বাঁকুড়ার সোনামুখীর চকাই গ্রামে এলোপাথাড়ি গুলিতে তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় ওই গ্রামেরই দুই যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতেরা সম্পর্কে দুই ভাই। মঙ্গলবার দুপুরে মৃতের পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর হাসিম শেখ এবং ইব্রাহিম শেখ নামের দুই যুবককে গ্রেফতার করে বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে হাজির করায় সোনামুখী থানার পুলিশ। অন্য দিকে, তৃণমূল নেতা খুনের পর সময় যত গড়াচ্ছে, ততই নেপথ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দের ‘তত্ত্ব’ পরিষ্কার হচ্ছে।
গন্ডগোলের সূত্রপাত চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে। সরকারি প্রকল্পে চকাই গ্রামে পাকা নিকাশি নালা তৈরি নিয়ে বিবাদ বাধে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। চলে গুলি। সে বার তৃণমূল নেতা নাসিম শেখ অল্পের জন্য রক্ষা পান। অভিযোগ ওঠে তৃণমূলেরই অপর গোষ্ঠীর নেতা সেকেন্দার খানের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হন সেকেন্দার। তবে জেল থেকে বেরোনোর পরে নাসিমকে দলের অন্দরে কোণঠাসা করতে চান সেকেন্দার। তিনি তৃণমূল সংগঠনের রাশ হাতে নেন। তার পরেই সোমবার এলোপাথাড়ি গুলিতে মৃত্যু হয় সেকেন্দার ওরফে সায়নের। রাত ৯টা নাগাদ বাড়ি ফেরার পথে গুলি চলে তাঁর দিকে। বাইক থেকে মুখ থুবড়ে রাস্তায় পড়ে যান তিনি। গুলি লাগে মাথায় ও পিঠে।
সেকেন্দারের পরিবার সোনামুখী থানায় গিয়ে নাসিম শেখ ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ জানালে নাসিমের দুই ছেলে হাসিম ও ইব্রাহিমকে সোনামুখী থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। অন্য দিকে, নাসিমের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। মৃত তৃণমূল নেতা সেকেন্দারের স্ত্রী আমেনা বিবি বলেন, ‘‘আমার স্বামী তৃণমূলের বুথ স্তরের আহ্বায়ক ছিলেন। নাসিম শেখ দলের কোনও পদে ছিলেন না। তিনি আগে তৃণমূলের বুথ সভাপতি থাকলেও এখন বিজেপির সক্রিয় কর্মী হিসাবে কাজ করেন। আমার স্বামীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলে ফের তৃণমূলের বুথ সভাপতি হতে পারবেন, এই লক্ষ্যেই হামলা হয়েছে।’’
যদিও তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুব্রত দত্তের দাবি, ‘‘নাসিম বা তাঁর পরিবারের কেউ কখনও তৃণমূল করেননি। ওই বুথে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা বিবাদও নেই। বিজেপি ও সিপিএমের অঙ্গুলিহেলনে অভিযুক্ত এই কাজ করে থাকতে পারেন। আমরা চাই, দোষীরা কঠোরতম শাস্তি পাক।’’ কিন্তু তৃণমূল পরিচালিত পিয়ারবেড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় তৃণমূল সদস্যা বুল্টি খাতুনের দাবি ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘‘নাসিম শেখ শুধু তৃণমূলের সক্রিয় কর্মীই নন, তিনি চকাই গ্রামের তৃণমূলের বুথ সভাপতিও ছিলেন। দলের মধ্যে ব্যাপক গোষ্ঠীদ্বন্দের জেরে নাসিম শেখের সঙ্গে সেকেন্দার খাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। যার জেরে একাধিক বার বিবাদ হয়। তবে সেকেন্দার খুনের ঘটনায় নাসিম কোনও ভাবে যুক্ত নন।’’
আরও পড়ুন:
তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় বিজেপির তরফে সোনামুখীর বিধায়ক দিবাকর ঘরামি বলেন, ‘‘এলাকায় তৃণমূলের সংগঠনের রাশ কার হাতে থাকবে এবং কে কত বেশি কাটমানি নেবে, তা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদেই এই খুন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সারা রাজ্যেই মারছে তৃণমূল, মরছেও তৃণমূল। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’’ সোনামুখী পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম নেতা সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের খোঁচা, ‘‘সরকারি প্রকল্পের টাকার ভাগ নিয়ে তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে গন্ডগোলের জেরেই এমন ঘটনা ঘটল।’’