পেঁয়াজ ছাড়া রান্না খুব কম বাড়িতে হয়। তাই বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা সবসময়ই চড়া। যখন জোগান থাকে, তখন চাহিদাটা বোঝা যায় না। কিন্তু পুজোর সময় যখন শীতকালীন এই ফসলের জোগান কমে আসে, তখন বাজারে দাম চড়চড় করে বাড়তে থাকে। মাথায় হাত পড়ে গৃহস্থের। চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য বজায় রাখতে তাই বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্ষাকালে যে সব জমিতে জল দাঁড়ায় না, সেখানে বর্ষালি পেঁয়াজ চাষ করাটা লাভজনক। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বর্ষালি পেঁয়াজ তোলার পরে বাজারে ভাল দাম পাওয়া যায়। চাষের পদ্ধতি শীতকালীন ফসলের মতোই। শুধু জাত, বীজতলা তৈরি ইত্যাদি নিয়ে একটু সচেতন থাকতে হবে।
• জাত
অনেক জাতের মধ্যে বর্ষাকালে ভাল ফলন দেয় এগ্রিফাউন্ড ডার্ক রেড, অর্ক কল্যাণ, বসন্ত ৭৮০, সুগ সাগর।
• বীজতলা তৈরি
জুন মাসের মধ্যে বীজ বুনতে হবে। বিঘা প্রতি ৭০০-৮০০ গ্রাম বীজ দরকার। আট-নয় সপ্তাহের চারাগাছ মূল জমিতে রোপণ করতে হবে।
উইপোকা ও পিঁপড়ের আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য ক্লোরোপাইরিফস ২ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। বর্ষাকালে ছত্রাকজনিত রোগের প্রকোপ বেশি। তাই কার্বেন্ডাজিম (২ গ্রাম/ কেজি) বা অন্য কোনও ছত্রাকনাশক দিয়ে ভাল করে বীজ শোধন করতে হবে। বীজতলা বা বীজ শোধনের জন্য ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ব্যবহার করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। ১ কেজি ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ১০০ কেজি পচা গোবর সারের সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে ৩-৪ দিন ছায়াযুক্ত জায়গায় রেখে বীজতলায় প্রয়োগ করতে হবে এবং প্রতি কেজি বীজে ১০ গ্রাম ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনও রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা যাবে না।
• জমি তৈরি
এক মিটার প্রস্থ ও ৩-৪ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট উঁচু বেড করতে হবে ও উন্নত জলনিকাশি ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে বৃষ্টির অতিরিক্ত জল সহজে চলে যেতে পারে। পচা গোবর সার বিঘা প্রতি (৩৩ শতক) ২০ কুইন্ট্যাল জমি তৈরির ৮-১০ দিন আগে দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। ৮-৯ সপ্তাহের চারাগাছ মূল জমিতে কাদা বা শুকনো লাগানো যায়। তবে কাদা অবস্থায় লাগালে ভাল ফল মেলে।
• সার প্রয়োগ
তিন ধরনের সারের হিসাব বিঘা প্রতি দেওয়া হল। এর মধ্যে যে কোনও একটা প্রয়োগ করতে হবে।
ইউরিয়া ২২ কেজি, সিঙ্গল সুপার ফসফেট ৮০ কেজি, মিউরিয়েট অফ পটাশ ১৬ কেজি।
ইউরিয়া ১০ কেজি, ডিএপি ৩০ কেজি, মিউরিয়েট অফ পটাশ ১৬ কেজি।
ইউরিয়া ১৩ কেজি, এসএসপি ২০ কেজি, ১০:২৬:২৬-৩৮ কেজি।
• অণুখাদ্য
বিঘা প্রতি বোরন (১.২৫ কেজি বোরাক্স), মলিবডেনাম (৬০-৭০ গ্রাম), কপার (০.২৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে), জিঙ্ক (জিঙ্ক সালফেট ৩ কেজি) প্রয়োজন মাফিক প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে এক থেকে দেড় মাসের মাথায় অণুখাদ্য মিশ্রণ ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
• ফসল তোলা
খরিফ মরসুমে পেঁয়াজ তোলা হয়— যখন জমির প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ গাছের পাতা হলুদ হয়ে আসে ও উপরের অংশ শুকিয়ে যেতে থাকে। ১০০ শতাংশ নুন-জল ছিটিয়ে মাথা ভাঙলে সুফল মেলে। বপন থেকে ফসল তোলা ৮৫-১০০ দিন লাগে।
লেখক: সিদ্দিকুল ইসলাম, ও বাপ্পা পরামানিক (বিশেষজ্ঞ, দক্ষিণ দিনাজপুর কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র), শতদীপ সিংহ রায় (গবেষণারত, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy