Advertisement
E-Paper

কেন্দ্রের নয়া শর্তে চাপ বাড়ল রাজ্যের

কেন্দ্র স্পষ্ট করে দিয়েছে, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সংস্কারের শর্ত মানলে তবেই আগামী আর্থিক বছরে (২০২৩-২৪) রাজ্যের রাজকোষ ঘাটতিকে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিএসডিপি) ৩.৫%-এ রাখা যাবে।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫৮
Picture of PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

রাজ্য বাজেট আর মাত্র ৭২ ঘণ্টা। ফি বছরের মতো এ বারও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর পরীক্ষা, ভারসাম্য না হারিয়ে কার্যত দড়ির উপরে হাঁটা। এক দিকে, রাজ্যের ঘাড়ে বিপুল ঋণের বোঝা, নাগাড়ে বাড়তে থাকা রাজকোষ এবং রাজস্ব ঘাটতি। অন্য দিকে, বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প, দফতরভিত্তিক বরাদ্দ, বেতন-পেনশনের মতো ‘হাত দিতে না পারা’ প্রয়োজনীয় খাতগুলিতে বরাদ্দ জুগিয়ে যাওয়া। কোর্টে ঝুলছে ডিএ মামলাও। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের একাংশের মতে, প্রতি বছরের এই পরীক্ষা এ বার আরও একটু বেশি কঠিন, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বাজেটে মোদী সরকারের বেঁধে দেওয়া শর্তের ধাক্কায়।

কেন্দ্র স্পষ্ট করে দিয়েছে, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সংস্কারের শর্ত মানলে তবেই আগামী আর্থিক বছরে (২০২৩-২৪) রাজ্যের রাজকোষ ঘাটতিকে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিএসডিপি) ৩.৫%-এ রাখা যাবে। সংস্কার না করলে তা হতে হবে ৩%। চলতি আর্থিক বছরে (২০২২-২৩) সেই সীমা রয়েছে ৪%।

তবে রাজনৈতিক কারণে বিদ্যুৎ-সংস্কারের পথে রাজ্য আদৌ যাবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নন আর্থিক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা মনে করছেন, সেই পথ ধরা না গেলে কিছুটা সঙ্কুচিত হবে ধার করার সীমা। ফলে রাজ্যকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ খরচ কমাতেই হবে। অথবা বাড়াতেই হবে নিজস্ব আয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সম্ভাবনা নিয়েও থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন। এই ‘শাঁখের করাতে’ আগামী বুধবার রাজ্য বাজেটে ভারসাম্য রাখা এক বড় পরীক্ষা।

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র লক্ষ্মীর ভান্ডার, কৃষকবন্ধু, কন্যাশ্রী এবং রূপশ্রী প্রকল্পে খরচের বহর রাজ্যের নিজস্ব রাজস্ব-আয়ের ২৩.৮%। এর উপর রয়েছে সকলের জন্য স্বাস্থ্যসাথী, নিখরচায় রেশন, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্তদের ভাতা, ট্যাব-সাইকেল বিতরণ, ক্লাব-অনুদান, দুর্গাপুজোর জন্য ক্লাব পিছু সরকারি বরাদ্দ ইত্যাদি দায়িত্ব। অর্থনীতিবিদদের অনেকেরই বক্তব্য, এই সবের সঙ্গে বেতন, পেনশন, প্রশাসনিক খরচ, ভর্তুকি, পুরনো ঋণের সুদ মেটাতে প্রায় ৯০% অর্থ খরচ হয়ে যায়।

ঘটনাচক্রে, ২০১৯-২০ আর্থিক বছর থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের রাজস্ব ঘাটতি ক্রমশ বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণও। উল্লিখিত খাতে খরচ ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঋণের পরিমাণও বাড়াতে হয়েছে রাজ্যকে (সবিস্তার তথ্য সারণিতে)। অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “আমরা কখনও ফিসকাল-অনিয়ম করিনি। বিদ্যুৎক্ষেত্রেও সমস্যা নেই। বাকি রাজ্য তথা নিজেদের পরিচালিত রাজ্যগুলির দিকে নজর দেওয়া উচিত কেন্দ্রের।”

অর্থনীতিবিদদের অনেকে জানাচ্ছেন, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ঘাটতি মেটাতেই ঋণ করতে হয় রাজ্যকে। ফলে ঘাটতির সীমা কমলে সমান্তরালে কমবে ঋণের সীমাও। অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের বক্তব্য, “আগামী বছরের জন্য নিজেদের রাজকোষ ঘাটতির সীমা ৫.৯% রেখেছে কেন্দ্র। অথচ রাজ্যগুলিকে রাজকোষ ঘাটতি কমিয়ে ৩.৫% করতে বলছে, এটা অন্যায্য। রাজ্যগুলোকে এ ভাবে চাপে রাখার যুক্তি নেই।” অর্থনীতিবিদ তথা বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ীর প্রতিক্রিয়া, “সব রাজ্যের ক্ষেত্রে তো একই নিয়ম হওয়া দরকার। পশ্চিমবঙ্গের জন্য সেখানে আলাদা নিয়ম কী করে হবে? খরচ কমাতে কিছু তো করতেই হবে। না হলে তো সর্বনাশ! অন্য রাজ্যগুলো কী করে করছে?” প্রসঙ্গত, সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের আর্থিক সঙ্কটের উদাহরণ দেখিয়ে রাজ্যগুলিকে আর্থিক শৃঙ্খলা মেনে চলা এবং ধার করে খয়রাতিতে রাশ টানার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

সূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্রের রাজকোষ ঘাটতির সীমা ২০১৯-২০ বছরে ছিল ৪.৬%। চলতি আর্থিক বছরে তা রয়েছে ৬.৪%। আগামী বছরের জন্য তা কমিয়ে করা হয়েছে ৫.৯%। অভিরূপের অভিযোগ, “নিজেদের মর্জি মতো করে রাজ্যকে পরিচালিত করতে চাইছে কেন্দ্র।” অশোকের কথায়, “ঋণগ্রস্ত থাকলে কেন্দ্রের অনুমতি নিয়েই রাজ্যগুলোকে ধার করতে হয়। এটাই সাংবিধানিক নিয়ম। বিত্ত কমিশন ছাড়াও অনেক প্রকল্পে রাজ্যকে টাকা দেয় কেন্দ্র। আরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে কেন্দ্রের। কোভিড কালে গোটা দেশে বিনামূল্যে টিকা, খাদ্যসামগ্রী ইত্যাদির বিপুল দায়িত্ব সামলেছে কেন্দ্র। ফলে সেই ধাক্কা কেটে গেলে রাজকোষ ঘাটতির সীমা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।”

এই পরিস্থিতিতে ক্লাব-দুর্গাপুজোর অনুদান বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থের খরচ কি চালিয়ে যেতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। রাজ্যের অর্থনীতির বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, মেলা-খেলা-পুজো ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাশ টানা না গেলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। রাজকোষ ঘাটতি ৩%-এর বেশি হলে সমস্যা হতে পারে কেন্দ্রীয় অনুদান পেতেও। তখন সমস্যা আরও জটিল হবে।

তবে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরের যুক্তি, মেলা-পুজোয় আর্থিক গতিবিধি যথেষ্ট হয়। অর্থনীতির স্বার্থে তা-ও প্রয়োজন।

West Bengal Central Government Budget
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy