নবদ্বীপে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের কনভয় লক্ষ্য করে হামলার অভিযোগ উঠল। ওই গাড়িতে ইট ও লাঠি দিয়ে একদল দুষ্কৃতী হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় বিজেপির দুই কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের মাথা ফেটে গিয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনুপম তালুকদার নামে এক কর্মীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে কল্যাণীর এমস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর গাড়ি আগেই বেরিয়ে এসেছিল বলে জানা গিয়েছে। এই হামলার জন্য তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে বিজেপি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুকান্তের উপস্থিতিতে তৃণমূলের অফিসে পাল্টা হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ।
বুধবার নদিয়ায় সুকান্তের একাধিক কর্মসূচি ছিল। তাহেরপুরে সিএএ ক্যাম্পের সূচনা এবং কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোয় পুলিশি হেনস্থার অভিযোগেকে কেন্দ্র করে কোতোয়ালি থানা ঘেরাও কর্মসূচি ছিল। এর পর তিনি নবদ্বীপে যান। সেখানে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব চলছে। নবদ্বীপের সরকার পাড়ায় বিজেপির একটি কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে সুকান্তের কনভয়ের দু’টি বা তিনটি গাড়ি পিছিয়ে যায় এবং ভুল রাস্তায় চলে যায়। সেখান থেকে নবদ্বীপ বাস স্ট্যান্ডে গাড়ি ঘোরানোর সময়ে এই হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, রাত ৯টা নাগাদ নবদ্বীপ বাস স্ট্যান্ডের পাশে তৃণমূলের একটি শ্রমিক সংগঠনের অফিস থেকে লোকজন বেরিয়ে এসে প্রথমে সুকান্তের কনভয়ের পিছনে থাকা দু’টি গাড়িতে হামলা চালান। তাঁর কনভয়কে বাধা দেওয়া হয় এবং লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। গাড়ি চালক-সহ বিজেপি কর্মীদের মারধর করা হয়। সেই সময় দুষ্কৃতীদের হাতে লাঠি দেখা গিয়েছিল বলেও অভিযোগ। হামলার খবর পেয়েই সুকান্তের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছোয়। বিজেপির জমায়েতও বেড়ে যায়। তার পরে সুকান্তের উপস্থিতিতেই তৃণমূলের ওই শ্রমিক সংগঠনের অফিসে পাল্টা হামলা হয় বলে অভিযোগ শাসকদলের।
সুকান্ত ঘটনাস্থল থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সুকান্ত বলেন, “আমার দুই কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনকে স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে, রক্তের হিসেব আমরা বুঝে নেব।” তাঁর হুঁশিয়ারি, “অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করা হলে, বিজেপি নিজেরাই ব্যবস্থা নিতে জানে, সেই ক্ষমতা আমাদের আছে। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে আবার আমরা থানা ঘেরাও কর্মসূচি করব। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই আমরা লড়ব। বার বার যদি আমাদের কর্মীদের উপর হামলা হয়, তা হলে এ বার থেকে ঝান্ডার সঙ্গে ডান্ডাও রাখতে হবে নিজেদের সুরক্ষার জন্য।”
হামলার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূল কর্মীদের অত সময় নেই যে সুকান্ত মজুমদারের গাড়িতে হামলা চালাতে যাবে। দেখুন ওদের কোথাও গোষ্ঠীদ্বন্দের সমস্যা হচ্ছে কি না।”
প্রসঙ্গত, বুধবার কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোয় পুলিশি হেনস্থার অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা হয়। এ দিন, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এবং বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানা অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের তুমুল বচসা এবং ধস্তাধস্তি হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছোয় যে, পুলিশকর্মীদের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের সরাসরি হাতাহাতির উপক্রম হয়। এই ঘটনার পর আইসি-কে সরাতে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন সুকান্ত।