E-Paper

অযোধ্যার রাম বনাম দিঘার জগন্নাথ: ভোটের ময়দানে দুই মন্দির নিয়ে জোর টক্কর বিজেপি, তৃণমূলের

নিউ দিঘায় রেল স্টেশনের ঠিক পাশে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গড়ে উঠছে জগন্নাথ সেবাধাম ও সংস্কৃতি কেন্দ্র। মন্দিরটি হুবহু পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে।

কেশব মান্না

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:২৪
(বাঁ দিকে) অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের কাজ পুরোদমে চলছে এবং জোরকদমে কাজ চলছে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের কাজ পুরোদমে চলছে এবং জোরকদমে কাজ চলছে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে (ডান দিকে)।

এক জন বিষ্ণুর অবতার। অন্য জন বিষ্ণুরই পুরুষোত্তম রূপ। দেশের দুই প্রান্তে কয়েক’শো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সেই দুই হিন্দু আরাধ্যের মন্দির ঘিরেই যেন চলছে রাজনীতির টক্কর।

আগামী ১২ জানুয়ারি অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী। এই নিয়ে দেশ জুড়ে নানা অনুষ্ঠান ও জনসংযোগ শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। এর মধ্যে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঘোষণা করেছেন, দিঘায় নির্মীয়মাণ জগন্নাথ মন্দির আগামী এপ্রিলে উদ্বোধন করা হবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, দু’দলই মন্দিরকে সামনে রেখে হিন্দুদের সমর্থন পেতে চাইছে।

নিউ দিঘায় রেল স্টেশনের ঠিক পাশে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গড়ে উঠছে জগন্নাথ সেবাধাম ও সংস্কৃতি কেন্দ্র। মন্দিরটি হুবহু পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে। এ জন্য ২২ একর জমি দরকার ছিল। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ ২০ একর জমি দিয়েছে। বাকি জমি রেলের হওয়ায় তা মেলেনি। তবে তাতে কাজ আটকায়নি। ২০২২ সালে ৩ মে শুরু হয় মন্দিরের নির্মাণকাজ। দায়িত্ব পেয়েছে রাজ্য সরকারের সংস্থা হিডকো। সীমানা প্রাচীর তৈরি শেষ হয়েছে। পুরীর মন্দিরের মতোই এখানে ভিন্‌ রাজ্য থেকে আনা হয়েছে খোদাই করা পাথর। হিডকোর ইঞ্জিনিয়ার সুমন নিয়োগী বলেন, ‘‘পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সমান উচ্চতার মন্দির এখানেও হবে। ওই মন্দিরের আশপাশে যা কিছু আছে, তেমনই দিঘায় করা হবে।’’

দিঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণে রাজ্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। মন্দির নির্মাণের পাশাপাশি ওই টাকায় সৌন্দর্যায়নও করবে হিডকো। তবে জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি কোথায় হবে এবং কোন রাস্তায় রথ যাবে, তা চূড়ান্ত হয়নি। গত বছর প্রশাসনিক সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, মার্বেল পাথরে তৈরি হবে রথ। তিনি ওল্ড দিঘায় সৈকতের ধারে পুরনো জগন্নাথ মন্দির পরিদর্শনও করেছিলেন। সেখানেই মাসির বাড়ি হতে পারে বলে প্রশাসনে জল্পনা রয়েছে।

অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধন ঘিরে যখন সাজ সাজ রব, তখন দিঘাতেও জগন্নাথধামের কাজে গতি বেড়েছে। চলছে রাজনৈতিক তরজাও। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করেছেন, ‘‘রামমন্দির সম্পূর্ণ হিন্দুদের টাকায় তৈরি হচ্ছে। কোনও সরকারি অর্থ সেখানে খরচ হচ্ছে না। আমি প্রাক্তন সাংসদের পেনশন তহবিল থেকে আড়াই লক্ষ টাকা দিয়েছি। কিন্তু দিঘায় সবটাই হচ্ছে সরকারি টাকায়।’’

শুভেন্দুর দাবি, ‘‘সরকার যে টেন্ডার দিয়েছে এবং যে রেকর্ড রয়েছে, সেখানে সংস্কৃতি কেন্দ্রের উল্লেখ রয়েছে। কারণ, কোনও সরকার কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়তে পারে না। এই দ্বিচারিতা পাপ।’’

স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি পাল্টা বলছেন, ‘‘দিঘাকে পর্যটন মানচিত্রে আলাদা গুরুত্ব দিতেই পুরীর মতো জগন্নাথ মন্দির তৈরি করছে রাজ্য সরকার। বিজেপির মতো রামমন্দিরকে সামনে রেখে ধর্মীয় ভেদাভেদ এখানে করা হচ্ছে না।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিমাংশু দাসের মতে, ‘‘দুটো দলই মানুষের মূল সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে ধর্মের আফিম খাওয়াচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy