Advertisement
E-Paper

ব্যাটে চোট, এক দিনে মৃত কিশোর

বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল এক কিশোর। পায়ে ব্যাটের চোট লাগে। যন্ত্রণায় কাতর ছেলেটিকে বাড়ির লোকজন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকের নির্দেশ মতো তিনটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। অভিযোগ, ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। রবিবার রাতে মৃত্যু হয় বড়জোড়ার উঁয়াড়া এলাকার কিশোর সুজয় বাউড়ির (১৪)।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
সুজয় বাউড়ি।

সুজয় বাউড়ি।

বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল এক কিশোর। পায়ে ব্যাটের চোট লাগে। যন্ত্রণায় কাতর ছেলেটিকে বাড়ির লোকজন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকের নির্দেশ মতো তিনটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। অভিযোগ, ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। রবিবার রাতে মৃত্যু হয় বড়জোড়ার উঁয়াড়া এলাকার কিশোর সুজয় বাউড়ির (১৪)।

এই ঘটনায় বড়জোড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে ওই কিশোরের পরিবার। ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার হাসপাতালের সামনে তার দেহ নিয়ে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় মানুষ। বড়জোড়া থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছে মৃতের পরিবার।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজয় উঁয়াড়া জামবেদিয়া জুনিয়র হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। কাকা ধরণী বাউড়ি, জেঠু কর্ণ বাউড়ি, জেঠতুতো দাদা আকাল বাউড়িরা জানান, শনিবার বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে গ্রামের মাঠেই ক্রিকেট খেলতে গিয়ে পায়ে ব্যাটের আঘাত লাগে সুজয়ের। তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে বাড়ি ফেরে সে। রবিবার বড়জোড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। তাঁদের দাবি, হাসপাতালের চিকিৎসক সুজয়কে প্রাথমিক পরীক্ষা করে তিনটি ইঞ্জেকশনের নাম লিখে বাইরের দোকান থেকে কিনে আনতে বলেন। সেগুলি দিয়ে ওই কিশোরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগ, ওই ইঞ্জেকশন নেওয়ার পরেই সুজয়ের অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে শুরু করে। রাত প্রায় ১১টা নাগাদ পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়। ধরণীবাবুরা বলেন, “ছেলেটার গোটা গায়ে র‌্যাশ বেরিয়ে গিয়েছিল। ছটফট করছিল। আমরা রাতেই সুপার স্পেশ্যালিটিতে নিয়ে যাই। ডাক্তার ওকে দেখেই বাঁকুড়া মেডিক্যালে রেফার করে দেন।”

তাঁদের দাবি, বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে আসা যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, সুজয়ের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের লোকজন দেহ গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যান। সোমবার সকালে সুজয়ের দেহ বড়জোড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন মৃতের পরিজন এবং উঁয়াড়া গ্রামের বাসিন্দারা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভ ওঠে। সুজয়ের পরিবারের তরফে বড়জোড়া থানায় গোটা ঘটনাটি নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। সোমবার সুজয়ের দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যালে।

সুজয়ের বাবা মিহির বাউড়ি পেশায় দিনমজুর। তিনি বলেন, “আমার ছেলের কেবল পায়ে চোট ছিল। ডাক্তার কী ইঞ্জেকশন দিল যে এমনটা হয়ে গেল? চিকিৎসক এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই ওর মৃত্যু হয়েছে।’’

কী ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল, কেন দেওয়া হয়েছিল— সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। মিহিরবাবুর দাবি, রবিবার রাতে বাড়াবাড়ি হওয়ায় তাঁরা যখন সুজয়কে বড়জোড়া সুপার স্পেশ্যালিটিতে নিয়ে যান, তখন ইঞ্জেকশনের নাম লেখা কাগজ তাঁদের থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। হাসপাতাল সুপার কৌশিক গড়াইয়ের থেকেও উত্তর পাওয়া যায়নি। ‘‘পায়ে চোট লেগে কেউ তো মারা যায় না’’, বলেই তিনি ফোন কেটে দেন। তার পরে অনেক বার ফোন করা হলেও ধরেননি। বাঁকুড়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, “বড়জোড়ার ঘটনাটি নিয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ জানাননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করব।” ঠিক কী কারণে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে সেটা ময়না তদন্তের রিপোর্ট না দেখে বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

স্কুলে বেশ জনপ্রিয় ছিল সুজয়। উঁয়াড়া জামবেদিয়া জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষক ধৃতিনাথ পাল বলেন, ‘‘সুজয় পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলাতেও খুব ভাল ছিল। ওর আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত।’’

Death Medical Negligence Student Barjora Super Speciality Hospital Cricket সুজয় বাউড়ি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy