E-Paper

এসআইআর নিয়ে ব্যস্ত খেতমজুর, সমস্যা চাষে

পূর্ব বর্ধমান, হুগলির মতো কৃষিপ্রধান জেলাগুলিতে অনেক জমিতে এখন যন্ত্রে ধান কাটা হয়। তা সত্ত্বেও, প্রায় অর্ধেক জমিতে এখনও খেতমজুরেরা সে কাজ করেন। প্রতি বিঘা জমিতে ধান কাটতে ১৫-১৯ জন, আলুবীজ বসাতে জনা দশেক করে শ্রমিক লাগে।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:৫৭
মাঠ পড়ে রয়েছে পাকা ধান। কালনায়।

মাঠ পড়ে রয়েছে পাকা ধান। কালনায়। —নিজস্ব চিত্র।

মাঠে পড়ে পাকা ধান। কিন্তু তা কাটার লোকের অভাব। সৌজন্যে, ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর), অভিযোগ রাজ্যের কৃষিপ্রধান জেলার চাষিদের। তাঁদের দাবি, ভিন্‌-জেলার যে সব পরিযায়ী শ্রমিক ধান কাটতে আসেন প্রতি বছর, এ বার এসআইআরের জন্য তাঁদের অনেকে আসেননি। তাই ধান কাটা ও ঝাড়ার কাজে সমস্যা দেখা দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আলু চাষ শুরু করা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

পূর্ব বর্ধমান, হুগলির মতো কৃষিপ্রধান জেলাগুলিতে অনেক জমিতে এখন যন্ত্রে ধান কাটা হয়। তা সত্ত্বেও, প্রায় অর্ধেক জমিতে এখনও খেতমজুরেরা সে কাজ করেন। প্রতি বিঘা জমিতে ধান কাটতে ১৫-১৯ জন, আলুবীজ বসাতে জনা দশেক করে শ্রমিক লাগে। পড়শি রাজ্য বিহার, ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ-সহ নানা জেলা থেকে কয়েক হাজার খেতমজুর এই সময়ে কাজের জন্য আসেন। ধান কাটার পরে, জমিতে আলুবীজ পোঁতা সেরে তাঁরা ফেরেন। এই মরসুম তাঁদের উপার্জনের বড় সময়।

কালনার কদম্বার চাষি খালিদ হোসেন শেখ বলেন, “মুর্শিদাবাদ থেকে যে শ্রমিকেরা আসতেন, তাঁরা এসআইআর নিয়ে ব্যস্ত জানিয়ে আসেননি। প্রায় ১৫ বিঘা জমির ধান মাঠে পড়ে আছে!’’ মেমারির স্বরূপ মণ্ডলের আশঙ্কা, “ধান মাঠ থেকে না উঠলে, আলু চাষে দেরি হবে।’’ হুগলির গোঘাটের মোহন মণ্ডল জানান, বাঁকুড়ার শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, এসআইআর চলায় তাঁরা কয়েক দিন পরে আসবেন। মেমারির বাবলু মণ্ডলের দাবি, ‘‘রাজ্যে ভোট চলায় বিহারের শ্রমিকেরাও আসেননি। পরিস্থিতি বুঝে, স্থানীয় শ্রমিকেরা বেশি মজুরি চাইছেন।’’ বাইরের শ্রমিক না আসায় পেঁয়াজ চাষেও সমস্যা হচ্ছে, জানান কালনার চাষি সাত্তার শেখ।

খেতমজুরেরা জানান, এই সময়ে দৈনিক গড়ে ৩০০-৩১০ টাকা মজুরিতে টানা দু’-আড়াই মাস জমিতে কাজ মেলে। ২০ হাজার টাকার আশপাশে রোজগার হয়। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের খেতমজুর সন্দীপ মণ্ডল, সরিফুল মণ্ডলদের প্রশ্ন, ‘‘এসআইআরের জন্য নথিপত্র জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছি। কাজে যাব কী ভাবে?’’ বাঁকুড়ার ইঁদপুরের মাধব বাউরি ধান কাটা ও আলুবীজ বসানোর কাজে ফি বছর সস্ত্রীক পূর্ব বর্ধমানে যান। তাঁর কথায়, ‘‘এসআইআর খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ বার দেরিতে যাব।’’ পূর্বস্থলীর মণিমালা মণ্ডল বছরের এই সময়ে হুগলির গুপ্তিপাড়ায় পেঁয়াজের জমিতে কাজ করেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভোটার তালিকায় নাম থাকা নিশ্চিত করেই কাজে বেরোব।’’

এই পরিস্থিতিতে ধান কাটায় চাষিদের সহায় হতে পারত যন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টর)। কিন্তু সে যন্ত্র ব্যবহার খরচসাপেক্ষ। যন্ত্রে ধান কাটতে ঘণ্টা পিছু খরচ ২,৭০০-২,৮০০ টাকা। সে যন্ত্র দিয়ে ধান কাটলে জমিতে এক-দেড় ফুট মাপের ধানগাছের অংশ (নাড়া) রয়ে যায়। যা পরবর্তী কালে পোড়ালে বায়ুদূষণ বাড়ে। যন্ত্র ব্যবহার করলে মাঠ থেকে গবাদি পশুর জন্য ব্যবহারের যোগ্য খড় পেতেও সমস্যা হয়।

সিপিএমের কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুকুল শিকদারের অভিযোগ, ‘‘মাত্র এক মাস সময় এসআইআরের জন্য যথেষ্ট নয়। চাষি, খেতমজুরদের কথা না ভেবেই তা করা হচ্ছে। সে জন্য এই সমস্যা।’’ বিজেপির কিসান মোর্চার প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সুভাষ পাল যদিও বলেন, ‘‘খেতমজুরেরা এই সময়ে ভাল কাজ পান। তবে ভোটার তালিকার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। ফর্ম জমা দিয়ে খেতমজুরেরা কাজে যাবেন বলে আশা করছি।’’ রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা তথা মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের আর্জি, ‘‘ফর্ম জমা দিয়ে শ্রমিকেরা কাজে চলে আসুন। প্রয়োজন হলে, আবার এলাকায় যাবেন।’’

(সহ-প্রতিবেদন: পীযূষকান্তি নন্দী, শুভেন্দু তন্তুবায়, অর্ণব ব্রহ্ম)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Special Intensive Revision West Bengal government SIR Farmers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy