Advertisement
E-Paper

বিয়াল্লিশেই তেরঙ্গা উড়েছিল মানভূমে

১৯৪২ সালের ৮ অগস্ট মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী ইংরাজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। সেই সময়ে এই সমস্ত এলাকাগুলি সাবেক বিহারের মানভূম জেলায়।

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০৮:৩০
পতাকা কিনতে ব্যাস্ত স্কুল পড়ুয়ারা। বাঁকুড়ার ইন্দারাগোড়ায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

পতাকা কিনতে ব্যাস্ত স্কুল পড়ুয়ারা। বাঁকুড়ার ইন্দারাগোড়ায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

স্বাধীনতা লাভের আগেই সাবেক মানভূম, বর্তমান পুরুলিয়ায় উড়েছিল তেরঙ্গা পতাকা।

সালটা ১৯৪২। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে উত্তপ্ত চারদিক। জেলার ইতিহাস গবেষকেরা জানান, তারই মধ্যে বান্দোয়ান ও বরাবাজার থানায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তেরঙ্গা পতাকা শোভা পেয়েছিল। পরে ব্রিটিশ শাসক ওই পতাকা নামিয়ে ফের নিজেদের পতাকা উড়িয়ে দেয়। সেই সময়ে আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে মানভূম জেলার দুই কংগ্রেস কর্মী গোবিন্দ মাহাতো এবং চুনারাম মাহাতো মানবাজার থানা চত্বরে শহিদ হন।

১৯৪২ সালের ৮ অগস্ট মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী ইংরাজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। সেই সময়ে এই সমস্ত এলাকাগুলি সাবেক বিহারের মানভূম জেলায়। সেখানেও ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনের জোয়ার। মানভূম জেলার অন্যতম শীর্ষ নেতা অতুল চন্দ্র ঘোষ এবং বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত গাঁধীর সভা থেকে ফেরার পথে গ্রেফতার হন।

সেই সময় স্বাধীনতা সেনানীদের অন্যতম কেন্দ্র ছিল পুরুলিয়ার শিল্পাশ্রম। ১০ অগস্ট রাতে ব্রিটিশ পুলিশ শিল্পাশ্রম ঘেরাও করে জেলার বাকি শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে জেলে ঢুকিয়ে দেয়। জেলার ব্রিটিশ শাসকরা ভেবেছিল, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের বন্দি করলে জেলায় ভারত ছাড়ো আন্দোলন থমকে যাবে।

যায়নি। মানভূমের বিপ্লবীদের চিনতে ভুল করেছিল তারা। জেলার ইতিহাস গবেষকেরা জানান, প্রথম সারির নেতারা জেলে থাকায় আন্দোলন সংগঠিত করার ভার পড়েছিল ভজহরি মাহাতো, ভীম মাহাতো, হেমচন্দ্র মাহাতো, কুশধ্বজ মাহাতো, চিত্তভূষন দাশগুপ্ত, কৃষ্ণচন্দ্র চৌধুরীদের মতো অপেক্ষাকৃত নবীন নেতাদের হাতে। ভজহরিবাবু পরবর্তী কালে জেলার প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হন। বান্দোয়ান থানার জিতান গ্রামে নবীন নেতারা আন্দোলনের কর্ম পদ্ধতি ঠিক করতে বৈঠকে বসেন। ঠিক হয়, জেলার সমস্ত থানায় সত্যাগ্রহীরা একসঙ্গে গিয়ে সেগুলি ব্রিটিশদের থেকে মুক্ত করবেন।

জেলার ইতিহাস গবেষক প্রদীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বান্দোয়ান ও বরাবাজার থানা দখল করেন সত্যাগ্রহীরা। পুলিশদের বেঁধে রাখা হয়। সমস্ত নথি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভয় পেয়ে কেউ কেউ থানা ছেড়ে পালিয়ে যান।’’ তিনি জানান, থানা, মদ ভাটি, ডাকঘর, পুলিশ ব্যারাক লন্ডভন্ড করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে টেলিগ্রামের তার কেটে দেওয়া হয়েছিল। কেটে দেওয়া হয়েছিল রাস্তা। তারই মধ্যে ওই দুই থানায় ব্রিটিশ শাসকদের পতাকা ফেলে দিয়ে আকাশ ছুঁয়েছিল তেরঙ্গা।

প্রদীপবাবু জানান, পরের দিন, ৩০ সেপ্টেম্বর, কয়েকশো সত্যাগ্রহী মানবাজার থানা ঘেরাও করেন। কিন্তু আগে থেকে খবর পাওয়ায় পুলিশ কর্তারা সতর্ক ছিলেন। কংগ্রেস কর্মীরা থানা চত্বরে ঢুকতে গেলে পুলিশ গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই গোবিন্দ মাহাতো ও চুনারাম মাহাতো নামে দুই যুবক প্রাণ হারান। কয়েকজন কংগ্রেস কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হন।

এ দিকে থানা দখলকে কেন্দ্র করে অশান্তি ও তরুণদের মৃত্যুর খবর কানে যায় ভাগলপুর জেলে থাকা কংগ্রেস সভাপতি অতুলচন্দ্র ঘোষের। গবেষকদের একাংশের মতে, সম্ভবত শীর্ষ নেতারা ভেবেছিলেন তাঁদের অনুপস্থিতিতে গাঁধিজির অহিংস অসহযোগ আন্দোলন অন্য দিকে মোড় নিতে পারে। জেলার নেতৃত্বে থাকা অপেক্ষাকৃত নবীন নেতাদের আত্মসমর্পন করার নির্দেশ দেন তাঁরা।

অবশেষে আসে বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। তার পরে মানভূম জেলাকে পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে আবার ভাষা আন্দোলন সংগঠিত হয়। ১৯৪৮ সাল থেকে ৮ বছর আন্দোলন চলার পর ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর মানভূম জেলার খণ্ডিত অংশ পুরুলিয়া নাম নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়। সে অন্য ইতিহাস।

Manbhum Indian flag Independence Day মানবাজার Manabazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy