Advertisement
E-Paper

ঝুলে কমিটি, শিশুর ভবিষ্যতও

ঝালদা থানা এলাকার এক গ্রামে এক বধূর অপমৃত্যুর পরে পুলিশ তার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করে। পরিবারের তিন সদস্যই জেলে যাওয়ায় খুদে দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে আতান্তরে পড়ে পুলিশ। শেষমেষ দুই শিশুকে আদালতে হাজির করানো হলে বাবা, ঠাকুর্দা-ঠাকুমার সঙ্গে মেয়ে দু’টিরও ঠিকানা হয় জেল!

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০২:৪১

চিত্র ১: ঝালদা থানা এলাকার এক গ্রামে এক বধূর অপমৃত্যুর পরে পুলিশ তার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করে। পরিবারের তিন সদস্যই জেলে যাওয়ায় খুদে দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে আতান্তরে পড়ে পুলিশ। শেষমেষ দুই শিশুকে আদালতে হাজির করানো হলে বাবা, ঠাকুর্দা-ঠাকুমার সঙ্গে মেয়ে দু’টিরও ঠিকানা হয় জেল!

চিত্র ২: পুরুলিয়া স্টেশনে ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছিল এক কিশোর। রেল পুলিশ কথা বলে জানতে পারে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ার বেইরিয়া থানা এলাকায় তার বাড়ি। বাবার সঙ্গে কলকাতা যাওয়ার পথে কোনও একটি স্টেশনে জল নিতে নামলে ট্রেন ছেড়ে যায়। তারপর ঘুরতে ঘুরতে পুরুলিয়ায়। তাকে উদ্ধার করে রেল পুলিশ জেলা চাইল্ড লাইনে খবর পাঠায়। কিন্তু এই কিশোর কার নির্দেশে, কোথায় থাকবে তা ঠিক করতেই ঘাম ছোটে রেল পুলিশের।

প্রশাসনিক কর্তাদের মত, এমন হেনস্থার মূলে রয়েছে পুরুলিয়ায় ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’ কার্যকর অবস্থায় না থাকা। অসহায় শিশুদের কোথায় রাখা হবে তার জবাব নেই কারও কাছেই। সূত্রের খবর, এই জটিলতার কারণ উচ্চ আদালতের একটি মামলা। জেলায় আগে যে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি কাজ করছিল তার মেয়াদ শেষ হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। অক্টোবরে নতুন কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। নতুন কমিটি কাজও শুরু করে। কিন্তু নভেম্বরেই আগের কমিটির দুই সদস্য হাইকোর্টে মামলা করেন।

কেন?

মামলাকারীদের এক জন আগের কমিটির চেয়ারপার্সন অমিতা মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট-এ বলা রয়েছে অন্য কোথাও পূর্ণ সময় কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি এই কমিটির সদস্য হতে পারবেন না। কিন্তু নতুন কমিটিতে যাঁকে চেয়ারম্যান করা হয়েছিল তিনি স্বাস্থ্য দফতরের পূর্ণ সময়ের কর্মী। রঘুনাথপুর ২ ব্লকে কর্মরত। কমিটির আর এক সদস্য সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পের কর্মী।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এমন লোকজন কী ভাবে এই কমিটিতে থাকতে পারেন?’’

এখন উপায়? অমিতাদেবীর প্রস্তাব, ‘‘পুরনো কমিটির মেয়াদ প্রয়োজনে আরও একবার বাড়ানো যেতে পারে। আইনে তার সংস্থানও রয়েছেও।’’

নতুন কমিটিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় অচিন্ত্য মাহাতোকে। অমিতাদেবীর তোলা প্রশ্ন প্রসঙ্গে তাঁর জবাব, ‘‘কমিটিতে তো আরও চার জন সদস্য রয়েছেন। তাঁরা তো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তা ছাড়া আমি সমস্ত বৈঠকে অনুপস্থিত থাকব তা তো নয়। তেমন প্রয়োজনে আমি তো মোবাইলে পরামর্শ দিতেই পারি।’’ তবে এঁদের সকলেই মানছেন হাইকোর্টে মামলার প্রেক্ষিতে স্থগিতাদেশে দেওয়ার পরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। অসুবিধে হচ্ছে কাজে।

ঘটনা হল, কোনও শিশুকে উদ্ধারের পরে সে কোথায় থাকবে তার সিদ্ধান্ত নেয় এই কমিটি। কোনও ভাবে ওই শিশুর বাড়ির লোককে খুঁজে পাওয়া গেলে বা তাকে দেখভালের জন্য কোনও নিকটাত্মীয়ের খোঁজ পেলে এই কমিটির নির্দেশেই শিশুকে তার কাছে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এখন অবস্থা এমন হয়েছে কর্তাদের কেউ সে দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। মহকুমাশাসক বা আদালত থেকেও কোনও নির্দেশ আসছে না বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

এমন পরিস্থিতির কথা মেনে নিচ্ছেন জেলা চাইল্ড লাইনের চেয়ারপার্সন ঝর্ণা মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘কমিটি কার্যকর না থাকায় কী অসুবিধে যে হচ্ছে তা আমরাই বুঝছি।’’ তিনি জানাচ্ছেন, বাঁকুড়ার সিমলাপালের একটি হোম থেকে পুরুলিয়ার কিছু বাচ্চাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তাদের বাড়ি ফিরিয়ে দিতে জেলাশাসক মারফত বাঁকুড়ার দ্বারস্থ হতে হয়েছিল।

দুর্ভোগের কথা মানছেন পুরুলিয়া রেল পুলিশের সদ্য বিদায়ী ওসি সুভাষ জানা। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের ওই কিশোরকে উদ্ধার করে কোথায় রাখব, তা নিয়ে নাকানিচোবানি খেতে হয়েছিল।’’ জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার জানান, শেষমেশ বাঁকুড়া চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির দ্বারস্থ হতে হয় রেল পুলিশকে। সমস্যার পড়েছে পুলিশও। আগের ও বর্তমান দুই কমিটিরই সদস্য হিসেবে রয়েছেন শ্রীকান্ত গরাঁই। তাঁর আশঙ্কা, ‘‘দ্রুত সমাধান হলে ভাল। না হলে সমস্যা আরও বাড়বে।’’ একই মত জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিক সুব্রত ঘোষের।

প্রাক্তন চেয়ারপার্সন অমিতা মিশ্র নিজেও অসুবিধের কথা মানছেন। যোগ করছেন, ‘‘তা বলে বিধি বহির্ভূত কাজ তো মেনে নেওয়া যায় না। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’’ আদালতে সমস্যার কথা তুলতে গোটা বিষয়টি সবিস্তার ল-অফিসারকে জানিয়েছেন জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিক।

চলতি জটের মাঝে ভেসে উঠছে সেই সব অসহায় মুখ। যাদের কেউ পথ ভুলে, কেউবা পরিজনদের কোনও অপরাধে বিপাকে পড়েছে। কোথায় তাদের থাকার সংস্থান হবে, কে সেই সিদ্ধান্ত নেবে— জানা নেই তাদের। যাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন অন্ধকারে হাতড়াচ্ছেন তাঁরাও।

children accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy