Advertisement
E-Paper

ঘণ্টা দেড়েক কলেজের বাইরে! তার মধ্যেই কি ‘ধর্ষিতা’ হন ডাক্তারির ছাত্রী? দুর্গাপুরকে ঘিরেও চড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ

শনিবার হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার। স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’, যারা গত বছর আরজি কর আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিল।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫ ২২:০৯
এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে।

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

রাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন নির্যাতিতা ডাক্তারি পড়ুয়া। বেরিয়েছিলেন এক সহপাঠীর সঙ্গে। মাঝে ওই সহপাঠী একা ক্যাম্পাসে ফিরলেও তরুণী ফেরেনি। কিছু ক্ষণ পর সহপাঠী আবার বেরিয়ে যান ক্যাম্পাসের বাইরে। তার মিনিট চল্লিশেক পর দু’জনে আবার ফিরে আসেন ক্যাম্পাসে। দুর্গাপুরের ধর্ষণকাণ্ডে বিবৃতি দিয়ে এই তথ্য দিলেন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এই তথ্যের সূত্র ধরেই প্রশ্ন উঠছে, দু’দফায় যে দেড় ঘণ্টা সময় ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন তরুণী, তার মধ্যেই কি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে? কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ বিষয়ে কিছু জানাননি।

নির্যাতিতা পড়ুয়া নিজেই অভিযোগ করেছেন, শুক্রবার রাতে সহপাঠীর সঙ্গে কলেজের বাইরে বেরিয়ে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অভিযোগ, কয়েক জন যুবক ক্যাম্পাসের বাইরে তরুণীকে হেনস্থা করেন প্রথমে। তার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয়। ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই তরুণীর সহপাঠীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তাঁর বয়ানের সত্যাসত্য যাচাইয়ের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে গোটা ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দিল দুর্গাপুরের শোভাপুর এলাকায় ওই বেসরকারি কলেজ। নির্যাতিতা তরুণী ওড়িশার বাসিন্দা। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রাত ৭টা ৫৮ মিনিটে সহপাঠীর সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়েছিলেন তরুণী। এর পর ৮টা ৪২ মিনিটে সহপাঠী ক্যাম্পাসে একা ফিরে আসেন। কলেজের গেটের কাছে ৫-৬ মিনিট ঘোরাঘুরি করে তিনি আবার বাইরে বেরিয়ে যান। তার পর রাত ৯টা ২৯ মিনিটে ওই সহপাঠীর সঙ্গে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন তরুণী। তার পর ৯টা ৩১ মিনিটে তিনি নিজের হস্টেলের দিকে চলে যান।

হাসপাতাল জানিয়েছে, হস্টেলে ফিরে গিয়েই নির্যাতনের কথা সকলকে জানান দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি পড়ুয়া। এর পরেই তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তৎক্ষণাৎ খবর দেওয়া হয় স্থানীয় পুলিশকেও।

শনিবার হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার। সূত্রের খবর, নির্যাতিতার সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি। দোষীদের যাতে দ্রুত গ্রেফতার করা হয় এবং তদন্ত যাতে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ভাবে হয়, সেই দাবি জানিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে চিঠি দিয়েছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকর। স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’, যারা গত বছর আরজি কর আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিল।

রাজ্য পুলিশও বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘‘দোষীরা ছাড়া পাবে না। নির্যাতিতা বিচার পাবেনই। উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। ওঁর পরিবারকে সব রকম ভাবে সাহায্য করা হচ্ছে। মহিলাদের উপর অপরাধে আমরা জ়িরো টলারেন্স নীতি মেনেই চলি।’’

দুর্গাপুরের ঘটনা নিয়ে চড়ছে রাজনীতির পারদও। গত বছর আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। অভূতপূর্ব নাগরিক আন্দোলন দেখেছে রাজ্যবাসী। তার পর চলতি বছর কসবার আইন কলেজের ছাত্রীকে ক্যাম্পাসের ভিতর গণধর্ষণের ঘটনাকে ঘিরেও একই ভাবে চাপানউতর তৈরি হয়েছিল রাজ্যে। পথে নেমেছিলেন বিরোধীরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য প্রশাসন এবং শাসকদলকে বিঁধেছিলেন তাঁরা। আশ্চর্য নয় যে, দুর্গাপুরের ঘটনাতেও একই ভাবে শাসক-বিরোধী তরজা দেখা দেবে।

হচ্ছেও তা-ই। দুর্গাপুরে ধর্ষণের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেই রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে পথে নেমেছে বিজেপি। দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানাও ঘেরাও করেছে তারা। নেতৃত্বে রয়েছেন দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই।

বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘‘আরজি কর হোক বা দুর্গাপুর, ডাক্তারদের ধর্ষণ করা তো প্রবণতায় পরিণত হয়েছে এ রাজ্যে। এখানে যারা ধর্ষণ করে, তারা জানে যে তাদের মাথার উপর তৃণমূল রয়েছে। এ রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই।’’

রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘পুলিশ সঙ্গেই তদন্ত শুরু করেছে। নির্যাতিতা ওড়িশার। তাঁর মা-বাবাও এখানে এসেছেন। তাঁরা রাজ্য সরকারের তদন্তে আস্থা রেখেছেন। বিজেপি এখানে রাজনীতি করছে। মহিলাদের উপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়।’’ মন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘ওড়িশায় বিজেপির সরকার। ওখানেও এক পড়ুয়াকে হেনস্থা করা হয়েছিল। সেই পড়ুয়া পরে গায়ে আগুনও দেয়। এই ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। প্রশ্ন তুলতে চাইলে সর্বত্রই প্রশ্ন তোলা উচিত।’’

(এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় লেখা হয়েছিল: রাত ৮টা ৪২ মিনিটে ‘নির্যাতিতা’ ডাক্তারি ছাত্রীটি একবার ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছিলেন। শনিবার রাতে এমনটিই জানানো হয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া লিখিত বিবৃতিতে। রবিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে সুদর্শনা গঙ্গোপাধ্যায় ত্রুটি সংশোধন করে একটি ভিডিয়ো বিবৃতিতে জানান— ছাত্রীটি নন, রাত ৮টা ৪২ মিনিটে ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছিলেন তাঁর সহপাঠী। নতুন বিবৃতির পর আমাদের প্রতিবেদনেও ভ্রমসংশোধন করা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত)

Durgapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy