোঁজে ইন্টারপোলের নোটিস ছড়িয়েও সুরাহা হয়নি। একদা রাশভারী উকিল কাবেরীর বাড়িতে এখন কম্পিউটারের স্কুল। স্বপনের স্ত্রী বলছেন, ‘‘কোনও যোগাযোগ নেই। ওই খুনের তিন মাস আগেই সে বাড়ি আসা বন্ধ করে দেয়।’’

ন’বছর ধরে উধাও অভিযুক্তের অস্তিত্ব বলতে, ভাঙাচোরা চেহারার মহিলার সিঁথি ছুঁয়ে সিঁদুরের আলগা প্রলেপ। (চলবে)

Crime Murder Barrackpore CID ব্যারাকপুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy