E-Paper

বিচার চেয়ে সাত স্কুলের প্রাক্তনী পথে, রুদ্ধ সদর

তবে শুধু প্রাক্তনীরা নন, যোগ দিয়েছিলেন সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই। সেখান থেকে সম্মিলীত প্রতিবাদের স্বর উঠে। পরে প্রত্যেক স্কুলের পক্ষ থেকে এক জন করে প্রাক্তনী ওই ঘটনা নিয়ে বক্তব্য পেশ করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৪ ০৯:১৮
সিউড়ির বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শহরের সাতটি স্কুলের প্রাক্তনীদের বিক্ষোভ মিছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।

সিউড়ির বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শহরের সাতটি স্কুলের প্রাক্তনীদের বিক্ষোভ মিছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সিউড়ি শহরের সাতটি স্কুলের প্রাক্তনীদের মিছিলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ল শহরের একাংশ। স্কুল পড়ুয়াদের পথে নেমে প্রতিবাদের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ‘বিধিনিষেধ’ আরোপিত হয়েছে। কিন্তু স্কুলের প্রাক্তনীদের সে বালাই নেই। তাই বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একযোগে পথে নামলেন সাতটি স্কুলের প্রাক্তনীরা। হাসপাতালের ভিতরে কর্তব্যরত অবস্থায় তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় দোষীদের কঠোরতম শাস্তির দাবি উঠল সে মিছিল থেকে। এই ঘটনা নিয়ে আমজনতার স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভে যে ছেদ পড়েনি, এ দিন সন্ধ্যায় মিছিলে অবরুদ্ধ জেলা সদর তা প্রত্যক্ষ করল।

এ দিন সন্ধ্যার সাড়ে ছ’টা নাগাদ শহরের বীরভূম জেলা স্কুল, শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠ, আরটি গার্লস, পি অ্যাণ্ড চন্দ্রগতি মুস্তাফি মেমোরিয়াল, কালীগতি স্মৃতি নারী শিক্ষা নিকেতন, মিউনিসিপ্যালেটি গার্লস, বেণীমাধব ইনস্টিটিউশন— সাতটি স্কুলের গেট থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। প্রতিটি মিছিলেই চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি ছিল। মিছিলের সামনে স্কুলের ব্যানার তো ছিলই, ছিল নারকীয় ওই ঘটনার প্রতিবাদ ও সুবিচার চেয়ে প্ল্যাকার্ড, পোস্টার। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’-এর মতো পরিচিত পোস্টারের পাশাপাশি নারীদের প্রতি অসম্মান ও হিংসার বিরুদ্ধে নানা কথা প্ল্যাকার্ড ও পোস্টারে লেখা ছিল। প্রতিবাদ ছিল স্লোগানে, গানে।

সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা থেকে একে একে বিভিন্ন স্কুলের প্রাক্তনীদের মিছিল শহরের প্রধান বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ঢুকতে শুরু করে। বাস স্ট্যান্ডের সামনের চত্বর কার্যত শহরের স্কুলগুলির প্রাক্তনীদের দখলে চলে যায়। সূত্রের খবর, দু’হাজারেরও বেশি প্রাক্তনীর জমায়েত হয়। অনেকটা ১৪ অগস্ট রাত দখলের অভিযানের মতো চেহারা নেয় এলাকা। ফলে, কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে যায় সিউড়ির শহরের দু’টি প্রধান রাস্তা— বোলপুর থেকে সিউড়ি ও দুবরাজপুর থেকে সিউড়ি আসা-যাওয়ার পথ। গাড়িগুলি বেশ খানিকটা ঘুরপথে যেতে হয়।

তবে শুধু প্রাক্তনীরা নন, যোগ দিয়েছিলেন সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই। সেখান থেকে সম্মিলীত প্রতিবাদের স্বর উঠে। পরে প্রত্যেক স্কুলের পক্ষ থেকে এক জন করে প্রাক্তনী ওই ঘটনা নিয়ে বক্তব্য পেশ করেন। রাত আটটা পর্যন্ত বক্তব্য চলে। আয়োজকদের তরফে কোন স্কুলের প্রাক্তনীরা মিছিল নিয়ে কোন পথে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছবে সে ব্যাপারে সিউড়ির থানার অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক প্রচার হয়েছিল সমাজমাধ্যমে। মিছিলের ভিড়ে তারই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করছেন আয়োজকেরা।

জেলা সদরে মেয়েদের রাত দখল-সহ নানা কর্মসূচির বাইরে, আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে প্রথম মিছিল করেন শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠ স্কুলের প্রাক্তনীরা। তার দিন দুই পরে জেলা স্কুলের প্রাক্তনীরা একই ভাবে প্রতিবাদ মিছিল করেন । সেটাই উদ্বুদ্ধ করেছে শহরের অন্য স্কুলের প্রাক্তনীদের। সকলেই চান একই ভাবে পথে নামতে। প্রথমে আলাদা আলাদা ভাবে নৃশংস ওই ঘটনার বিরুদ্ধে ন্যায় চেয়ে রাস্তায় নামার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের পরে সেই সিদ্ধান্ত বদলে ঠিক হয়, প্রত্যেক স্কুলের গেট থেকে মিছিল করে সিউড়ি বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছনো হবে। সেখানেই নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদ ও সুবিচারের দাবিতে একসঙ্গে আওয়াজ তোলা হবে।

বিদ্যাপীঠের প্রাক্তনী রুদ্রদেব বর্মণ, জেলা স্কুলের প্রাক্তনী অন্নদাশঙ্কর মণ্ডল জানান, শহরের স্কুলের প্রাক্তনীরা একত্রিত ভাবে প্রতিবাদে শামিল হতে চান, এই খবর পাওয়ার পরে, প্রতিটি স্কুলের বাছাই করা দু’জন করে প্রতিনিধি একত্রিত হন। সেখানেই সমস্ত পরিকল্পনা তৈরি হয়। যেমনটা ভাবা হয়েছিল, তেমনটাই হয়েছে। প্রায় একই কথা বলেন কালীগতি স্কুলের প্রাক্তনী কুট্রী দাস। তিনি বলেন, ‘‘সকলে মিলিত ভাবে করলে জমায়েত ও প্রতিবাদ জোরাল হবে। সে জন্যই এক সঙ্গে পথে নামা।’’

অন্য দিকে আরটি গার্লসের প্রাক্তনী ডালিয়া চৌধুরীর দাবি, ‘‘সিউড়ি শহরে রাত দখলের অন্যতম অ্যাডমিন আমিই ছিলাম। সরকারের তরফে নির্দেশিকা জারি হয়েছে যে, স্কুলের সময়ে পড়ুয়ারা কোনও মিছিলে যোগ দিতে পারবে না। তখনই আমাদের বন্ধুদের মধ্যে আলোচনা হয়, কেন এমন বিধিনিষেধ আরোপিত হবে। ভাবনায় ছিল প্রাক্তনীদের তরফে স্কুল ভিত্তিক একটি মিছিল বের করতে হবে। সে দিনই বিদ্যাপীঠের প্রাক্তনীরা মিছিল করেন। তার পরেই তাতে জুড়ে যান অন্য স্কুলের প্রাক্তনীরাও।’’

এ দিন, বিকেলে সাঁইথিয়ার কুনুরী গ্রামের পক্ষ থেকে আর জি করের প্রতিবাদে একটি মিছিলের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় স্কুলের ছাত্রীরা ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি পথনাটক পরিবেশন করে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

R G Kar Medical College And Hospital Incident Protest siuri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy