করোনা-কালবেলায় ফি দেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের উপরে কোনও রকম চাপ সৃষ্টি করা যাবে না বলে রাজ্যের বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিকে জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ম্যাকাউট)। এই সময়ে যে সব কলেজ ফি চাইছে, ম্যাকাউট কর্তৃপক্ষ তাদের সেটা করতে বারণ করছেন বার বার। সেই সঙ্গে শিক্ষক ছাঁটাইয়ের মতো কাজকর্ম থেকেও বিরত থাকতে বলা হচ্ছে।
ম্যাকাউটের উপাচার্য সৈকত মৈত্র বুধবার জানান, এই দুঃসময়ে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের অধীন কোনও কলেজের তরফে পড়ুয়াদের কাছে ফি চাওয়ার কথা জানতে পারলেই তাঁরা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করছেন। সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিচ্ছেন, এখন ফি মেটানোর জন্য জোর করা যাবে না। বিষয়টিকে সহানুভূতির সঙ্গে দেখতে হবে। এর পাশাপাশি অনেক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এখন শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছে না অথবা আংশিক বেতন দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ উঠছে শিক্ষক ছাঁটাইয়েরও। ‘‘এ কাজ করতেও বারণ করছি আমরা,’’ বলেন সৈকতবাবু।
লকডাউনের সূচনাতেই অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (এআইসিটিই) বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেশের সব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে জানিয়েছিল, এই সময়ে ফি মেটানোর জন্য পড়ুয়াদের যেন কোনও রকম চাপ দেওয়া না-হয়। ওই বিজ্ঞপ্তি সব কলেজের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে এআইসিটিই নির্দেশ দিয়েছিল, কোনও শিক্ষককেই যেন ছাঁটাই করা না-হয়। দিতে হবে পুরো বেতনই। সৈকতবাবু এ দিন বলেন, ‘‘যে সব কলেজ এখন ফি চাইছে, আমরা খবর পাওয়া মাত্র তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এআইসিটিই-র নির্দেশ মেনে চলতে বলছি। শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না। কোথাও কোথাও ছাঁটাই করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ আসছে আমাদের কাছে। আমরা সেটাও দেখছি।’’
উপাচার্যের বক্তব্য, পড়ুয়াদের ফি দেওয়ার জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলি যদি আগে থেকে নির্দিষ্ট কোনও ব্যাঙ্কের সঙ্গে ‘টাই-আপ’ বা বিশেষ বন্দোবস্ত করে রাখত, তা হলে ভাল হত। যদি এমন ব্যবস্থা করা থাকত যে, ব্যাঙ্ক এখন কলেজকে পড়ুয়াদের ফি বাবদ টাকা দিয়ে দেবে এবং পরে নামমাত্র সুদে সেই টাকা ব্যাঙ্কে ফিরিয়ে দেবে পড়ুয়ারা। তা হলে বিষয়টা অনেক বাস্তবসম্মত হত। সৈকতবাবু জানান, আদৌ ফি না-পেয়ে বিভিন্ন কলেজ অসুবিধায় পড়ছে। শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে না।
রাজ্যে এখন ম্যাকাউটের অধীনে দুই শতাধিক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে। উপাচার্যের বক্তব্য, এমনিতেই বিভিন্ন বিষয়ে পড়ুয়া না-পেয়ে অনেক কলেজের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ছে। করোনার ধাক্কায় কিছু কলেজ যদি উঠে যায়, সেটা খুব খারাপ হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির পাশে বিভিন্ন রকম দোকান গড়ে ওঠে, যা থেকে বেশ কিছু মানুষের জীবন-জীবিকা চলে। দোকানগুলি চলে মূলত সংলগ্ন কলেজের উপরে নির্ভর করেই। কলেজ উঠে গেলে সেগুলোও আর থাকবে না। সেটাও খুব কাঙ্ক্ষিত নয় বলেই মন্তব্য করেন উপাচার্য।