মজুত করা আলু। মিলনমেলা চত্বরে। শনিবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।
বইয়ের জায়গায় আলু!
বাইপাসের ধারে মিলনমেলা চত্বরের বিশাল হ্যাঙ্গার। বইমেলার সময়ে এই পেল্লায় হলঘরগুলিতেই ছোট-বড় বেশ কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থার স্টল থাকে। এসি মেশিন আর স্পিকার বক্সে সজ্জিত সেই সব হ্যাঙ্গারেই এখন সার সার আলুর বস্তা। নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্যের সীমানা পেরোতে গিয়ে আটক হওয়া আলু কলকাতায় ফিরিয়ে এনে মজুত রাখা হবে মিলনমেলার এই ঠান্ডা ঘরেই। সেখান থেকে তা সরবরাহ করা হবে বিভিন্ন বাজারে।
শনিবার ভোরে ১৩৭টি আলুর ট্রাক ফিরে আসে কলকাতায়। সেগুলিকে রাখা হয় মিলনমেলা, উল্টোডাঙা এবং হেস্টিংসে। পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিক জানান, ব্যবসায়ীদের চাহিদা জেনে বিভিন্ন বাজারে পাঠানো হয় ওই আলু। তবে প্রায় সর্বত্রই তা পাঠাতে পাঠাতে বেলা গড়িয়ে যায়। ততক্ষণে বাজার প্রায় সুনসান। দেরির জন্য ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের মুখেও পড়েন পুরকর্মীরা। গুটি কয়েক জায়গায় লরি থেকেই আলু বেচা হয়। সন্ধ্যায় পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহ জানান, এ দিন মোট ২০ ট্রাক আলু বিক্রি হয়েছে। তবে এ-ও জানান, হেস্টিংস চত্বরে রাখা ট্রাক থেকে বাজারে সরবরাহ করা আলুর মধ্যে ৯৬টি বস্তা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কারণ, সেই আলু নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
সরকারি আলু এ দিন প্রথম পৌঁছয় উত্তর কলকাতার হাতিবাগান বাজারে। তখনই বেলা প্রায় সাড়ে ১১টা। জনা কয়েক বিক্রেতা সরকারি কর্মীদের কাছ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে আলু কিনে ১৪ টাকায় বিক্রি শুরু করেন। দোকানে লিখে দেন, ‘সরকারি আলু। দাম ১৪ টাকা।’ সেই আলুর পাশেই অবশ্য রাখা ছিল ২০ টাকা কেজির জ্যোতি আলু। দোকানিরা যে ২০ টাকা কেজির আলুও বেচছেন, বাজারে বাজারে হানা দেওয়া এনফোর্সমেন্ট শাখার অফিসারদের তা নজর এড়ায়নি। কিন্তু তাঁরা স্রেফ বেশি দাম নিতে বারণ করেই দায় সেরেছেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, মধ্য হাওড়ায় রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়ের বাড়ির সামনে কালীবাবুর বাজারে কিন্তু সরকারি দামে আলু মেলেনি। সেখানে ক্রেতাদের ২০ টাকা কেজি দরে জ্যোতি আলু কিনতে হয়েছে।
এ দিন গড়িয়াহাট মার্কেট ও লেক মার্কেটে সরকারি দরের আলু সরবরাহ করতে যাওয়া পুরকর্মীরা ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। ওই ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, পুরসভার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সকালেই পৌঁছে যাবে আলুর গাড়ি। অথচ গাড়ি ঢোকে বেলা ১টারও পরে। এত দেরিতে পৌঁছনোয় ওই ব্যবসায়ীরা আলু নিতে চাননি। এ নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তকর্র্ চলে। পরে ১০০ বস্তা আলু নেন লেক মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। ল্যান্সডাউন-সহ দক্ষিণ কলকাতার বহু বাজারেও সকালের বাজারপর্ব শেষ হতেই পৌঁছয় আলুর গাড়ি। স্বভাবতই, বেশি দরের আলু কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের। মেয়র পারিষদ (বাজার)-এর সাফাই, “সবে তো শুরু হয়েছে। তাই সব জায়গায় আলু পৌঁছতে দেরি হয়েছে।” তাঁর আশ্বাস, আজ, রবিবার সব ঠিক হবে।
শুধু বাজারে আলু সরবরাহে অব্যবস্থা নয়, প্রশ্ন উঠেছে আলুর লরি আটক করার ধরন নিয়েও। পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক বরেন মণ্ডল বলেন, “আটক ট্রাক কোন বাজারে পাঠানো হচ্ছে, তা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে জানানো হচ্ছে না। ওই আলুর জন্য কত টাকা দেওয়া হবে, পরিবহণ খরচ দেওয়া হবে কি না, সে সব কিছুই জানি না। আমরা ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছি।” পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন, মোহনপুর, বেলদা, নারায়ণগড় ও খড়্গপুর লোকাল থানা এলাকা থেকে বেশ কিছু আলুবোঝাই ট্রাক পুলিশি ব্যবস্থাপনায় কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। ওই সব এলাকায় আরও ২০০টি ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। আজ, রবিবারের মধ্যে সেগুলিরও কলকাতায় ফিরে আসার কথা।
চাপে পড়ে অবশ্য এ দিনই ওড়িশায় গুটিকয়েক আলুভর্তি ট্রাককে সীমানা পেরোনোর অনুমতি দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। ওড়িশার খাদ্যমন্ত্রী সঞ্জয় দাসবর্মাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বাংলার আলুর লরি ভুবনেশ্বর ও কটকে পৌঁছতে শুরু করেছে। পিটিআইয়ের খবর, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। তার পরেই ওড়িশার জলেশ্বরে আটকে রাখা মাছ ও ডিমের লরি ছেড়ে দেন সেখানকার শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা। জলেশ্বরের বিজেডি বিধায়ক অশ্বিনীকুমার পাত্র এ দিন বলেন, “আমাদের রাজ্যে আলু পাঠানো হবে বলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আশ্বাস দিয়েছে। তাই ট্রাকগুলি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy