Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বর্ষার সন্ধ্যায় ‘বৃষ্টি’ এল চাইল্ডলাইনে

ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে অঝোরে। তার মধ্যে দিয়েই ভেসে আসছিল ক্ষীণ শব্দটা। সন্ধ্যা নেমেছে। ছুটির দিন, তার উপরে বৃষ্টি বাদলা। সব মিলিয়ে পথচলতি লোকজনও বিশেষ নেই। তার মধ্যেই কৌতুহলী এক জন শব্দ ধরে রাস্তার ধারে গিয়ে দেখতে পান একটা ছোট্ট পুঁটলি।

উদ্ধার হওয়া সেই সদ্যোজাত। —নিজস্ব চিত্র।

উদ্ধার হওয়া সেই সদ্যোজাত। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩১
Share: Save:

ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে অঝোরে। তার মধ্যে দিয়েই ভেসে আসছিল ক্ষীণ শব্দটা। সন্ধ্যা নেমেছে। ছুটির দিন, তার উপরে বৃষ্টি বাদলা। সব মিলিয়ে পথচলতি লোকজনও বিশেষ নেই। তার মধ্যেই কৌতুহলী এক জন শব্দ ধরে রাস্তার ধারে গিয়ে দেখতে পান একটা ছোট্ট পুঁটলি। ভিজে চুপ্পুস। আর তার মধ্যে ফুটফুটে এক সদ্যোজাত শিশুকন্যা। রবিবার কাশীপুর থানা এলাকার সিদপুর গ্রামের ঘটনা।

এলাকার বাসিন্দারা সদ্যোজাত শিশুকন্যাটিকে উদ্ধার করে তুলে দেন পুলিশের হাতে। তারপর চাইল্ডলাইনের উদ্যোগে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বৃষ্টিকে। বৃষ্টি। অঝোর বর্ষায় পাওয়া ছোট্ট মেয়েটির এই নামই দিয়েছেন চাইল্ডলাইনের কর্মীরা।

স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য কমল বাউরি জানান, ভিজে কাঁথায় জড়ানো বৃষ্টিকে প্রথম চোখে পড়ে সিদপুর গ্রামের এক বাসিন্দার। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। তার আগে শিশুটির যাতে ঠাণ্ডা না লেগে যায়, সেই জন্য উঠে পড়ে লাগেন সবাই। পুলিশ এসে সদ্যোজাতকে নিয়ে যায় স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

খবর যায় জেলা চাইল্ড লাইনের কাছে। শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয় পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। পুরুলিয়া চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকারের অভিযোগ, শিশুটিকে ভর্তি নেওয়া সময় তাঁদের সঙ্গে এক প্রস্থ অসহযোগিতা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বলা হয়, শিশুর দেখভালের জন্য রাতভর হাসপাতালে থাকতে হবে চাইল্ড লাইনের কোনও কর্মীকে। তবে হাসপাতালের সহকারি সুপার শান্তনু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, অন্তর্বিভাগে যত শয্যা রয়েছে, তার প্রায় দ্বিগুন রোগী ভর্তি রয়েছেন। ফলে শিশুর দেখভালে পাছে কোনও খামতি হয়, সে জন্যই এমন বলা। শেষ পর্যন্ত চাইল্ড লাইনের কর্মী কবিতা বাউরি হাসপাতালে থেকে যান।

হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, শিশুকন্যাটির বয়স দিন দুয়েক। অনেক ক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজায় তার কিছু সংক্রমণ হয়েছে। সে জন্য সোমবার তাকে অসুস্থ নবজাতকদের পরিচর্যা কেন্দ্রে (এসএনসিইউ) নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছে। যে পুলিশ কর্মীরা গ্রাম থেকে উদ্ধার করে বৃষ্টিকে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলেন তাঁদেরও মায়া পড়ে গিয়েছে শিশুটির উপরে। নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন, কেমন আছে একরত্তি মেয়েটি। এমনই এক পুলিশ কর্মী বলেন, ‘‘কী ফুটফুটে মেয়েটা। প্রকৃতিই ওকে আগলে রেখেছিল। ও ঠিক এক দিন অনেক বড় হবে।’’

তার আগে, গাল ভরে খিলখিল করে কবে হেসে ওঠে বৃষ্টি, তা দেখার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে রয়েছেন এক দিনের মধ্যে তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়া অনেকগুলি মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

newborn girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE